বাংলার মাটি তার শ্যামল বুকে চিরকাল সম্প্রীতিকে ধারণ করে এসেছে, পরিচর্যা করেছে গভীর ভালবাসায়। আবহমানকাল ধরেই এ গাঙ্গেয় অববাহিকা সব মতের-ধর্মের জনগোষ্ঠীকে সমানভাবে বুকে ঠাঁই দিয়েছে, লালন করেছে পরম মমতায়। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে বাদশাহী পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষ্ণব কবিরা পদাবলী কীর্তন রচনা করেছেন।
বৌদ্ধ ধর্মানুসারী পাল রাজারা শাক্ত এবং বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় কখনো বাধা দেননি। বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অংকুর তার আবহাওয়ায়, তার লোকায়ত ঐতিহ্যে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে বেড়ে ওঠা এই বঙ্গভূমির সন্তানেরা শান্তিপ্রিয়। আমাদেরহৃদয় চিরকালই সিক্ত সহমর্মিতা, করুণা আর সম্প্রীতির অনিঃশেষ ধারায়। আর তাই, ধর্মীয় দর্শনের মানবিক ও সুকুমার বোধগুলি এই বাংলা সহজাতভাবেই আপনার করে নেয়। আমাদের শত বছরের ইতিহাস জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর ইতিহাস, একের বিপদে অন্যকে উজাড় করে দেওয়ার নিরন্তর কাহিনী। বাঙালির জাতীয়তার ইতিহাস চিরায়ত অসাম্প্রদায়িকতার এক অবিনাশী গল্প। আমাদের জাতীয় জীবনে যখনই ঘনিয়ে এসেছে অমানিশার কালো ছায়া, বিপন্ন করতে চেয়েছে আমাদের সম্প্রীতির সাজানো বাগান, আমরা জেগে উঠেছি।
আমরা প্রতিহত করেছি, সৃষ্টি করেছি নতুন ইতিহাস। মুক্তিবাহিনী আর সেসব প্রতিবন্ধকতা দুর্মর পায়ে ঠেলে আমরা এনেছি নতুন প্রভাত। শতাব্দীর সেরা বাঙালির নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালে আমরা এনেছিলাম নতুন জোয়ার। সে প্লাবনেভেসে যায় সব অশুভছায়া, বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে নস্যাৎ নেতৃত্বে বুকের রক্তে আমরাই রচনা করেছি নতুন ইতিহাস, এনেছি এক নতুন মানচিত্র। এক মহাঅমানিশার রাতে আমরা হারিয়েছি আমাদের পিতাকে হারিয়ে গিয়েছিল। আমাদের পথের দিশা। হিংস্র শকুনের দল আমাদের দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল নানা কুটকৌশলে। বদলে দিতে চেয়েছিল ইতিহাসের গতিপথ। বছরের পর বছর আমরা বাংলার খুঁজে ফিরছি আমাদের হারিয়ে যাওয়াআত্মপরিচয়। বাংলার হিন্দু বাংলার খৃষ্টান বাংলার বৌদ্ধ বাংলার মুসলমান করেছে সব ষড়যন্ত্র।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিনিসুতোর এক নিশ্ছিদ্র বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। যেন একই বাগিচায় নানা পরিচয়ের ফুল। আর সেই মহান স্বাধীনতার বাঙালী অমর কাব্যের কবির কালো অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি।
যখনই সুযোগ পেয়েছে হিংস্র বিষধর নাগিনীরা ছোবল মারতে চেয়েছে, ছিনিয়ে নিয়েছে বহু আলোর পথের যাত্রীকে। আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক যুগসন্ধিক্ষণে। মরণ কামড় দেওয়ার জন্য তৈরি হিংস্র শ্বাপদের দল। আমার শত বছরের ঐতিহ্য, আমার সময় এসেছে আমাদের আবারো ১৯৫২, ১৯৫৪ ১৯৬৯ আর একাত্তরের মত একতাবদ্ধ হয়ে হিংস্র শকুনের দলকে রুখে দেওয়ার। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে সমাজের সর্বস্তরে আজ ঐক্য প্রয়োজন। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। অহংকার আজ হুমকির মুখে। শ্বাপদকুলের সঙ্গে আমাদের মোকাবেলা অবশ্যম্ভাবী। আর এই মোকাবেলাতেই নির্ণয় হবে আগামীর গতিপথ। আমাদের ভাবতে হবে আমরা বহমান সময়ের সঙ্গে আমাদের যে যাত্রা প্রগতির রথে চড়ে অগ্রগতির পথে, আমরা কি সে যাত্রা করবো ইতিহাসের উল্টো পথে? সময় এসেছে আমাদের আবারো ১৯৫২, ১৯৫৪ ১৯৬৯ আর একাত্তরের মত একতাবদ্ধ হয়ে হিংস্র শকুনের দলকে রুখে দেওয়ার। আমার হাজার বছরের ইতিহাস মিলন আর সম্প্রীতির ইতিহাস। ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার সেখানে স্থান নেই, স্থান নেই একাত্তরের পরাজিত শক্তির। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে সমাজের সর্বস্তরে আজ ঐক্য প্রয়োজন। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ জলাগুলি দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ আমার এই বোধ আজ নতুন করে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে।