অর্থনীতি নিয়ে আমাদের চিন্তা এবং দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তার মধ্যে প্রবাসী আয় নিয়ে আমাদের আশাও বেশি কারণ দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান প্রবাসীদের। সেই জায়গায় প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, এক বছরে প্রবাসী আয় কমল ৭৯ কোটি ডলার। ২০২২ সালে এর আগের ২০২১ সালের তুলনায় দেশে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় কমেছে ৭৯ কোটি ডলার।
১ ডিসেম্বর, রোববার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ২০২২ সাল সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগের বছর ২০২১ সালে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ২০৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ বিদায়ী বছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এই হিসাব বৈধ চ্যানেল খ্যাত ব্যাংক খাতের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয়ের।
অর্থনীতির আরেক অশনি সংকেত হলো ব্যাংকের তারল্য সংকট। সমকালের প্রতিবেদন বলছে, ইসলামী ব্যাংককে আট হাজার কোটি টাকা ধার। ইসলামী ব্যাংক কিছুদিন ধরে তারল্য সংকটে পড়েছে। ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণে (সিআরআর) ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংকটির তারল্য পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা কাটাতে শেষ পর্যন্ত সুদভিত্তিক ৮ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকের ‘ডিমান্ড প্রমিসরি নোট’-এর বিপরীতে এ অর্থ ধার দেওয়া হয়েছে। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে বের করে নেওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা না করে শুধু তারল্য সহায়তা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০২২ সালে অর্থনীতি যেমন আলোচনায় ছিল ২০২৩ সালেও অর্থনীতি আলোচনায় থাকবে নিঃসন্দেহে। তবে অর্থনীতির আরেক মরণ ফাঁদ হলো অর্থ পাচার। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, শুল্ক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান, ফাঁদ পেতে এলসি খুলে হাজারো কোটি টাকা পাচার, নিরীহরা এখন হয়রান। জমিজমা বিক্রিতে মধ্যস্থতা করতেন আবদুল মোতালেব হোসেন। একটি আবাসন নির্মাণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিদারুল আলমের কয়েকটি জমি কেনায় মধ্যস্থতা করেন তিনি। এই সূত্রে দিদারুলের কাছে একটি চাকরি চান মোতালেব। চাকরির আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি নেন দিদারুল। পরে তিনি বড় ভাই শহীদুল আলমকে দিয়ে আরেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ওপর মোতালেবের ছবি বসিয়ে, স্বাক্ষর নিয়ে একাধিক ব্যাংকে এলসি (বিলপত্র) খোলেন। কিছুদিন পর মোতালেব জানতে পারেন, তিনি অর্থ পাচার আইনের ১৭টি মামলার আসামি।
শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, শহীদুল ও দিদারুল তাঁদের কর্মচারীসহ নিরীহ ব্যক্তিদের দিয়ে মেসার্স অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি, হেনান আনহুই অ্যাগ্রো, হেব্রা ব্র্যাঙ্কো ও চায়না বিডিএল নামের চারটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খুলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আনছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠান ২৯টি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। এর মধ্যে হেনান আনহুই অ্যাগ্রো ৪৩৯ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি ৪৩২ কোটি টাকা, হেব্রা ব্র্যাঙ্কো ২৯১ কোটি টাকা ও চায়না বিডিএল ২৩৪ কোটি টাকা পাচার করেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাকিল খন্দকার বলেন, অর্থ পাচারের ঘটনায় তারা দিদারুলের মিরর ডেভেলপমেন্টের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রমাণ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথি জব্দ করেছেন। দিদারুলরা যে চার নিরীহ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়েছেন, তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এখন তারা যাতে মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন, সেটি তাঁদের বিবেচনায় থাকবে।
নতুন বছরের আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল বই উৎসব। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন বলছে, নতুন বইয়ে শিশুদের উৎসব। নতুন বছরের শুরুর দিনই সারা দেশে একযোগে বই পেল শিশুরা। শীতের সকালে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মেতে ওঠে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। আপন মনে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখছিল শিশুরা। তাদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো।
সারা দেশে একযোগে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণের মাধ্যমে পালিত হয় বই উৎসব। পৃথকভাবে আয়োজন করা হয়েছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বই উৎসব উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের বই উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিকের বই বিতরণ উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সকাল ১০টায় এসব অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, বগুড়া, নওগাঁ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও হবিগঞ্জে বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। এসব অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকসহ জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার আরেকটি বিষয় হলো, ফানুসে আটকা মেট্রোরেল। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন বলছে, মেট্রো শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ৯৯৯-এ ৩৬৫ কল। ফানুসে বিদ্যুৎবিভ্রাট, আগুন মেট্রোরেল বন্ধ দুই ঘণ্টা। থার্টি ফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান না করার পাশাপাশি নগরবাসীকে আতশবাজি, পটকা ফোটানো কিংবা ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থাকতে আগেই অনুরোধ জানিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর সঙ্গে ফানুস ওড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, আগুনের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ সময় বৈদ্যুতিক গোলযোগের সৃষ্টি হওয়ায় বাসাবাড়িতে অনেক সময় বিদ্যুৎ ছিল না। একই সঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর কারণে শব্দদূষণে ভোগান্তি হয়েছে রোগী, বয়স্কসহ প্রায় সবার। ছোট শিশুরা আতঙ্কিতও হয়ে পড়ে। থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাতে সারা দেশ থেকে শব্দদূষণ সংক্রান্ত ৩৬৫টি কল আসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে ১৬০টি কলের বিপরীতে সেবা দিতে হয়েছে।