শাসনরীতির সড়কে গণতন্ত্র যদি হয় ফরম্যাট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে কোন দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অনুশীল্পন আছে ? রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কথা বাদই দিলাম। নিজ দলের মধ্যে কারা গণতন্ত্রের অনুশীলন করতে পারছে—— এমন প্রশ্ন রেখেই তাহলে এগোন যাক।
আওয়ামী লীগ এর সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন ভাল। এই তো সেদিন তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে বললেন, আপনাদের নিজ দলের মধ্যেই গণতন্ত্র নেই, অথচ বড় কথা বলেন ! কাদের ভাই মিথ্যে বলেন নি।
গেল বছরের শেষ দিকে ২২-তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমেও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র অনুশীলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছে। নেতৃত্বের প্রায় সকল গুনে গুণান্বিত শেখ হাসিনায় আস্থা রেখেই সারাদেশের নেতাকর্মীরা চেয়েছেন যে, দল চলবে শেখ হাসিনার পরিচালনায়।
অন্যদিকে আমাদের কথিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির কী অবস্থা ! ২০১৬ সালে তারা একটি কাউন্সিল করেছিল। এরপরে ৭/৮ বছর হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের দল পুনর্গঠন আর হয় না। তাঁদের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা দু’জনাই দন্ডিত আসামীও। অথচ, তাঁদেরকে রেখেই দল পরিচালনা করার নামে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা চলছে। তাঁদের পক্ষ থেকে হালে চলছে এক ধরণের সুস্থ মহড়া, তবে তা যেকোন সময় রঙ বদলিয়ে তাঁদের মজ্জাগত চরিত্রের সেই নাশকতার রাজনীতি ধরা দিবে, তা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি। নিজের দলের মধ্যে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটা নেই, কিন্তু দিনভর নীতিকথার চাদরে পরিবেষ্টিত থাকার মধ্য দিয়ে ভাল বনবার এমন চেষ্টাকে হিপোক্রেসি বলে।
বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেও গণতন্ত্র চর্চার কোন তথ্য ধরা দেবে না। অথচ, সামনে মাইক পেলে সরকার দলের সমালোচনায় মুখর থাকতে জুড়ি নেই। পুঁচকে ছেলেপুলেও দল করে এক লাফে সাধারণ সম্পাদক কিংবা সদস্য সচিব বনে যাচ্ছে ! তারা আবার গণতন্ত্রের ছবকও দেয় !
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী খুবই স্পষ্ট করে বলছেন যে, এই দলের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনটি সুষ্টু হতে যাচ্ছে। বিশ্বাস করি, তিনি যেহেতু বলেছেন, দেশবাসীর নির্ভার থাকার উপলক্ষ তৈরি হয়।
মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র শুধুমাত্র একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাত চেনায় না। গণতন্ত্রের নানান দিক রয়েছে। যেমন, জনসমর্থন নিয়ে টেকসই উন্নয়ন ও মানুষের জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাও গণতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পরে যে কোন দলের বারংবার করে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দেশের বিদগ্ধজনের মতামত নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও গণতন্ত্রের অনুকুলে একটি ভাল অভ্যাস। যা, আওয়ামী লীগ করতে পেরেছে বলে অনুমিত হয়।
এই বছরের শেষদিকে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের এখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করা উচিত। আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোন দল কি কি ভুমিকা রাখতে চায়, তা নিয়ে প্রচারণায় থাকুক। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের কাছে যাক। কিন্তু খুবই হতাশ হতে হয়। বিএনপি নামক দলটি কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকবল নিয়ে দেশে অশুভ পরিস্থিতির প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছে।
নিশ্চিত করে বলতে পারি, তাঁদের এহেন উদ্যোগে নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী রয়েছে, সেই সংখ্যা পনের হাজারের মত হবে। এর বাইরে জনমানুষের সাথে তাঁদের দলের কোন যোগাযোগ নেই। এই পনের হাজার মানুষ দিয়ে তারা কৃত্রিম বিপ্লব করতে চায়। এই জন্য যেখানেই তাঁদের কর্মসূচী। ওই পনের হাজার লোক আগভাগেই পৌঁছে যায়। যাদের দশ হাজারের মত প্রতিনিধি জামায়াত শিবিরের।
আমি মনে করি, এই পনের হাজার দুষ্টু সত্তার মানুষগুলোকে প্রতিরোধ করতে হবে। বিএনপি কী জানে যে, তিনশত সংসদীয় আসনে তাঁদের প্রার্থী কে, সে সম্পর্কেও নির্দিষ্ট আসনের মানুষের অজানা। এটা ব্যর্থতার রাজনীতি। আপনারা আগে নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন, গণতন্ত্র গণতন্ত্র করে ফেনা উঠিয়ে লাভ নেই, নিজেদের দলকে পুনর্গঠন করুন—অতপর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করুন।
লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশ নাকি অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সংকটে পড়ে খারাপ অবস্থায় চলে যাবে, এমন প্রচারণায় অনেকেই থাকছেন। আর সেই সুযোগে রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এসব কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত, ওবায়দুল কাদের ক্লান্ত, শেখ হাসিনা ক্লান্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিব্রত। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য ক্রেডিবল একটি বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন নিয়ে কাজ করছি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যে শপথ একজন শেখ হাসিনা নিয়েছেন এবং তিনি চালক হতে পেরেছেন, আমরা কেবল তাঁর সহযাত্রী মাত্র, এভাবেই চলছে আওয়ামী লীগ। আমরা মনেই করছি, দেশ পথ হারাবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হতে যাচ্ছে। সেই সংকল্পে আমরা দিবারাত্রি দেশের জন্য যোদ্ধা হয়ে লড়তে চাই।