“জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, দুটি যদি জোটে, অর্ধেক তাহার ফুল কিনিও হে অনুরাগী ” সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার এ আহবান নিশ্চয় ফুলের প্রতি কবির অনুরাগ থেকে, এখন সামাজিক অনুষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুলের ব্যবহার বাড়ছে।
ফলস্বরূপ বেড়েছে ফুল চাষ ও ব্যবসা। ফুল নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে, ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত গদখালীর ফুল চাষিরা, ১লা ফাল্গুন, ১৪ ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জমে উঠেছে গদখালী ফুলের বাজার।
যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার গদখালী বিখ্যাত হয়ে উঠেছে শুধু মাত্র ফুল চাষের কারণে, এই এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে বছর জুড়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়। দেশের সর্ববৃহৎ ফুল পাইকারী বাজার হচ্ছে গদখালী। দেশের ফুল চাহিদার ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ফুলই উৎপাদন হয় গদখালীতে, প্রতিদিন খুব সকালে ফুল চাষি ও ফুল ব্যাবসায়িদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গদখালীর ফুলের বাজার, শুরু হয় বেচা-কেনা, দুর দুরান্ত থেকে ব্যাবসায়ীর আসে ফুল কিনে যায়, আবার এখান থেকে পরিবহন, ট্রাক, পিক-আপে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায় ফুল।
সামনে ৩টি দিবস তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিশ্ব ভালবাসা দিবস, অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়, তার মধ্যে গোলাপের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে টাওরা গ্রামে গোলাপ ফুল চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গোলাপ ফুল চাষি মোহর
আলী জানান এ বছর অনেক ভালো দাম পেয়েছি। সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত, প্রতি পিস গ্লাডিওলাস বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত, প্রতি পিস রজনী ও ভুট্টা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৪ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রজনী ও ভুট্টা ফুলের দাম আরও বাড়তে পারে, পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে চন্দ্র মল্লিকা ২ থেকে ৫ টাকা, জিপসী, রড স্টিক, গাধা ফুলের ও দাম ভালো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে আশা করছি।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসন পলাশ জানান আমরা আরও নতুন দুইটা ফুলের জাত আমদানি করেছি লিলিয়ান ও টিউলিপ, তিনি বলেন আশা করছি এবার ১০০ কোটি টাকার উপর ফুল বিক্রি হবে। আর বার্ষিক প্রায় আটশো কোটি থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে।
১৯৮২ সালে শের আলী সরদারের হাত ধরে সর্বপ্রথম ফুলের চাষ শুরু হয়। ঝিকরগাছা উপজেলার এ অঞ্চলে প্রয় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়, ৬ হাজার চাষি, পাশাপাশি ৫০ হাজার মানুষ সরাসরি ফুল চাষের সাথে জড়িত। প্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ফুল রপ্তানি শুরু হয়েছে।
]যদি আরও কিছু দেশে ফুল রপ্তানি করা সম্ভব হয় তাহলে এ খাত থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি গদখালী যেনো হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু, প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখিরত হয়ে ওঠে ফুলের রাজধানী গদখালীর পানিসারা, অনেক দূর-দূরান্ত থেকে প্রতি দিনই এখানে আসে হাজার হাজার বনভোজনের গাড়ি, দেখলে মনে হবে আপনি ভুল করে হয়তো অন্য কোথাও চলে এসেছেন, পানিসারায় আপনি পাচ্ছেন দুপুরের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, আছে পিকনিক স্পট, আছে বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা, আছে পার্ক, সাথে পাবেন নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, আর বাহারি সব মন মাতানো ফুলের সুগন্ধের সমারোহ তো থাকছেই, আছে নিরাপদে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা, আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি। গদখালী ফুলের রাজ্য সবাইকে স্বাগতম।