‘ডায়মন্ডের নাকফুল’ নিয়ে দ্বন্দ্ব এলো প্রকাশ্যে। অপু-শাকিব-বুবলী এই তিনজনকে ঘিরে ত্রিমুখী আলোচনায় সরব সিনেপাড়া। কথা ছিল, সংবাদ সম্মেলনে সব কিছু তুলে ধরবেন। কিন্তু সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখেই সরে যেতেন বুবলী। এবার অবশ্য ক্যামেরার সামনে এলেন। জানালেন অজানা অনেক কথা।
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) এক ভিডিও বার্তায় বিস্তারিত কথা বলেছেন বুবলী। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে শাকিব-অপু এবং জয়ের কথাও। খুব শান্তচিত্তে ধীরে সুস্থে সব বিষয়ে এক এক করে কথা বলেন তিনি। ভিডিও বার্তার ক্যাপশনে লেখেন, ‘আমার কিছু কথা..’।
ক্যারিয়ারের শুরুতে শাকিবকে নিজের মেন্টর ভাবতেন বুবলী। ওই সময়টাতে শাকিব খান সম্পর্কে অতকিছু জানতেনও না বলে জানান। বুবলী বলেন, ‘আমি ২০১৬ থেকে কাজ করছি। শাকিব খান, যিনি আমার সন্তানের বাবা, আমার স্বামী, তার সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি বা সুযোগ পাই। উনি আমাকে মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন। ওনার মাধ্যমেই আমার ফিল্মে আসা। ওই সময়ে আমি কেন, পুরো বাংলাদেশের কেউ কি জানতেন ওনার আগের কোনো সম্পর্ক নিয়ে? এটা কিন্তু আমরা কেউই জানতাম না।’
বুবলী জানালেন, শাকিব খান নিজেকে তার কাছে সিঙ্গেল হিসেবেই উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সুবাদেই তাদের মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন অপু বিশ্বাস টেলিভিশন লাইভে এসে বোমা ফাটালেন, অভিযোগের তির ছুটে আসে বুবলীর দিকেই।
অপুর সেই লাইভ নিয়েও এদিন কথা বলেন ‘বসগিরি’ নায়িকা। সিনিয়র অভিনেত্রী হিসেবে অপুকে সম্মানের চোখে দেখেন কিন্তু তার ওই দিনের আচরণে কষ্ট পেয়েছিলেন বুবলী। তার ভাষায়, ‘২০১৭-তে যখন বিষয়গুলো (অপু বিশ্বাসের সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসা) সামনে আসলো, তখন শাকিব খান নিজেও অবাক হয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে যিনি সম্পর্কে ছিলেন, অপু বিশ্বাস, উনি অনেক সিনিয়র আমার থেকে। অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। তাকে অবশ্যই আমি কাজের জায়গা থেকে সম্মান করি। তার সঙ্গে কখনই আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে তিনি লাইভে আসার আগে হঠাৎ আমাকে ফোন করেছিলেন এবং অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি কেন! ওই ব্যবহারের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ওই বাজে ব্যবহারের কথা তিনি নিজেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন।’
‘আমার কষ্টের জায়গা ছিল, আমি তো কিছুই জানি না। আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিল, সেটা তো না। কেন আমাকে জড়িয়ে এভাবে বলা হচ্ছিল! সে কারণেই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম’— বললেন বুবলী।
এ বিষয়ে শাকিবের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন বুবলী। তার দাবি, “আমি শাকিব খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পরে তিনি অনেক ইমোশনালি আমাকে বলেন যে, ‘অনেক দিন ধরেই কথাগুলো তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তুমি তো এটাতে জড়িত নও। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এক বছর ধরে আমার যোগাযোগ নেই।’ এটা অপুদি নিজেও লাইভ প্রোগ্রামে বলেছিলেন। আপনারা অনেকেই জানেন, শাকিব খানের কথা অনুযায়ী অপু বিশ্বাসকে তিনবার অ্যাবর্শন করতে হয়েছিলো। চতুর্থবার বাধ্য হয়েই তিনি সন্তান নিয়েছিলেন। এইসব ঘটনায় তো আমি নেই। তখন সিনেমাতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেন আমাকে দোষারোপ করা হলো যে, আমার কারণে কারো সংসার ভেঙেছে? আমার কারণে কারো সংসার, সম্পর্ক ভাঙেনি। আমি স্পষ্ট করে দর্শকের উদ্দেশে বলতে চাই।”
বুবলীর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াটা, সেটাও তো সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তারা তো ম্যাচিওর মানুষ। এটা সম্ভব যে, কারো দ্বারা প্ররোচিত! কোনো সম্পর্কে সমস্যা হওয়ার পর একজন যখন আরেকটি সম্পর্কে যুক্ত হন, সেটার জন্য কি ওই নতুন মানুষ দোষী হয়ে যায়? আমাদের সমাজে অনেকেই নতুন সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছেন না? তাদের যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তারা যদি সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে চায়, এটার জন্য কি নতুন মানুষটি দায়ী? শাকিব খান নিজেই আমাকে বলেছেন, তিনি এই সম্পর্কে (অপু বিশ্বাসের সঙ্গে) সুখী নন। তিনি তার জায়গা থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। যেটা আমি তার সম্মানার্থে আগেও বলিনি, আজও বলব না। এটুকু বলি, আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের সমস্যাগুলো তো অনেক আগে থেকেই।’
‘অনেকের এই প্রশ্ন আছে যে, আমি কেন হঠাৎ করে জয়ের (শাকিব-অপুর ছেলে) জন্মদিনে আমার বেবি বাম্পের ছবি দিলাম। দেখুন, জয়ের ব্যাপারে আমি আমার স্বামী শাকিব খানকে কতটা পজিটিভলি দেখতে বলি, এটা উনি জানেন এবং ওনার আশেপাশে যারা কাছের মানুষ আছেন, তারা জানেন। বিষয়গুলো আমি কখনও সামনে আনতে চাইনি। কিন্তু অনেকেই খুব বিরক্ত হচ্ছেন যে, আমি কেন এসব নিয়ে রেসপন্স করি না। অনেকের সম্মানের কথা ভেবে আমি আজকেও অনেক কিছু বলছি না। জয়কে আমি কতটা সাপোর্ট করি, এটা শাকিব খান খুব ভালো করেই জানেন। ওর সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য সবরকম পরামর্শ আমি দিয়েছি। আমার বেবি বাম্পের ছবি যে ওর জন্মদিনে ছাড়া, বিষয়টা এভাবে ভেবে করিনি আমি। যতদূর জানি, জয় এবার ছয় বছরে পড়েছে। তো এর আগে অনেকগুলো বছর গেছে, আমি তো কোনও জন্মদিনে এমনটা করিনি। সবসময় ওর জন্য ভালোবাসা, দোয়া দিয়ে এসেছি। আমিও তো একটা মানুষ, আমারও তো কষ্ট থাকতে পারে। আমি তো শুধু বেবি বাম্পের ছবি দিয়েছি। কাউকে দোষারোপ করেও তো কিছু বলিনি। শুধু নিজের আবেগের জায়গা থেকে একটা বিষয় শেয়ার করেছি।’