কুমিল্লার দাউদকান্দি ইলিয়টগঞ্জ এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্রিজের নিচ থেকে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিক নাছির (৩০) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। তবে নিহত যুবকের স্বজনদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ বাজার এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্রিজের নিচ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ। নিহত নাছির পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের আমপাল গ্ৰামের ধনু চকিদার বাড়ির কৃষি শ্রমিক আলমের ছেলে।
নাছির এলাকায় একটি ইটভাটার ৪০-৪৫ জন শ্রমিক পরিচালনায় সরদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি গ্ৰামের বিভিন্ন খাল, খাটিপুকুর কিনে মৎস্য ব্যবসা করতেন। পুলিশ, নিহত যুবকের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সকালে ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্রিজের নিচে বুক ও মুখ মন্ডল নিচের দিকে অবস্থায় একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখি স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে নাছিরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত যুবকের স্বজনদের দাবি, শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকার একটি খাটিপুকুর থেকে মাছ ধরে ইলিয়টগঞ্জ একটি মৎস্যআরতে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসে। মাছ রেখে ঐ মৎস্য আরতের ম্যানেজারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে নতুন জুতা কিনতে যাওয়ার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিহতের বাবা আলম, তার ভাই ফারুক, স্থানীয় মনির বলেন, বিগত বছর আগে সুদে এক লক্ষ টাকা নিয়েছি ছালিয়াকান্দি গ্ৰামের বিলকিছ অরপে বিলি নামের এক মহিলার কাছ থেকে। ঐ টাকার সুদ আসলে মিলে তিন লক্ষ ৭০ হাজার টাকা হয়। এর মধ্যে এক লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলেও দুই লক্ষ টাকা বাকি থাকায় মানতে নারাজ ছিল বিলি বেগম। পরে ওই টাকা আদায় করে নিতে একদিন রাত ১০টায় আমার মেয়ে নাতি ও পুত্রবধূকে সহ অপহরণ করে বিলকিছের বাড়ি নিয়ে গিয়ে মারধর করে। পরে তাদের কে থানা পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়। পরে দুই লক্ষ টাকার বিষয়টি মীমাংসার মাধ্যমে দাবি না করার জন্য লিখিত চুক্তি হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বিলকিছ সহ তার ছেলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসতো। মাছের আরতে মাছ নিয়ে এলে সুযোগ বুঝে পরিকল্পিতভাবে নাছির কে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
এইদিকে অভিযুক্ত, বিলকিছ অরপে বিলি বেগম বলেন, আমার কাছ থেকে তারা যে টাকা নিয়েছিল ওই টাকা মাফ করে দিয়েছি।
অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলমের মেয়ে আমাকে খালা ডাকে খালা হিসেবে মেয়েটিকে আনছি। অপরহণ করে আনার কোন প্রশ্নই উঠেনা। এ অভিযোগ মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তাছাড়া থানায় ডেকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার পর থেকে টাকার বিষয়ে আর কোন কথা হয়নি তাদের সাথে। তার কিভাবে মৃত্যু ঘটেছে এ বিষয়ে কিছুই জানানেই, আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে।
এঘটনায় দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ব্রিজের নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় নাছির নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।