ঢাকা ০৫:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফরিদগঞ্জে হাসপাতালের আড়ালে চলছে অনৈতিক কাজ শেখ হাসিনা ও রেহানাসহ ১৬৫ জনের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় হত্যা মামলা ভারতে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে ভোলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ আল-আরাফাহ ঘিরে নতুন পাঁয়তারা রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র তিতু গ্রেফতার আঙুল ফুলে কলাগাছ গোয়াইনঘাটের বুঙ্গড়ী আজিজুল-মাসুক! দুদক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের অবৈধ সম্পদের পাহাড়  আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ঘনিষ্ঠ দু’জনকে অতিরিক্ত এমডি পদে নিয়োগের আয়োজন ১১৭০ টাকার নামজারির খরচ, ভূমি কর্মকর্তা নেন ৮-১৫ হাজার! পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার হাসানুজ্জামানের দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ।

সিটি টোলের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিতে স্থায়ী যানজট

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পুলিশের নাকের ডগায় সিটি টোলের নামে ডেমরা-রামপুরা সড়কের স্টাফ কোয়ার্টার রাসেল পাম্পসংলগ্ন এলাকায় ওপেন চাঁদাবাজির কারণে প্রতিরাতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী অন্তত ৬০ রুটের যাত্রী ও যানবাহন চালকের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর প্রবেশদ্বার ডেমরা-রামপুরা সড়কে নিত্য যানজটে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাক, লরিসহ ভারী যানবাহনের চালকেরা নাকাল হয়ে পড়েছেন। এখানকার নির্মাণাধীন ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ৬ লেন সড়ক দিয়েও রাতের বেলায় অতিরিক্ত পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক, লরি ও বিভিন্ন ভারী যানবাহনের চলাচল বাড়ছে। আর এ নিয়ন্ত্রণহীন যানজট ট্রাফিক বিভাগ সামাল দিতে বিড়ম্বনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। আর অপ্রশস্ত ডেমরা-রামপুরা সড়কে বড় কোনো যানবাহন বিকল হলেই মুহূর্তে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাতের বেলায় ডেমরা, রামপুরা সড়কে ৬ চাকার ট্রাকের পণ্য পরিবহণের সর্বোচ্চ ওজন সীমা ১৫ টন থাকলেও এসব সড়ক দিয়ে ৩৫ থেকে ৪৫ টন মালামাল অবাধে পরিবহণ করা হচ্ছে। এছাড়া ১০ চাকার ২২ টন ওজন সীমার ট্রাকে আনা হয় ৫০ থেকে ৬০ টন পর্যন্ত মালামাল। মাঝে মধ্যেই ৩০ চাকার এক ধরনের যানবাহনে পরিবহণ করা হয় ১২০ টন ওজনেরও বেশি বিভিন্ন যন্ত্র। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ট্রাকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বোঝাই করা হয় বৈদ্যুতিক খুঁটি, রডের এঙ্গেল, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ভারী মালামাল পরিবহণ করা হয় সড়কটি দিয়ে।

এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টার্মিনাল বাদে সড়কে সব ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তা সত্ত্বেও ডেমরা, রামপুরা সড়কে সিটি টোল হিসাবে ছোট পিকআপ থেকে ৩০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস থেকে ৬০ টাকা, বড় গাড়ি থেকে ৬০ টাকা যা নিষিদ্ধ, সিএনজি থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। রাতে ও দিনে বড় পণ্যবাহী ট্যাংক-লরি ও যানবাহন থেকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে যা একেবারেই নিষিদ্ধ।

এদিকে সিটি টোল থেকে থানা পুলিশকে দিনের বেলায় ৫০০ টাকা, রাতের বেলায় ৮০০ টাকাসহ অন্যান্য খরচ হিসাবে ২০০/৪০০ টাকা দিতেই হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সিএনজি স্ট্যান্ড থেকেও ২০০ টাকা করে দিতে হয় পুলিশকে। তাছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা যাত্রীবাহী বাস থেকে দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছে পুলিশকে ম্যানেজ করে। সিএনজি থেকে ডেমরা টু চনপাড়া ৫০-৬০ টাকা ও নন্দীপাড়া টু স্টাফ কোয়ার্টার ৫০-৬০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহল বলছে, এভাবে পুলিশের নাকের ডগায় অপরাধ বাড়তে থাকলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে দ্রুত।

ডেমরা-রামপুরা সড়কে প্রতিবন্ধকতা ও রাতের যানজটের বিষয়ে বড় কাভার্ডভ্যান চালক (ঢাকা মেট্রো ঢ- ৮১২৭৬৭) মোজাম্মেল করিম বলেন, রাতের গভীরতায় শুরু হয় সিটি টোল আদায়কারীদের যন্ত্রণা। তখন চাঁদা না দিয়ে ডেমরা, রামপুরা সড়কে প্রবেশ করা যায় না। তারপর সরু রাস্তায় অনেক গাড়ি চলাচল করে বলে সড়কে রাতের বেলায় যানজট লেগেই থাকে।

ঢাকা সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক মোবাইল ফোনে বলেন, অতিরিক্ত ১৮০০ টাকা খরচ এড়াতে ভারী যানবাহন চালকেরা কৌশল করে ডেমরা-রামপুরা সড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহণ করে যা বাইপাস দিয়ে চলাচল করার কথা। তবে এ সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত হওয়ার জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যা প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হবে।

ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সিটি টোলের নামে নামে চাঁদাবাজির বিষয়টিকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে সমন্বয়ভিত্তিক দেখতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ মতে সড়কে বা মহাসড়কে কোনো প্রকার চাঁদা আদায়ের বিধান নেই। তাই সড়কে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আর ডেমরা, রামপুরা সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের তুলনায় সড়কটি অপ্রশস্ত ও অপ্রতুল বলে যানজটের সৃষ্টি হয়। যথাসময়ে সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হলে যানজট কমে যাবে।

ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জিয়াউল আহসান তালুকদার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা, রামপুরা সড়কে সিটি টোলের বিষয়টি বন্ধ করা হবে। সড়কে যানবাহন ও মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলে যারা বাধাগ্রস্ত করে তাদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সড়কে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদগঞ্জে হাসপাতালের আড়ালে চলছে অনৈতিক কাজ

সিটি টোলের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিতে স্থায়ী যানজট

আপডেট সময় ১২:৩৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পুলিশের নাকের ডগায় সিটি টোলের নামে ডেমরা-রামপুরা সড়কের স্টাফ কোয়ার্টার রাসেল পাম্পসংলগ্ন এলাকায় ওপেন চাঁদাবাজির কারণে প্রতিরাতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী অন্তত ৬০ রুটের যাত্রী ও যানবাহন চালকের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর প্রবেশদ্বার ডেমরা-রামপুরা সড়কে নিত্য যানজটে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাক, লরিসহ ভারী যানবাহনের চালকেরা নাকাল হয়ে পড়েছেন। এখানকার নির্মাণাধীন ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ৬ লেন সড়ক দিয়েও রাতের বেলায় অতিরিক্ত পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক, লরি ও বিভিন্ন ভারী যানবাহনের চলাচল বাড়ছে। আর এ নিয়ন্ত্রণহীন যানজট ট্রাফিক বিভাগ সামাল দিতে বিড়ম্বনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। আর অপ্রশস্ত ডেমরা-রামপুরা সড়কে বড় কোনো যানবাহন বিকল হলেই মুহূর্তে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাতের বেলায় ডেমরা, রামপুরা সড়কে ৬ চাকার ট্রাকের পণ্য পরিবহণের সর্বোচ্চ ওজন সীমা ১৫ টন থাকলেও এসব সড়ক দিয়ে ৩৫ থেকে ৪৫ টন মালামাল অবাধে পরিবহণ করা হচ্ছে। এছাড়া ১০ চাকার ২২ টন ওজন সীমার ট্রাকে আনা হয় ৫০ থেকে ৬০ টন পর্যন্ত মালামাল। মাঝে মধ্যেই ৩০ চাকার এক ধরনের যানবাহনে পরিবহণ করা হয় ১২০ টন ওজনেরও বেশি বিভিন্ন যন্ত্র। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ট্রাকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বোঝাই করা হয় বৈদ্যুতিক খুঁটি, রডের এঙ্গেল, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ভারী মালামাল পরিবহণ করা হয় সড়কটি দিয়ে।

এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টার্মিনাল বাদে সড়কে সব ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তা সত্ত্বেও ডেমরা, রামপুরা সড়কে সিটি টোল হিসাবে ছোট পিকআপ থেকে ৩০ টাকা, যাত্রীবাহী বাস থেকে ৬০ টাকা, বড় গাড়ি থেকে ৬০ টাকা যা নিষিদ্ধ, সিএনজি থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। রাতে ও দিনে বড় পণ্যবাহী ট্যাংক-লরি ও যানবাহন থেকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে যা একেবারেই নিষিদ্ধ।

এদিকে সিটি টোল থেকে থানা পুলিশকে দিনের বেলায় ৫০০ টাকা, রাতের বেলায় ৮০০ টাকাসহ অন্যান্য খরচ হিসাবে ২০০/৪০০ টাকা দিতেই হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সিএনজি স্ট্যান্ড থেকেও ২০০ টাকা করে দিতে হয় পুলিশকে। তাছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা যাত্রীবাহী বাস থেকে দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছে পুলিশকে ম্যানেজ করে। সিএনজি থেকে ডেমরা টু চনপাড়া ৫০-৬০ টাকা ও নন্দীপাড়া টু স্টাফ কোয়ার্টার ৫০-৬০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহল বলছে, এভাবে পুলিশের নাকের ডগায় অপরাধ বাড়তে থাকলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে দ্রুত।

ডেমরা-রামপুরা সড়কে প্রতিবন্ধকতা ও রাতের যানজটের বিষয়ে বড় কাভার্ডভ্যান চালক (ঢাকা মেট্রো ঢ- ৮১২৭৬৭) মোজাম্মেল করিম বলেন, রাতের গভীরতায় শুরু হয় সিটি টোল আদায়কারীদের যন্ত্রণা। তখন চাঁদা না দিয়ে ডেমরা, রামপুরা সড়কে প্রবেশ করা যায় না। তারপর সরু রাস্তায় অনেক গাড়ি চলাচল করে বলে সড়কে রাতের বেলায় যানজট লেগেই থাকে।

ঢাকা সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক মোবাইল ফোনে বলেন, অতিরিক্ত ১৮০০ টাকা খরচ এড়াতে ভারী যানবাহন চালকেরা কৌশল করে ডেমরা-রামপুরা সড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহণ করে যা বাইপাস দিয়ে চলাচল করার কথা। তবে এ সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত হওয়ার জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যা প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হবে।

ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সিটি টোলের নামে নামে চাঁদাবাজির বিষয়টিকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে সমন্বয়ভিত্তিক দেখতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ মতে সড়কে বা মহাসড়কে কোনো প্রকার চাঁদা আদায়ের বিধান নেই। তাই সড়কে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আর ডেমরা, রামপুরা সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের তুলনায় সড়কটি অপ্রশস্ত ও অপ্রতুল বলে যানজটের সৃষ্টি হয়। যথাসময়ে সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হলে যানজট কমে যাবে।

ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জিয়াউল আহসান তালুকদার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা, রামপুরা সড়কে সিটি টোলের বিষয়টি বন্ধ করা হবে। সড়কে যানবাহন ও মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলে যারা বাধাগ্রস্ত করে তাদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সড়কে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না।