ঢাকা ০২:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেঁতুলিয়ায় দেখা মিলছে ৩ দেশের সৌন্দর্য

উত্তরের পর্যটনের জেলা মানেই সীমান্ত ঘেঁষা পঞ্চগড়। হাড়কাঁপুনি ঠান্ডা মধ্যেই সীমান্তজুড়ে রূপের পসরা বসিয়েছে এই জেলা।  এখানে পা রাখলেই দেখা মিলছে তিন দেশের সৌন্দর্য। অনেকটা এক ঢিলে তিন পাখি।

এ জেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা দেখতে পাওয়া। কিছুদিন কুয়াশায় ঢাকা থাকার পর আবারও দেখা দিয়েছে এই পর্বতমালা। শুক্রবার সকাল থেকেই দিনভর দেখা মিলছে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার মহনীয় সৌন্দর্য। সূর্যোদয়ের রুপালী আলোয় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জুটিবদ্ধ এ পর্বত যুগল। এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন অগণিত পর্যটক।

আরেক দেশ নেপাল। এই নেপালেই বিশ্বের সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা নবীন পর্বতশ্রেণীর পর্বতমালা হিমালয়। পৃথিবীর ছাদও বলা হয়ে থাকে এ পর্বতটিকে। এশিয়ার তিব্বতীয় মালভূমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে হিমালয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটান এশিয়ার এই ছয় দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ভারত-নেপালের নিকটতম হওয়ায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোখে দেখা মেলে এখানকার যেকোনো স্থানে দাঁড়ালে।

ভারতের আরেক সৌন্দর্যের স্বপ্ন পুরী দার্জিলিং। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে শহরটি। পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি এই দার্জিলিংয়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা মেলে অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ১শ ফুট (২,১৬৪.১ মিটার) উচ্চতা হওয়ায় হিমালয়ের সঙ্গে জড়াজড়ি থাকায় দেখা মেলে মেঘের দেশ ও পাহাড়ে ঘেরা অপূর্ব চিরহরিৎ ভূমি দার্জিলিং। রাতে দেখা যায় শিলিগুড়ির উজ্জ্বল আলোও। বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর দিনের প্রথম সূর্যোদয়ের আলোকরশ্মিতে ঝিকিমিকি দৃশ্য সত্যিই মুগ্ধতার মোহ ছড়ায়। এ তিনটি অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে শীতের সকাল-সন্ধ্যায়।

ইট-কংক্রিটের শহরে যারা গরমের তিক্ততায় অতিষ্ঠ হয়ে শীতের পরশ নিতে চাচ্ছেন, তারা ঘুরে আসতে পারেন দেশের সীমান্ত জেলায়। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশে জেলাটির অবস্থান হওয়ায় ‘হিমকন্যা’ নামেও খ্যাত। পর্যটকদের কাছেও শীত উপভোগের শহর হয়ে উঠেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়।

এসব ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, শতশত বছরের পুরাকীর্তি। ইংরেজ আমলের ডাক বাংলো, পিকনিক কর্নারে নির্মিত বিভিন্ন কৃত্রিম ভাস্কর্য, স্বাধীনতার ইতিহাস রচিত অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর, চার দেশের স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন, ভারত-বাংলাদেশের দুই সীমান্তরক্ষীবাহিনীর মনোজ্ঞ প্যারেড প্রদর্শন, ভিনদেশি টিউলিপ চাষ, আনন্দধারা রিসোর্ট, দক্ষিণ এশিয়ার দুর্গ প্রত্নতত্ত্ব নগরী, ইতিহাস গাঁথায় প্রাচীন মহারাজা দিঘী, পাথরের জাদুঘর, বার আউলিয়া মাজার, শাহী মসজিদ, ইমাম বাড়া, গোলকধাম মন্দির, ময়নামতি চর, চীন মৈত্রী সেতু, বদ্বেশরী মহাপীঠ মন্দিরসহ নানান দর্শনীয় স্থান।

যেভাবে যাওয়া যাবে

দেশের যেকোনো জেলা শহর থেকেই যাওয়া যাবে পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি আন্ত:রেল। ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত যান, একতা এক্সপ্রেস, বাংলা বান্ধা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস। এছাড়াও রয়েছে হানিফ, শ্যামলী, ডিপজল, খালেকসহ বিভিন্ন এসি-নন এসি দূরপাল্লার বাস। সৈয়দপুর পর্যন্ত আসা যাবে আকাশ পথেও। পর্যটন শহরে এসে ঘুরাঘুরির জন্য ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার পাওয়া যাবে।

থাকা-খাওয়ার হোটেল রেস্টুরেন্ট

থাকা ও খাওয়ার জন্য রয়েছে উন্নতমানের হোটেল-রেস্তোরা। পঞ্চগড়ের ডায়নামিক স্থান যেহেতু তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়াতে পাওয়া যাবে উন্নত আবাসিকের মধ্যে ইএসডিওর মহানন্দা কটেজ, অফিসারস ভবন, দোয়েল আবাসিক, স্বপ্ন গেস্ট হাউজসহ বেশ কয়েকটি নর্মাল আবাসিক। খাওয়ার জন্য রয়েছে ঘরোয়া রান্নার বাংলা হোটেল, নুরজাহান হোটেল, শাপলা, ভাইভাই আরও বেশ কয়েকটি।

নিরাপত্তার দিক থেকে জেলাটির বেশি সুনাম রয়েছে। সার্বক্ষণিক রয়েছে প্রশাসনিক নজরদারী, টুরিস্ট পুলিশ জোন ও থানা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

তেঁতুলিয়ায় দেখা মিলছে ৩ দেশের সৌন্দর্য

আপডেট সময় ০২:২১:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২

উত্তরের পর্যটনের জেলা মানেই সীমান্ত ঘেঁষা পঞ্চগড়। হাড়কাঁপুনি ঠান্ডা মধ্যেই সীমান্তজুড়ে রূপের পসরা বসিয়েছে এই জেলা।  এখানে পা রাখলেই দেখা মিলছে তিন দেশের সৌন্দর্য। অনেকটা এক ঢিলে তিন পাখি।

এ জেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা দেখতে পাওয়া। কিছুদিন কুয়াশায় ঢাকা থাকার পর আবারও দেখা দিয়েছে এই পর্বতমালা। শুক্রবার সকাল থেকেই দিনভর দেখা মিলছে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার মহনীয় সৌন্দর্য। সূর্যোদয়ের রুপালী আলোয় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জুটিবদ্ধ এ পর্বত যুগল। এ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন অগণিত পর্যটক।

আরেক দেশ নেপাল। এই নেপালেই বিশ্বের সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা নবীন পর্বতশ্রেণীর পর্বতমালা হিমালয়। পৃথিবীর ছাদও বলা হয়ে থাকে এ পর্বতটিকে। এশিয়ার তিব্বতীয় মালভূমি থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে পৃথক করেছে হিমালয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভুটান এশিয়ার এই ছয় দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ভারত-নেপালের নিকটতম হওয়ায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোখে দেখা মেলে এখানকার যেকোনো স্থানে দাঁড়ালে।

ভারতের আরেক সৌন্দর্যের স্বপ্ন পুরী দার্জিলিং। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে ছবির মতো দাঁড়িয়ে আছে শহরটি। পৃথিবীর বিখ্যাত প্রার্থনা স্থান ঘুম মোনাস্ট্রি এই দার্জিলিংয়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা মেলে অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ১শ ফুট (২,১৬৪.১ মিটার) উচ্চতা হওয়ায় হিমালয়ের সঙ্গে জড়াজড়ি থাকায় দেখা মেলে মেঘের দেশ ও পাহাড়ে ঘেরা অপূর্ব চিরহরিৎ ভূমি দার্জিলিং। রাতে দেখা যায় শিলিগুড়ির উজ্জ্বল আলোও। বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর দিনের প্রথম সূর্যোদয়ের আলোকরশ্মিতে ঝিকিমিকি দৃশ্য সত্যিই মুগ্ধতার মোহ ছড়ায়। এ তিনটি অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে শীতের সকাল-সন্ধ্যায়।

ইট-কংক্রিটের শহরে যারা গরমের তিক্ততায় অতিষ্ঠ হয়ে শীতের পরশ নিতে চাচ্ছেন, তারা ঘুরে আসতে পারেন দেশের সীমান্ত জেলায়। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার পাদদেশে জেলাটির অবস্থান হওয়ায় ‘হিমকন্যা’ নামেও খ্যাত। পর্যটকদের কাছেও শীত উপভোগের শহর হয়ে উঠেছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়।

এসব ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, শতশত বছরের পুরাকীর্তি। ইংরেজ আমলের ডাক বাংলো, পিকনিক কর্নারে নির্মিত বিভিন্ন কৃত্রিম ভাস্কর্য, স্বাধীনতার ইতিহাস রচিত অপ্রতিরোধ্য বাংলা জাদুঘর, চার দেশের স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন, ভারত-বাংলাদেশের দুই সীমান্তরক্ষীবাহিনীর মনোজ্ঞ প্যারেড প্রদর্শন, ভিনদেশি টিউলিপ চাষ, আনন্দধারা রিসোর্ট, দক্ষিণ এশিয়ার দুর্গ প্রত্নতত্ত্ব নগরী, ইতিহাস গাঁথায় প্রাচীন মহারাজা দিঘী, পাথরের জাদুঘর, বার আউলিয়া মাজার, শাহী মসজিদ, ইমাম বাড়া, গোলকধাম মন্দির, ময়নামতি চর, চীন মৈত্রী সেতু, বদ্বেশরী মহাপীঠ মন্দিরসহ নানান দর্শনীয় স্থান।

যেভাবে যাওয়া যাবে

দেশের যেকোনো জেলা শহর থেকেই যাওয়া যাবে পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি আন্ত:রেল। ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত যান, একতা এক্সপ্রেস, বাংলা বান্ধা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস। এছাড়াও রয়েছে হানিফ, শ্যামলী, ডিপজল, খালেকসহ বিভিন্ন এসি-নন এসি দূরপাল্লার বাস। সৈয়দপুর পর্যন্ত আসা যাবে আকাশ পথেও। পর্যটন শহরে এসে ঘুরাঘুরির জন্য ব্যাটারি চালিত ভ্যান, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার পাওয়া যাবে।

থাকা-খাওয়ার হোটেল রেস্টুরেন্ট

থাকা ও খাওয়ার জন্য রয়েছে উন্নতমানের হোটেল-রেস্তোরা। পঞ্চগড়ের ডায়নামিক স্থান যেহেতু তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়াতে পাওয়া যাবে উন্নত আবাসিকের মধ্যে ইএসডিওর মহানন্দা কটেজ, অফিসারস ভবন, দোয়েল আবাসিক, স্বপ্ন গেস্ট হাউজসহ বেশ কয়েকটি নর্মাল আবাসিক। খাওয়ার জন্য রয়েছে ঘরোয়া রান্নার বাংলা হোটেল, নুরজাহান হোটেল, শাপলা, ভাইভাই আরও বেশ কয়েকটি।

নিরাপত্তার দিক থেকে জেলাটির বেশি সুনাম রয়েছে। সার্বক্ষণিক রয়েছে প্রশাসনিক নজরদারী, টুরিস্ট পুলিশ জোন ও থানা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা।