চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থীরা। এ অভিযোগে ওই প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে তারা।
রোববার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা। ওই স্কুলের নাম কাপাসঘোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মো. আলা উদ্দিন।
রোববার দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ছাত্রীরা নানা প্ল্যাকার্ড হাতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন অভিভাবকরা। ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিমও উপস্থিত ছিল। একপর্যায়ে ওই স্কুলের সাবেক কয়েকজন ছাত্রীও আন্দোলনে যোগ দেন। তাদের মধ্যে তানজিনা সুলতানা নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। ২০১৯ সালে স্কুলটি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি নগরের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়েন।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন নিরীহ এবং চুপচাপ থাকে এরকম ছাত্রীদের টার্গেট করতেন। তাদের তিনি মাঝেমধ্যে রুমে ডাকতেন। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সঙ্গে অনেক সময় সেলফি তুলতেন, আবার কখনও তাদের মোবাইল নম্বর এবং ফেসবুক আইডি নিতেন। তারপর তাদের নানাসময় অডিও এবং ভিডিও কল দিতেন। আগে এগুলো চুপেচাপে করলেও এখন তিনি প্রকাশ্যে করেন। এজন্য বোনদের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছি।
আন্দোলনরত কয়েকজন অভিভাবক জানান, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কয়েকজন ছাত্রীর সামনে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের তিনি কক্ষে ডেকে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে পছন্দের এক ছাত্রীর জন্মদিন পালন করার নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের নারী অভিভাবকদের মাঝেমধ্যে তিনি প্রেমের প্রস্তাবও দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর অভিভাবক, প্রায় সময় ছাত্রীদের ডেকে আলাউদ্দিন গায়ে হাত দেন। বিভিন্ন সময় তাদের অনৈতিক প্রস্তাব দেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো সমাধান হয়নি। একজন অভিভাবক হয়ে এটা মেনে নিতে পারি না। তাই অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করছি। দশম শ্রেণির ছাত্রী মাহবুবা ইসফা, সম্প্রতি আমাদের প্রধান শিক্ষক ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেছেন। আগেও তিনি একই কাজ অনেকবার করেছেন। কিন্তু তার কোনো শাস্তি হয়নি।
এদিকে, দুপুর ১২টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন চসিকের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানান তিনি। এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনারা প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পাবেন।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বে থাকা চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সফিউল আজম বলেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসেছেন। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।