বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির (বানাসাস) উদ্যোগে নেপালের দুই নারী সাংবাদিক ববিতা বাসনেত ও কল্পনা আচারিয়ার সঙ্গে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর নয়া পল্টনের মিডনাইট সান রেস্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নেপালের কর্মরত নারী সাংবাদিকদের সঙ্কট, সফলতা ও সম্ভবনার সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বাংলাদেশে সফররত ওই দুই সাংবাদিক।
ববিতা বাসনেত বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর আগে তিনি সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছেন এবং তার শুরুটা হয়েছিলো রিপোর্টিং দিয়ে। এই পেশায় টিকে থাকার জন্য তাকে নানা ধরনের সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং সফললতার সঙ্গেই তিনি সেসব সঙ্কট মোকাবেলা করেছেন । তিনি যখন পেশায় আসেন তখন দেশটিতে মাত্র ১৯ জন নারী সাংবাদিক ছিলেন, বর্তমানে এই সংখ্যা ১৩শয়ের বেশি। তিনি এক সময় রেডিও নেপালে পলিটিক্যাল রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ঘটনা রা বিচার পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পেশাজীবনে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি ববিতা। বরং নারী সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে ইউনিয়ন করছেন সক্রিয়ভাবে। তিনি দেশটির নারী সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা রকম প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি নারীর সামগ্রিক অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন এই দুই নারী সাংবাদিক। ববিতা বাসনেত বলেন, তাদের আন্দোলনের ফলেই নেপালের সংবাদ মাধ্যমে ধর্ষিতা নারীদের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা বন্ধ হয়েছে।
‘নারী সাংবাদিকদের জন্য এই সমোজে টিকে থাকা খুবই কঠিন বিশেষ করে আপনি যদি বিবাহিত হন এবং আপনার সন্তান সন্ততি থাকে। কেননা এই পেশায় নারীদের জন্য একই সঙ্গে সংসার ও কেরিয়ার এগিয়ে নিযে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে কেউ কেউ পেশা ত্যাগ করতেও বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত এই পেশায় যারা টিকে থাকেন তাদের লড়াই করেই টিকে থাকতে হয়। বিসর্জন দিতে হয় অনেক শখ ও স্বপ্ন।’ বলছিলেন হেলথ টিভি অনলাইনের প্রধান সম্পাদক কল্পনা আচারিয়া।
সাংবাদিক কল্পনা আরও বলেন, এই পেশায় টিকে থাকতে হলে আমাদের দুটি জিনিষের দিকে নজর দিকে হবে-প্রথমত লড়াই করার মানসিকতা এবং জ্ঞানার্জন। আমরা তো নিজেদের প্রমাণ করেই এই পেশায় টিকে আছি। নারীদের এই পেশায় সফল হতে হলে পেশার প্রতি মনোযোগী এবং নিয়মানুবর্তিতার দিকে নজর দিতে হবে।
বানাসাস সভাপতি নাসিমা সোমার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনছেন সফররত দুই নেপালি সাংবাদিক ববিতা ও কল্পনা (বায়ে)।
নেপালি সাংবাদিকদের বক্তব্য শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। নেপালে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)র প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা রাব্বি। পরিবারে প্রবীণ নারীদের ভূমিকা তুলে ধরে সে দেশের বয়স্ক নারীদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানতে চান চিকিৎসক ডা. ইয়াসমিন জাহান শাহিন। আরও প্রশ্ন করে বানাসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা মুন্নী, বানাসাসে’র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক লাবিল রহমান, আমাদের অর্থনীতির সিনিয়র সাংবাদিক শাহীন খন্দকার,জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সালমা আহমেদ প্রমুখ। অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে সবার প্রশ্নের উত্তর দেন ববিতা ও কল্পনা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক ববিতা জানান, নেপালে সরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা ৪টি, বেসরকারি টেলিভিশন ৩৮ এবং অনলাইনে এফএম রেডিওর সংখ্যা ২৮টি।
নেপালে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি জানান, নেপাল পার্লামেন্টে বর্তমানে নারী সদস্যের সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি। সেখানকার শতকরা ২৫ শতাংশ নারী কাজ করছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথি সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন বানাসাসের সভাপতি নাসিমা আক্তার সোমা এবং সাধারণ সম্পাদক ইসরাত ফারহিম। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
নেপালের নারী সাংবাদিকদের সঙ্গে ভিউ এক্সচেঞ্জ মিটিংয়ে সভাপতির বক্তব্যে বানাসাসের সভাপতি নাসিমা সোমা বলেন, আপনাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে নেপালের নারী সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের তেমন পার্থক্য নেই। আসলে শুধু নেপাল বা বাংলাদেশ নয়- আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি অনেকটা একই রকম হওয়ায় ভারত, পাকিস্তান তথা উপমহাদেশের নারী সাংবাদিকদের পরিস্থিতি একই রকম। ফলে পেশার উন্নয়নে নেপাল ও বাংলাদেশের নারী সংগঠনগুলো একসাথে কাজ করতে পারে। একই সঙ্গে তিনি আগামীতে বাংলাদেশ এবং নেপালের নারী সাংবাদিকদের নিয়ে নেপালে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার করারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দুই নেপালি সাংবাদিকের সঙ্গে বানাসাসের সদদ্য ও সাংবাদিকদের ফটোসেশন