ঢাকা ০৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাকার জন্যই পরকীয়া প্রেমিকের হাতে গেল মা-মেয়ের প্রাণ

নোয়াখালীতে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে টাকা নিয়ে টানাপড়েনের কারণে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুধারাম মডেল থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম।

এর আগে একই দিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংকের বার্লিংটন মোড় সংলগ্ন কচি মিয়ার বাসার দ্বিতীয় তলায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

জানা গেছে, গ্রেফতার আলতাফ হোসেনের বাড়ি (২৮) লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নে। তিনি ওমান প্রবাসী ছিলেন।

নিহতরা হলেন- ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগম (৪০) ও তার মেয়ে হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, প্রবাসে থাকা অবস্থায় রঙ নম্বরের সূত্র ধরে নূর নাহার বেগমের সাথে পরিচয় হয় আলতাফের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এরপর নূর নাহার বেগম আলতাফকে দেশে এসে ব্যবসা শুরু করতে বলেন এবং ব্যবসার সম্পূর্ণ মূলধন ও সব দেনা বহন করার আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসে এক সপ্তাহ আগে আলতাফ ওমান থেকে ভিসা বাতিল করে দেশে চলে আসেন।

দেশে আসার পর তিনি ৪-৫ বার নূর নাহার বেগমের বাসায় গিয়ে টাকা চাইলে তিনি তালবাহানা করতে থাকেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি আলতাফকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন।

এতে আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে নূর নাহারকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। এ সময় মেয়ে প্রিয়ন্তী মায়ের চিৎকার এগিয়ে আসলে আলতাফ তাকেও ছুরিকাঘাত করেন।

আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সাথে সাথে প্রিয়ন্তী খাবার ঘরের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন।

এরপর আলতাফ হোসেন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নুর নাহার বেগম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয় লোকজন প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তারও মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, আসামি আলতাফ হোসেনকে থানা হেফাজতে নিয়ে পুলিশ বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরির ঢাকনা তার দেয়া তথ্যমতে তার মেস থেকে জব্দ করা হয়।

নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

টাকার জন্যই পরকীয়া প্রেমিকের হাতে গেল মা-মেয়ের প্রাণ

আপডেট সময় ১২:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩

নোয়াখালীতে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে টাকা নিয়ে টানাপড়েনের কারণে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুধারাম মডেল থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম।

এর আগে একই দিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংকের বার্লিংটন মোড় সংলগ্ন কচি মিয়ার বাসার দ্বিতীয় তলায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

জানা গেছে, গ্রেফতার আলতাফ হোসেনের বাড়ি (২৮) লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নে। তিনি ওমান প্রবাসী ছিলেন।

নিহতরা হলেন- ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগম (৪০) ও তার মেয়ে হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, প্রবাসে থাকা অবস্থায় রঙ নম্বরের সূত্র ধরে নূর নাহার বেগমের সাথে পরিচয় হয় আলতাফের। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এরপর নূর নাহার বেগম আলতাফকে দেশে এসে ব্যবসা শুরু করতে বলেন এবং ব্যবসার সম্পূর্ণ মূলধন ও সব দেনা বহন করার আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসে এক সপ্তাহ আগে আলতাফ ওমান থেকে ভিসা বাতিল করে দেশে চলে আসেন।

দেশে আসার পর তিনি ৪-৫ বার নূর নাহার বেগমের বাসায় গিয়ে টাকা চাইলে তিনি তালবাহানা করতে থাকেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি আলতাফকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন।

এতে আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে নূর নাহারকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। এ সময় মেয়ে প্রিয়ন্তী মায়ের চিৎকার এগিয়ে আসলে আলতাফ তাকেও ছুরিকাঘাত করেন।

আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সাথে সাথে প্রিয়ন্তী খাবার ঘরের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন।

এরপর আলতাফ হোসেন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নুর নাহার বেগম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয় লোকজন প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তারও মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, আসামি আলতাফ হোসেনকে থানা হেফাজতে নিয়ে পুলিশ বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরির ঢাকনা তার দেয়া তথ্যমতে তার মেস থেকে জব্দ করা হয়।

নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।