জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে নবীনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষ সংকট। ওই বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণি কক্ষের মধ্যে তিনটির দেওয়াল ও ছাদের ভেতরের অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দুর্ঘটনার শঙ্কায় ভাঙনরত ওই তিন শ্রেণি কক্ষে পাঠদান বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। যে কোনো সময় দুর্ঘনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষকগণ। ফলে স্কুলটিতে ছোট পরিসরের তিনটি কক্ষে গাদাগাদি করে ছয়টি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চলছে। কক্ষ তিনটি ছোট হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভাঙা স্কুল ভবনের অপবাদ দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে অন্য স্কুলে । ক্রমেই শিক্ষার্থী শূন্য হচ্ছে বিদ্যালয়টি।
জানা যায়, সানন্দবাড়ী নবীনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৮ সালে। ১৯৯৪ সালে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ছাদঢালাই পাকা ভবন নির্মিত হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ২০০৫ সালে চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা আরেকটি ছাদ ঢালাই পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়।
পূর্বের নির্মিত ভবনটি বর্তমানে জরাজীর্ণ। পাকা ছাদের ভেতরের অংশে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবনের দেওয়ালের চিত্রও একই। বর্তমানে ভবনটি পাঠদানের অনুপযোগী। সানন্দবাড়ী নবীনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রথম শ্রেণিতে ৪২জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪০জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩০জন, পঞ্চম শ্রেণিতে ২৮ জন ও শিশু শ্রেণিতে ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৫জন। পূর্বে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রাশ তিন শতাধিক। স্কুল ভবন ভগ্নদশার কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে অন্য স্কুলে ভর্তি করে লেখাপড়া করাচ্ছেন। ফলে ক্রমেই শিক্ষার্থী কমছে বিদ্যালয়টিতে। ভবনে ভাঙন ধরার কারণে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান অন্যদিকে শিক্ষার্থী শূন্য হচ্ছে স্কুলটি।
বিদ্যালয়টির চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাহসিন বলে, স্কুলের তিনটি শ্রেণি কক্ষের ভেতরে ক্লাশ করা যায় না। উপর থেকে পলেস্তারা ভেঙে ভেঙে মাথার উপরে পড়ে। দুর্ঘনার ভয়ে ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে চললে আমাদের পাঠদান। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হোসনা আক্তারের ভাষ্য, স্কুল ভবনে ভাঙন ধরেছে বলে সবাই আমাদের তিরস্কার করে। ভাঙা স্কুলে ছাত্রী বলে ক্ষেপায়। অনেকেই এ কারণে অন্য স্কুলে চলে গেছে।
অভিভাবক বিলকিছ বেগম বলেন, ভবন ভাঙার কারণে স্কুলটিতে সন্তান পাঠিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকতে হয়। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে এ কারণে অন্য স্কুলে ভর্তি করে পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে স্কুলটিতে দ্রæত ভবন নির্মাণের দাবি তার।
অভিভাবক আব্দুর রহিম বলেন, আশেপাশের অন্যান্য স্কুলের তুলনায় নবীনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অত্যন্ত অবহেলিত। তিন কক্ষের পাকা ভবন ভাঙাচোরা। ছোট তিন কক্ষে গাদাগাদি করেছে চলছে পাঠদান। তিনি ওই স্কুলে দ্রæত ভবন নির্মাণে দাবি জানান।
সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমানের ভাষ্য, ছয়টি শ্রেণির জন্যে নবীনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে তিনটি কক্ষ। সে কক্ষও আয়তনে ছোট। পাঠদানে প্রতি নিয়ত সমস্যার মুখে পড়হে হচ্ছে। ভাঙা পাকা ভবন অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি তার।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, ভবনের ছাদ ও দেওয়ালের ভেতরের অংশে পলেস্তা খসে পড়তে পড়তে ভেতরের লোহার রড বেরিয়ে। যাতে পাঠদান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে ছোট তিন কক্ষে গাদাগাদি করে ৬ শ্রেণির পাঠদান। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা অবগত করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা সুলতানার ভাষ্য, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিদ্যালয়িিট পরিদর্শন করে ভবন নির্মাণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান জানান, স্কুল ভবন নির্মাণের জন্যে উপজেলা শিক্ষা কমিটির চাহিদা মোতাবেক কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।