রাজধানীর উত্তরার একটি বদ্ধ ফ্ল্যাট থেকে মা-মেয়েসহ তিনজনকে অচেতন অবস্হায় উদ্ধার করেছে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। উদ্ধারকৃতরা হলেন- শাফানা আফিফা শ্যামী (৩৫) ও তার জমজ দুই মেয়ে আয়েশা (১০) ও ফাতেমা (১০)। তারা সকলেই ওই ফ্ল্যাটটির স্থায়ী বাসিন্দা। পরে তাদেরকে রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মেত্রী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজ রোববার ভোরে তিন ভিকটিমদেরকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩নং রোডের ২৮ নং বাড়ির ২য় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে অচেতন অবস্হায় উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, খাওয়া-দাওয়া না করায় তারা সকলেই ফ্ল্যাটের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অনাহারে থাকতে থাকতে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। ভিকটিমদের উদ্ধার করে আমরা তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
আজ রোববার ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্হানীয় সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক অভিমানকে কেন্দ্র করে শাফানা আফিফা শ্যামী নামের ওই জননী গত কয়েকদিন যাবৎ দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নিজেকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩নং রোডের ২৮ নং বাড়ির ২য় তলার একটি ফ্ল্যাটের ভেতর আবদ্ধ করে রাখে। এতে করে রান্নাবান্না ও খাওয়া-দাওয়া না করায় তারা সকলেই ফ্ল্যাটের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে বাড়ির প্রতিবেশিরা পুলিশকে খবর দিলে আজ রোববার ভোর পৌনে ৬ টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ।
এসময় উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আধা ঘন্টার চেষ্টায় ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে মুমূর্ষূ অবস্থায় মা-মেয়েসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফ্ল্যাটের ভেতর ভিকটিমরা মুমুর্ষূ অবস্থায় ছিল। অনাহারে থাকতে থাকতে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। ভিকটিমদের উদ্ধার করে আমরা তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তাদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভবনের এক বাসিন্দা জানায়, শাফানা আফিফা শ্যামী নামের ওই নারী পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে ওই ফ্ল্যাটটির মালিক এবং দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটটিতে বসবাস করে আসছিল। ভাইদের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তার মতবিরোধ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন তিনি। নিজ ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি বিলসহ কয়েক মাসের সার্ভিস চার্জ পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি।
এদিকে, ওই নারীর স্বজনদের দাবি, আফিফা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। কারো কথা না শোনায় স্বজনদের কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন না।
আফিফার ভাই তারকিন আহমেদ জানান, সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। কোনো মানুষকেই সে বিশ্বাস করতে পারে না। শুনেছি ও অসুস্থ হয়েছে। ঢাকার বাইরে আমার কাজ থাকায় আমি দেখতে যেতে পারিনি। তবে, আমার অন্য ভাইদের বিষয়টি জানিয়েছি।