লক্ষ্মীপুর সদরের ২০নং চররমনীমোহন ইউনিয়নের চরমেঘা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দূর্গম এ চরে হাজার হাজার একর খাস জমি পড়ে আছে। অনেক ভূমিহীন ডিসিআর কেটে ২৫-৩০ ধরে ফসল চাষ করেছে।
ইতোমধ্যে ডিসিআর বন্ধ থাকলেও কৃষকরা জমিতে ফসল চাষাবাদ করেছে।
সম্প্রতি একদল নব্য ভূমি দস্যূর উত্থান হয়েছে এ চরে। ভূমিদস্যুরা কয়েকজন প্রধান হয়ে পঁছিশ থেকে দেড়শ জনের খন্ড খন্ড দল গঠন করে চর দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে। রীতিমত চর দখল তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে। ক’দিন পরপর ভূমিদস্যূরা দলবেঁধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চরের কৃষকদের ওপর হামলা করছে। তাদের চাষাবাদের জমি জোর করে কেড়ে নিচ্ছে।
একদল জমিতে ফসল বুনছে, অন্য দল উঠতি ফসলীয় জমি পাওয়ারটিলায় চাষ দিয়ে পুরায় বীজবপন করছে। এতে একদলের সাথে অন্যদলের মধ্যে সংঘাত লেগে আছে। কে কত বেশি জমি দখল নিবে বিভক্ত দলগুলোর মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা রয়েছে। এসব ভূমিদস্যুদের দ্বারা বহু নিরিহ কৃষক আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণও করেছে। এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে রয়েছে দুই ডজনের বেশি মামলা। চর দখলের দুটি ঘটনায় আহত হয়েছে নারী-শিশুসহ ৮জন।
সম্প্রতি জমির বিরোধের জেরে চররমনী মোহন ইউনিয়নের চরমেঘায় হারিছ সর্দারের ছেলে রাকিব সর্দারকে হত্যার পর লাশ টুকরো করে মাটিতে পূঁতে রাখে ভূমিদস্যূরা। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। খন্ডিত লাশের অংশবিশেষ পুলিশ উদ্ধার করেছে বলে নিহতের পরিবার পক্ষ থেকে জানাগেছে। সবমিলিয়ে এ চরে ভূমিদস্যূ আতংকে আছে কৃষক ও সাধারণ মানুষ। নিরিহ কৃষকের জমি দখল করতে ১৭ থেকে ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত নব্য ভুমিদস্যূরা জেলা সদরের ২০ নং চররমনী মোহন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চরমেঘার পশ্চিমাংশে ওসমানগণি ও মোহাম্মদ হোসেনগং সহ কয়েকটি কৃষকপরিবারে ওপর দুই ধাপে হামলা করেছে।
এ হামলায় নারী ও শিশুসহ ৮জন আহত হয়েছে। বহু কৃষকের স্ত্রী লাঞ্ছিত হয়েছে। পৃথক দুটি ঘটনায় থানা একটি অভিযোগ ও একটি জিআর মামলা রেকর্ড হয়েছে। থানার মামলা ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ জানুয়ারী সকাল ১১টায় হাশেম সরকারের ছেলে ইমাম হোসেন সরকার, আলী হোসেন সরকার, রকমান মোল্লার ছেলে শাহজালাল মোল্লা, কাশেম মীরের ছেলে ইলিয়াস মীরসহ ২০/২৫ জন মিলে ওসমানগণি ও মোহাম্মদ হোসেন ফকীরগংদের জমি দখল করতে যায়।
এ সময় তারা ডিসিআর সূত্রে দখলীয় জমির মালিকদের ধাওয়া করে জমি থেকে সরিয়ে দেয়। বাধা দেওয়ায় তারা এক মহিলাকে শ্লীলতহানিসহ মারপিট করে। একইভাবে ৩১ জানুয়ারী ওই চরে আবারও হামলা করে ভূমিদস্যূরা। এ দিন ইমাম হোসেন সরকার সহ তার ছেলে শাহজালাল সরকার, রাজিব সরকার, কামাল সরকার, সুমন সরকার, সিরাজ বেলার ছেলে মনির বেলা লোকজন অস্ত্র উঁচিয়ে ওসমান ও মোহাম্মদ হোসেনগংদের জমি দখল করতে যায়।
এ সময় বাধা দিলে দখলকারীরা নারীসহ ৮ জনকে জখম করে। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের মধ্যে রুবিনা, ফাহিমা, ওসমানগণি, ইলিয়াছ, রুবেল খালাসী, রিনা আক্তার, ছোয়াব আলী খাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগমের অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়।
এ ঘটনায় মোহাম্মদ হোসেন বাদী হয়ে থানায় জিআর মামলা দায়ের করেন। যাহার নং-৫, তাং-৩/২/২০২৩ইং। প্রত্যক্ষদর্শী খালেক বেপারী জানান, হামলার প্রথম দিনে ইমাম হোসেন সরকার, আলী হোসেন সরকার, শাহজালাল মোল্লা ও ইলিয়াস মীরসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মোহাম্মদ হোসেনগংদের জমি দখল করতে গিয়ে ধাওয়া দেয় এবং তাদেরকে হামলা করে।
কৃষক মোহাম্মদ হোসেন জানান, তিনিসহ অপর অংশীদারদের বসবাস ও চাষাবাদের জমি না থাকায় চরমেঘায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে সরকারী জমি ডিসিআর কেটে নিজেদের দখলে রেখে বসবাস ও চাষাবাদ করেছে। তাদেরকে জমি থেকে বেদখল করতে আসামীরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে জমিতে গিয়ে দুইবার আক্রমন করে।
পৃথক দুটি ঘটনায় তিনি থানায় একটি অভিযোগ ও একটি জিআর মামলা দায়ের করেন। তিনি ন্যায় বিচারের দাবী জানান। লক্ষ্মীপুর সয়াবিন উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লি: (রেজি: লক্ষ্মী/৮৫) এর সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ জানান, দেওয়ানী ৮৯/২০২১ মামলার রায় ও ডিক্রীতে এ সমিতি ৪’শ একর জমি প্রাপ্ত হয়েছে। এ জমি শাহজালালগংসহ কতেক ভূমিদস্যরা দখল দিচ্ছেনা। তারা সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে এবং নিরিহ কৃষকের ওপর হামলা করেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ সৈয়াল জানান, এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ নদীভাঙ্গা, দরিদ্র্য ও ভূমিহীন । তারা গরু পালন, কৃষিকাজ ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। ভূমিহীন অনেক কৃষক সরকারী জমিন ডিসিআর কেটে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
তিনি বলেন, অনেক কৃষকের অভিযোগ, ভুমিদস্যূরা প্রায় সময় দলবেঁধে চরে গিয়ে নিরিহ কৃষকদের ওপর নির্যাতন চালায়, তাদের জমি থেকে বেদখলের পাঁয়তারা লিপ্ত থাকে। কৃষক শান্তিতে থাকুক, এটা তার চায় না। তাই কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষকের নিরাপত্তা, ইউনিয়নের শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্বার্থে তালিকা প্রস্তুত করে এসব ভূমি দখলবাজ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অতিব জরুরী।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন জানান, মোহাম্মদ হোসেনের দায়েরকৃত মামলা আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।