বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন! তাই বছরজুড়েই থাকে ফুলের চাহিদা। তবে একদিন পরই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আসন্ন বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চকরিয়া চাষীদের ফুল সুবাস ছড়াবে পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলজোড়ে।
১৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে উপজেলার ফুল বাগানগুলো থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল বেচাকেনা হচ্ছে। ফুল ব্যবসায়ীদের দাবি, ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে (১০ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি) ফুল বেচাকেনা কোটি ছাড়িয়েছে।
এছাড়াও বসন্ত বরণ ও মাতৃভাষা দিবসে (২১ ফেব্রুয়ারি) আরও কয়েক কোটি টাকার ফুলের বেচাকেনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার বরইতলী এলাকায় প্রায় সাড়ে দেড় হাজার কৃষক ৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন।
উপজেলার বরইতলী, পহরচাদাঁ সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠের যে প্রান্তে চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। রঙ-বেরঙের ফুলের সমারোহে এসব এলাকা এখন অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে।
চাষিরা জানান, আসন্ন তিন দিবস (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) ঘিরে ফুল কেটে বাজারে নিয়ে আসা এবং পরিচর্যায় মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ফুল চাষের সংশ্লিষ্ট মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ জুড়ে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুল সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল হাতছানি দিচ্ছে।
স্থানীয় ফুলচাষিরা বলেন, বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা অনুযায়ী চট্টগ্রামের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ফুল কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।
ফুলচাষিরা আরো বলেন, প্রতিবছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসসহ ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি বিশেষ দিনকে টার্গেট করে ফুলের বাজার ধরতে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকেই চাষিরা ফুল কেটে বাজারে নিয়ে আসছেন। এসব ফুল বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম,জেলা শহর কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি চকরিয়া পৌর শহরে চলছে দৈনিক এই ফুলের লাখ লাখ টাকার ব্যবসা।
সরেজমিনে জানা যায়, সাধারণ একদিন পরপর পালাক্রমে চাষিরা বাগান থেকে ফুল তুলেন। একশো পিস গোলাপ ছয়শো টাকা করে পাইকারি বিক্রি করে খুচরা প্রতিপিস ১০ টাকা, রজনীগন্ধার প্রতিস্টিক ৮ থেকে ১০ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতিপিস (রঙভেদে) ৫ থেকে ১২ টাকা ও গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চকরিয়া পৌর শহরের ফুল দোকানদার জামাল উদ্দিন জনু বলেন; বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও মহান ভাষা দিবসকে সামনে রেখে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ দিবসগুলোতে প্রতিবছরের মতো এবছরও অন্তত ১ কোটির অধিক ফুল বিক্রির টার্গেট রয়েছে । সে অনুযায়ী এরইমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম , রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ফুল ক্রেতারা চকরিয়ায় এসে ফুল কিনেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি চলবে পুরোদমে বেচাকেনা। এছাড়াও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চাষিরা বায়নার টাকা নিয়ে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্থানীয় ফুলচাষি প্রাণসো দাস,আমির হোসেন সহ কয়েকজনের সাথে সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় ফুল চাষ অধিক লাভজনক। বরইতলীর উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক প্রাণসো দাস বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে গোলাপ কিংবা গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করতে খরচ হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এরপর চারা গাছে একবার ফুল ধরলে তা কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ফুল দেয়। এতে বছরে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা আয় আসে। তবে মাঝে মাঝে প্রকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।