ঢাকা ০৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার সংঘর্ষ, নিহত ৫

নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। এতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জন আজারবাইজানের সেনা এবং অন্য তিনজন আর্মেনীয় কর্মকর্তা। রোববার (৫ মার্চ) উভয়পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের পর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।

মূলত বিতর্কিত অঞ্চল নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো শত্রুতা রয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকে উভয় দেশ। সোমবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজারবাইজানের সৈন্য এবং জাতিগত আর্মেনীয়দের মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে গুলি বিনিময় হয়েছে এবং এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের প্রধান একটি শহর থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সন্দেহে একটি কনভয়কে থামানোর পরে গুলি বিনিময়ে তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, কনভয়টি একটি অননুমোদিত রাস্তা ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছিল।

অন্যদিকে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজারবাইজানের সেনাদের গুলিতে কারাবাখের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আজারবাইজানের সেনাদের বাধাপ্রাপ্ত হওয়া কনভয়টি নথিপত্র এবং সার্ভিস পিস্তল বহন করছিল উল্লেখ করেছে তারা। একইসঙ্গে আজারবাইজানীয় অভিযোগগুলোকে ‘অযৌক্তিক’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দিয়েছে আর্মেনীয় মন্ত্রণালয়।

আর্মেনিয়ার দাবি, আজারবাইজানের এসব আচরণ ‘আগে থেকে পরিকল্পিত এবং দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় উসকানি ছড়াতে’ করা হচ্ছে।

মূলত ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজার ও আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উভয় দেশই সেসময় সোভিয়েত শাসনের অধীনে ছিল। একপর্যায়ে আর্মেনিয়ান বাহিনী নাগোরনো-কারাবাখের নিকটবর্তী অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে, যা মূলত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত।

পরে ২০২০ সালে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে সেসব অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে আজারবাইজান। সেসময় ছয় সপ্তাহের সেই যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্ততার মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর যুদ্ধের কারণে পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার বাসিন্দা সেখানে ফিরে আসেন।

উল্লেখ্য, বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছিল।

আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ভূখণ্ড ঘিরে দুই দেশের মাঝে শুরু হওয়া যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়। এরপর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে নাগোরনো-কারাবাখ এবং এর আশপাশের এলাকার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় আজারবাইজান। যা আগে আর্মেনিয়া-সমর্থিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

২০২০ সালের ওই সংঘাতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার সংঘর্ষ, নিহত ৫

আপডেট সময় ০৩:৫৩:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মার্চ ২০২৩

নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। এতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জন আজারবাইজানের সেনা এবং অন্য তিনজন আর্মেনীয় কর্মকর্তা। রোববার (৫ মার্চ) উভয়পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের পর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।

মূলত বিতর্কিত অঞ্চল নাগরনো-কারাবাখ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের পুরনো শত্রুতা রয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকে উভয় দেশ। সোমবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজারবাইজানের সৈন্য এবং জাতিগত আর্মেনীয়দের মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে গুলি বিনিময় হয়েছে এবং এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের প্রধান একটি শহর থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সন্দেহে একটি কনভয়কে থামানোর পরে গুলি বিনিময়ে তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, কনভয়টি একটি অননুমোদিত রাস্তা ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছিল।

অন্যদিকে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজারবাইজানের সেনাদের গুলিতে কারাবাখের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আজারবাইজানের সেনাদের বাধাপ্রাপ্ত হওয়া কনভয়টি নথিপত্র এবং সার্ভিস পিস্তল বহন করছিল উল্লেখ করেছে তারা। একইসঙ্গে আজারবাইজানীয় অভিযোগগুলোকে ‘অযৌক্তিক’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দিয়েছে আর্মেনীয় মন্ত্রণালয়।

আর্মেনিয়ার দাবি, আজারবাইজানের এসব আচরণ ‘আগে থেকে পরিকল্পিত এবং দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় উসকানি ছড়াতে’ করা হচ্ছে।

মূলত ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজার ও আর্মেনিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উভয় দেশই সেসময় সোভিয়েত শাসনের অধীনে ছিল। একপর্যায়ে আর্মেনিয়ান বাহিনী নাগোরনো-কারাবাখের নিকটবর্তী অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে, যা মূলত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত।

পরে ২০২০ সালে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে সেসব অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে আজারবাইজান। সেসময় ছয় সপ্তাহের সেই যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্ততার মাধ্যমে শেষ হয়। এরপর যুদ্ধের কারণে পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার বাসিন্দা সেখানে ফিরে আসেন।

উল্লেখ্য, বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছিল।

আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই ভূখণ্ড ঘিরে দুই দেশের মাঝে শুরু হওয়া যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়। এরপর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে নাগোরনো-কারাবাখ এবং এর আশপাশের এলাকার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় আজারবাইজান। যা আগে আর্মেনিয়া-সমর্থিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

২০২০ সালের ওই সংঘাতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।