ঢাকা ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ফ্যাসিস্ট বিরোধী যত রাজনৈতিক সংগঠন আছে তাদের মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে তুলতে হবে: নজরুল ইসলাম খান কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যু ভোলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার নেতাকর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করে কাজ করার শপথ করালেন, আমিনুল হক দৌলতের কান্দিতে অন্যরকম এক বিদায় সংবর্ধনা পেল শিক্ষক সেলিনা আক্তার চিন্ময়ের গ্রেফতার ও সাইফুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে যত অপতথ্য ছড়িয়েছে বাংলাদেশকে ২২৬৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জার্মানি দুদকের মামলায় অব্যাহতি পেলেন জামায়াত সেক্রেটারি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কীটনাশক বীজ রাখার দায়ে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমান গুজবে কান দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি না করার আহবান

নিরাপত্তার অভাবে পর্যটক শূন্য টেংরাগিরি ইকোপার্ক

বরগুনার তালতলীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় বারবার ঘটছে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা। এ কারণে দিন দিন পর্যটক কমে যাচ্ছে এখানকার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্যরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা হীনতার কারণে এসব পর্যটন কেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পর্যটকরা। দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন খ্যাত টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনে ১০-১১ ও ১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় টেংরাগিরি ইকোপার্ক।

২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এই ইকোপার্কটি। এই ইকোপার্কে দেখা যাবে মায়াবী হরিণ, কাঠবিড়ালি, কুমির, বানরসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের হাজারো রকমের গাছ। এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক আসতো এখানে।  কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে টুরিস্ট পুলিশ না থাকায় চুরি ছিনতাইসহ নানান অপরাধ একের পর এক সংগঠিত হয় এখানে। এমনকি ২০২০ ও ২০২১ সালে দুটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে এখানে। আর ইভটিজিং এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

ট্যাংরা গিরি ইকো পার্কে ঢাকার গুলশান থেকে ঘুরতে আসা উম্মে সিনথিয়া মৌ নামে এক পর্যটকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে একবার কুয়াকাটা এসেছিলাম। সেখানে এসে জানতে পারি বরগুনার তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্কের কথা। তখনই আমরা এখানে এসেছিলাম। কুয়াকাটায় তো শুধু সমুদ্র সৈকত, কিন্তু এই পার্কে এসে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। কি নেই এখানে? হাজার প্রজাতির গাছের বন, বনে রয়েছে সুন্দরবনের মতোই নানান সব প্রাণী। গভীণ অরণ্যে হাঁটতে থাকলে দেখা মিলবে অপরূপ সমুদ্র সৈকত। সেই মুগ্ধতা থেকে আমি আবারও এসেছি। কিন্তু এখানে স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতে আমরা অস্থির।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই। বনটি সংরক্ষিত থাকায় এখানে বন বিভাগের নজরদারি থাকার কথা। কিন্তু তাদের দেখাও পাইনি। এই পার্কে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। বকাটেরা তাদের মতন করে ইভটিজিং করে যাচ্ছে আর পর্যটকরা সহ্য করে যাচ্ছে।’

বরগুনা সদরে সরকারি অফিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন তিনি। কিন্তু কিছু বকাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বিরক্ত করছে। দেখলে মনে হয় এরা বেশিরভাগ মাদকাসক্ত এবং জেলে পেশায় জড়িত। বখাটেদের সঙ্গে তাল মিলাতে দেখলাম কিছু বয়স্ক মানুষদেরও।

এখানে যেসব পর্যটকরা একবার আসেন, তারা এখানকার মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করেন আতংক নিয়ে। টেংরাগিরি ও শুভ সন্ধ্যার অসংখ্য পর্যটক এই একই অভিযোগ করেন।

ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করা সংগঠন বরগুনা জেলা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আরিফ রহমান বলেন, বার বার গণধর্ষণ ও ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটায় তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পর্যটকরা। এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প না করলে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে এসব পর্যটন কেন্দ্র।

বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল বলেন, ‘আমার বাড়ি তালতলী উপজেলায়। তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে অসংখ্য পর্যটক আসত। এসব এলাকার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের দোকানসহ ব্যবসা শুরু করেছিল। অনেক ব্যবসায়ীরা জমি কিনে আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাও করতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছু মাদকাসক্ত বখাটেদের জন্য যত বছর যাচ্ছে, তত পর্যটকও কমছে।

গত দুই বছর ধরে প্রায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে এ পর্যটন কেন্দ্র দুটি। এখানে টুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প হলে একদিকে যেমন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, ঠিক তেমনি অসংখ্য নিম্ন এর মানুষের ভাগ্য বদলাবে।’

টুরিস্ট পুলিশের বিষয় বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আব্দুস ছালাম জানান, টুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। জেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলার মিটিংয়ে রেজুলেশন পাস করে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বজন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন তারা। ক্যাম্প স্থাপনের আগ পর্যন্ত তালতলী থানা পুলিশ দিয়ে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে বলেও জানান তিনি। সুন্দরবন খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এই ম্যানগ্রোভ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৩ একর।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ফ্যাসিস্ট বিরোধী যত রাজনৈতিক সংগঠন আছে তাদের মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে তুলতে হবে: নজরুল ইসলাম খান

নিরাপত্তার অভাবে পর্যটক শূন্য টেংরাগিরি ইকোপার্ক

আপডেট সময় ০৬:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বরগুনার তালতলীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় বারবার ঘটছে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা। এ কারণে দিন দিন পর্যটক কমে যাচ্ছে এখানকার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্যরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা হীনতার কারণে এসব পর্যটন কেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পর্যটকরা। দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন খ্যাত টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনে ১০-১১ ও ১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় টেংরাগিরি ইকোপার্ক।

২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এই ইকোপার্কটি। এই ইকোপার্কে দেখা যাবে মায়াবী হরিণ, কাঠবিড়ালি, কুমির, বানরসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের হাজারো রকমের গাছ। এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার হাজার পর্যটক আসতো এখানে।  কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে টুরিস্ট পুলিশ না থাকায় চুরি ছিনতাইসহ নানান অপরাধ একের পর এক সংগঠিত হয় এখানে। এমনকি ২০২০ ও ২০২১ সালে দুটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে এখানে। আর ইভটিজিং এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

ট্যাংরা গিরি ইকো পার্কে ঢাকার গুলশান থেকে ঘুরতে আসা উম্মে সিনথিয়া মৌ নামে এক পর্যটকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে একবার কুয়াকাটা এসেছিলাম। সেখানে এসে জানতে পারি বরগুনার তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্কের কথা। তখনই আমরা এখানে এসেছিলাম। কুয়াকাটায় তো শুধু সমুদ্র সৈকত, কিন্তু এই পার্কে এসে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। কি নেই এখানে? হাজার প্রজাতির গাছের বন, বনে রয়েছে সুন্দরবনের মতোই নানান সব প্রাণী। গভীণ অরণ্যে হাঁটতে থাকলে দেখা মিলবে অপরূপ সমুদ্র সৈকত। সেই মুগ্ধতা থেকে আমি আবারও এসেছি। কিন্তু এখানে স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতে আমরা অস্থির।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই। বনটি সংরক্ষিত থাকায় এখানে বন বিভাগের নজরদারি থাকার কথা। কিন্তু তাদের দেখাও পাইনি। এই পার্কে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। বকাটেরা তাদের মতন করে ইভটিজিং করে যাচ্ছে আর পর্যটকরা সহ্য করে যাচ্ছে।’

বরগুনা সদরে সরকারি অফিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন তিনি। কিন্তু কিছু বকাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বিরক্ত করছে। দেখলে মনে হয় এরা বেশিরভাগ মাদকাসক্ত এবং জেলে পেশায় জড়িত। বখাটেদের সঙ্গে তাল মিলাতে দেখলাম কিছু বয়স্ক মানুষদেরও।

এখানে যেসব পর্যটকরা একবার আসেন, তারা এখানকার মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করেন আতংক নিয়ে। টেংরাগিরি ও শুভ সন্ধ্যার অসংখ্য পর্যটক এই একই অভিযোগ করেন।

ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করা সংগঠন বরগুনা জেলা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আরিফ রহমান বলেন, বার বার গণধর্ষণ ও ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটায় তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পর্যটকরা। এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প না করলে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে এসব পর্যটন কেন্দ্র।

বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল বলেন, ‘আমার বাড়ি তালতলী উপজেলায়। তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে অসংখ্য পর্যটক আসত। এসব এলাকার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের দোকানসহ ব্যবসা শুরু করেছিল। অনেক ব্যবসায়ীরা জমি কিনে আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাও করতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছু মাদকাসক্ত বখাটেদের জন্য যত বছর যাচ্ছে, তত পর্যটকও কমছে।

গত দুই বছর ধরে প্রায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে এ পর্যটন কেন্দ্র দুটি। এখানে টুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প হলে একদিকে যেমন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, ঠিক তেমনি অসংখ্য নিম্ন এর মানুষের ভাগ্য বদলাবে।’

টুরিস্ট পুলিশের বিষয় বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আব্দুস ছালাম জানান, টুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। জেলা প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলার মিটিংয়ে রেজুলেশন পাস করে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বজন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন তারা। ক্যাম্প স্থাপনের আগ পর্যন্ত তালতলী থানা পুলিশ দিয়ে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে বলেও জানান তিনি। সুন্দরবন খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এই ম্যানগ্রোভ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৩ একর।