জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৫ জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার নিষিদ্ধ ঘোষিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পাঁচ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা হলেন- মো. গোলাম সারোয়ার (২৫), সাকিব মাহমুদ (২৭), দুই সহদোর মো. ফরহাদ হোসেন (২২), মো. মুরাদ হোসেন (২১) ও মো. ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম (২৮)। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানান।
তিনি জানান, রোববার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। খন্দকার আল মঈন জানান, এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, একটি রেজিস্টার এবং একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ দাওয়াতী, হিজরকৃত সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলো।
তারা ২/৪ বছর আগে নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। র্যাব বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে জামাতুল আনসারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের কারণে তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে আত্মগোপনে থাকে এবং সংগঠনে জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্নস্থানে পৌঁছে দিতো বলে জানা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানান, গ্রেপ্তার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করেন। গোলাম সারোয়ার তার শশুরের মাধ্যমে ২ বছর আগে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদেরকে কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থান করা হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।
এছাড়া গ্রেপ্তার সাকিব গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তিনি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা। ৩ বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করেন। গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো কার্যক্রমের সাথেও জড়িত ছিলেন এবং তিনি সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করেন।
র্যাবের মূখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর ভাই। তারা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেনের শ্যালক। ৩ বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা সংগঠনের সাথে জড়িত হন। তারা রাজধানীর গুলিস্থান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সোসরিজের দোকান চালাতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে খরচ করতেন।
এছাড়াও মুন্সিগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করতেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করতেন। এছাড়াও তারা পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য ১ম পর্যায়ে ১২ জন সদস্যকে প্রেরণকালীন সময়ে এই খামারে সবাইকে একত্রিত করেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার ওয়াসিকুর রহমান রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। ২ বছর আগে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন।
রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ষোল আনা’ নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানে লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। সম্প্রতি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনতাই করা জঙ্গিরা দেশে আছেন নাকি দেশ ছেড়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনো বলা যাচ্ছে না। আমরা কাজ করছি। সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে পর্যালোচনা করে, তাদের অবস্থান শনাক্তে কাজ করছি।
খন্দকার আল মঈন জানান, পলাতক এই জঙ্গিদের গ্রেফতারে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও র্যাবসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে বেশ কিছু তথ্য আছে। এ ছাড়া র্যাব জঙ্গিদের ক্ষেত্রে প্রথমে যেটা করে থাকে, সেটা হচ্ছে- তাদের পূর্বের অপরাধ কার্যক্রম পর্যালোচনা করে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার বলেন, জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়ার পেছনে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। একইভাবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।
এছাড়া র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এক সাথে সর্বদা কাজ করছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা গ্রহনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।