আমাদের দেশের দীর্ঘতম গ্র্যাজুয়েশন কোর্স হচ্ছে এমবিবিএস ইন্টার্নশিপ সহ যার স্থায়িত্ব প্রায় ছয় (০৬) বছর। ক্যারিঅন সিস্টেম না থাকলে একজন শিক্ষার্থী ১ম প্রফেশনাল পরীক্ষায় দুর্ভাগ্যবশত ফেল করলে তাঁর বাধ্যতামূলক ছয় (০৬) মাস বসে থাকা লাগবে, যার ফলে সে ব্যাচ থেকে ছিটকে পড়বে। এভাবে সুদীর্ঘ ছয় (০৬) বছরের কোর্স আরও দীর্ঘায়িত হয়ে ০৭-০৮ বছর বা তার বেশিতে পরিণত হবে। ফলে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজভাবেই চাকুরী ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে।
সারা বাংলাদেশ থেকে বাছাই করে ১.৫ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে সেরা ৪,৩৫০ জনকে সরকারি মেডিকেল কলেজে এবং পরবর্তী মেধাক্রম অনুসারে বেসরকারি মেডিকেলে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হয়। এখানে চান্স পাওয়া সবাই ভাল শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও মেডিকেল শিক্ষা কারিকুলাম এমনি যে, অনেক ভাল প্রস্তুতি নিয়েও কোন প্রফেশনাল পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী ফেল করতেই পারে। স্যার আপনি জানেন, অন্যান্য স্নাতক কোর্সে ৪০% মার্ক পেয়ে পাশ করতে হয়, যেখানে মেডিকেলে সকল পরীক্ষায় ৬০% মার্ক পেয়ে পাশ করতে হয়। এমবিবিএস এর মত বিশ্বের অন্যতম কঠিন ডিগ্রীতে ৬০% পেয়ে যেখানে পাশ করতে হয় সেখানে কোন কারণে ফেল করা অস্বাভাবিক নয়।
তাছাড়া আমাদের দেশে প্রতিটি পরীক্ষায় ৫০% নম্বর ভাইভা পদ্ধতিতে নির্ধারিত হয়। ভাইভা পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষকের সামনে থ্রোট ব্লক, স্ট্রেস, প্যানিক অ্যাটাক বা অন্য যেকোন কারণে ভাইভা খারাপ করতেই পারে। এজন্য তার ফেল আসলে ছয় মাস বসিয়ে রাখা কোনো যৌক্তিকতা বহন করে না। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এদেশে আলোচনা খুবই কম। একজন মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ওতপ্রতোভাবে জড়িত। সাধারণত একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যাতে করে একজন শিক্ষার্থীকে প্রচুর পরিমাণ স্ট্রেস নিতে হয়, ফলে শিক্ষার্থীরা ডিপ্রেশনে ভোগে ।
এজন্য প্রায়ই মেডিকেল শিক্ষার্থীর সুইসাইডের খবর পাওয়া যায়। একজন ডাক্তার চিকিৎসা করবে, তার মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন। কিন্তু মেডিকেলে পদার্পণের দুই বছর অতিক্রম না হতেই ১ম প্রফেশনাল পরীক্ষায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণে ফেল করলে এবং ক্যারিঅন না থাকলে, তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন দ্বারা যে পরিমাণ হেয়তা স্বীকার হতে হবে তা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে দুর্বল করে দিতে যথেষ্ট। → ক্যারিঅন সিস্টেম না থাকলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নেপটিজমের স্বীকার হবে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানোর প্রবণতা বাড়বে । এতে শিক্ষার্থীরা আর্থিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে।
সিজিপিএ সিস্টেম কেন বাতিল চাই? → উন্নত দেশের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য বিএমডিসি নতুন মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন ধরনের অবকাঠামোগত পরিবর্তন না করেই সিজিপিএ সিস্টেম চালু করেছে। অন্যান্য দেশে যেখানে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়, সেখানে আমাদের দেশে প্রফেশনাল পদ্ধতিতে পরীক্ষার দেশে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়, শুধুমাত্র সেসব দেশে সিজিপিএ সিস্টেম চালু হয়। যেসব বিশ্বের কোথাও প্রফেশনাল পরীক্ষার পাশাপাশি সিজিপিএ পদ্ধতি চালু নেই এবং তা বাংলাদেশেই চালু হতে যাচ্ছে। →
মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিজিপিএ
সিস্টেমের আবির্ভাব ঘটলে এই সহযোগিতা-সহমর্মিতার লোপ ঘটবে, যা কারোর কাম্য নয়। উন্নত দেশে বায়াসনেস এর কারণে স্নাতক পর্যায়ে যেখানে ভাইভা নিরুৎসাহিত করা হয় সেখানে বাংলাদেশে প্রফেশনাল পরীক্ষায় ৫০% মার্ক নির্ধারিত হয় ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে । একজন শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ভাইভার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল হবে। সিজিপিএ সিস্টেম চালু করলে উচ্চ সিজিপিএ এর জন্য বায়াসনেস আরও বেড়ে যাবে। একজন শিক্ষার্থীর ভালো বা খারাপ ডাক্তার হওয়া নির্ভর করে তাঁর দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার ওপর । এমতাবস্থায় সিজিপিএ সিস্টেম চালু করে ডাক্তারদের দক্ষতার ওপর নজর না দিয়ে মানুষ সিজিপিএ এর ওপর ভিত্তি করে একজন ডাক্তার ভালো না খারাপ তা নির্ধারণ করবে, যা অযৌক্তিক। পরিবর্তন যদি করাই হয়, তাহলে যেনো সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন হয়। কিছু পদ্ধতি আগের রেখে কিছু পরিবর্তন আমাদের স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলবে। আমাদের দাবি, যদি সিজিপিএ পদ্ধতি চালু করা হয়, তাহলে সেমিস্টার সিস্টেম চালু হোক এবং পরীক্ষার পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা হোক। যেমন কেন্দ্রীয় ভাইভা পদ্ধতির আবির্ভাব ঘটানো থেকে শুরু করে পক্ষপাতিত্ব না হওয়া নিশ্চিত করতে যা যা পরিবর্তন প্রয়োজন। অন্যথায় সিজিপিএ সিস্টেম বাতিল করা হোক এবং যেকোনো মূল্যে ক্যারিঅন সিস্টেম পুনর্বহাল করা হোক।