ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড় কেটে রাস্তা : চসিক কাউন্সিলর-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

এতে আসামি করা হয়- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ওয়ালী আহমেদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুক ও তাকিয়া বেগম, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং আকবর শাহ বেলতলীঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালীউদ্দিন আকবর। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তও করবে সংস্থাটি।

মামলার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি-হক ব্রাদার্সের সঙ্গে চসিক আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় রাস্তা নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রকল্প পরিচালনাকালে কোন পাহাড় কাটা হবে কি-না, কাটলে কি পরিমাণ কাটা হবে, পাহাড় কাটার সময় ভূমিধ্বস রোধে কোনো গাইড ওয়াল কিংবা রিটেনশন ওয়াল নির্মাণ করা হবে কি-না এ সম্পর্কে কোনো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করে অভিযুক্তরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে অপরাধ করেছেন।

এদিকে, পাহাড় কেটে রাস্তা করার কারণে ৭ এপ্রিল পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে খোকা (৪৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়। একই ঘটনায় আরও তিন শ্রমিক আহত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসক। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ওই দিন (শুক্রবার) রাতে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ঠিক ওই স্থানে ১১ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাহাড় কাটা বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। হাতেনাতে একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আমরা জানতে পেরেছি স্থানীয় কাউন্সিলর একটা সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে কাজটা করছেন। কাগজটা আমরা যাচাই করে দেখতে পারিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে আমি মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। পাহাড় কেটে যদি রাস্তা করতেই হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হবে। এগুলো না মেনে যদি পাহাড় কাটে দুর্ঘটনা তো হবেই।

যদিও চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ বেশ পুরনো। গত ২৫ জানুয়ারি উত্তর পাহাড়তলী সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিদর্শন করতে গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আকবর শাহ থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাহাড় কেটে রাস্তা : চসিক কাউন্সিলর-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট সময় ১২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩

চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।

এতে আসামি করা হয়- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন, সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ওয়ালী আহমেদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুক ও তাকিয়া বেগম, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং আকবর শাহ বেলতলীঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালীউদ্দিন আকবর। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তও করবে সংস্থাটি।

মামলার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি-হক ব্রাদার্সের সঙ্গে চসিক আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় রাস্তা নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রকল্প পরিচালনাকালে কোন পাহাড় কাটা হবে কি-না, কাটলে কি পরিমাণ কাটা হবে, পাহাড় কাটার সময় ভূমিধ্বস রোধে কোনো গাইড ওয়াল কিংবা রিটেনশন ওয়াল নির্মাণ করা হবে কি-না এ সম্পর্কে কোনো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করে অভিযুক্তরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে অপরাধ করেছেন।

এদিকে, পাহাড় কেটে রাস্তা করার কারণে ৭ এপ্রিল পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে খোকা (৪৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়। একই ঘটনায় আরও তিন শ্রমিক আহত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসক। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ওই দিন (শুক্রবার) রাতে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ঠিক ওই স্থানে ১১ ফেব্রুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাহাড় কাটা বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। হাতেনাতে একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে আমরা জানতে পেরেছি স্থানীয় কাউন্সিলর একটা সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে কাজটা করছেন। কাগজটা আমরা যাচাই করে দেখতে পারিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে আমি মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। পাহাড় কেটে যদি রাস্তা করতেই হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হবে। এগুলো না মেনে যদি পাহাড় কাটে দুর্ঘটনা তো হবেই।

যদিও চসিকের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ বেশ পুরনো। গত ২৫ জানুয়ারি উত্তর পাহাড়তলী সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিদর্শন করতে গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আকবর শাহ থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।