ঢাকা ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অবৈধ ভাবে গোয়াইনঘাট নদীর পার থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে ভবন জুলাই অভ্যুত্থানে শাহবাগের সবচেয়ে বড় মিছিল ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের – বাকের সাদ্দাম-ইনানসহ ঢাবি থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১২৮ জন বহিষ্কার জাবির ৬ নং ছাত্র হল প্রশাসনের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত জবির দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করল ঢাবি কুবিতে নোয়াখালী ছাত্রকল্যাণ পরিষদের দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গফরগাঁয়ে মাটিকাটা নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব, নিহত ১ একাত্তরে আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু স্বাধীনতা পাইনি -আমির ডা. তাহের নারায়ণগঞ্জে মাদক নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা কেশবপুর খ্রিস্টান মিশন থেকে তিন পাহাড়ি মেয়েকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী 

দিনে দিনে কমে যাচ্ছে মকতবের শিক্ষা ব্যবস্থা

শীত হোক কিংবা গরম ভোর হলেই ঘুম থেকে উঠে যেতে হত মকতবে।তবে ধীরে ধীরে মকতবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে শিশুরা মোবাইল,ল্যাপটপ, কম্পিউটার,ইন্টারনেট ইত্যাদি এগুলোর প্রতি আসক্তি বেড়েছে এবং আধুনিক শিক্ষার প্রতি বাবা-মায়ের বাড়তি নজর শিশুদের মকতব থেকে আলাদা করছে।

মকতব গুলোতে কায়দা,আমপারা,চল্লিশটির মত হাদিস পাঠদান, নজরানা, মাসনুন দোয়া, মাসআলা মাসায়েল, তাজবীদ, আক্বীদা বিষয়ক প্রথমিক পাঠদান সহ বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে মক্তব একটি প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা। এতে শিক্ষকরা তাদের সামনে মেঝেতে বসা ছাত্রদের শিক্ষাদান করতেন। ইসলাম ও ধ্রুপদি আরবি ভাষা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে কুরআন মুখস্থ করানোর প্রতি মূল মনোযোগ দেয়া হত। আধুনিক স্কুলের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে মক্তবের সংখ্যা কমে গিয়েছে।

মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে মক্তব বলা হত। এগুলোর সময়কাল ১০ শতক। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার মত মক্তবগুলোও মসজিদের সাথে সংযুক্ত থাকত
মক্তবের ব্যয় নির্বাহের জন্য উপমহাদেশে সুলতানি ও মুঘল শাসনামলে লাখেরাজ সম্পদের ব্যবস্থা করা হত। এই ব্যবস্থাকে মদদ-ই-মাশ নামে বলা হত।

১১ শতকে বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও শিক্ষক ইবনে সিনা তার একটি বইয়ে মক্তবে কর্মরত শিক্ষকদের দিক নির্দেশনার জন্য একটি অধ্যায় রচনা করেন যার নাম ছিল “শিশুদের প্রশিক্ষণ ও বেড়ে তোলায় শিক্ষকের ভূমিকা”।
ইবনে সিনা লিখেছেন যে শিশুদেরকে ৬ বছর বয়সে মক্তবে পাঠানো উচিত এবং ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা দিতে হবে ও এ সময়ের মধ্যে তাদের কুরআন, ইসলামী
অধিবিদ্যা, ভাষা, সাহিত্য, ইসলামী নীতিবিদ্যা ও অন্যান্য দক্ষতা, যেমন বিভিন্ন ব্যবহারিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হবে।

মকতবের প্রতি শিশুদের অনাগ্রহের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে নিয়ামতপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হা. মাও. মুফতি মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষাকে মানুষ আলাদা চোখে দেখে কিন্তু দুইটি এক ও অবিভিন্ন কেননা পৃথিবীতে বসবাসের জন্য আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে আখেরাতের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও অর্জন করতে হবে। সর্বপ্রথম করণীয় হলো প্রত্যেক পিতামাতাকে আগে সতর্ক করা তারপর শিশুদেরকে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তাদের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করে মক্তব সম্পর্কে তাদেরকে বলা এবং তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য প্রত্যেক মহল্লার দায়িত্বশীল যারা আছেন তাদের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয় সোহরাওয়ার্দী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফেজ মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা যেহেতু মুসলিম পরিবারের সন্তান আমাদের প্রত্যেকের উচিত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহন করা,কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষার প্রবনতা দিন কি দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অবহেলা। পিতা মাতার অসচেতনতা। আমাদের আধুনিক জীবন নিয়ে আমরা এতই মুগ্ধ হয়ে আছি যে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ নেই বল্লেই চলে। এইটার দূরকরণ হিসেবে পিতা মাতা যারা আছে তাদের সন্তানকে মুক্তবমুখী করতে হবে। মাদরাসা মুখী হতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় বাসায় উস্তাদ (হুজুর) দ্বারা ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে হবে। ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানা আমাদের প্রত্যেকটা মুসলমানের উপর ফরজ। আর তার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অবৈধ ভাবে গোয়াইনঘাট নদীর পার থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে ভবন

দিনে দিনে কমে যাচ্ছে মকতবের শিক্ষা ব্যবস্থা

আপডেট সময় ০৮:৩৩:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শীত হোক কিংবা গরম ভোর হলেই ঘুম থেকে উঠে যেতে হত মকতবে।তবে ধীরে ধীরে মকতবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে শিশুরা মোবাইল,ল্যাপটপ, কম্পিউটার,ইন্টারনেট ইত্যাদি এগুলোর প্রতি আসক্তি বেড়েছে এবং আধুনিক শিক্ষার প্রতি বাবা-মায়ের বাড়তি নজর শিশুদের মকতব থেকে আলাদা করছে।

মকতব গুলোতে কায়দা,আমপারা,চল্লিশটির মত হাদিস পাঠদান, নজরানা, মাসনুন দোয়া, মাসআলা মাসায়েল, তাজবীদ, আক্বীদা বিষয়ক প্রথমিক পাঠদান সহ বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে মক্তব একটি প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা। এতে শিক্ষকরা তাদের সামনে মেঝেতে বসা ছাত্রদের শিক্ষাদান করতেন। ইসলাম ও ধ্রুপদি আরবি ভাষা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে কুরআন মুখস্থ করানোর প্রতি মূল মনোযোগ দেয়া হত। আধুনিক স্কুলের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে মক্তবের সংখ্যা কমে গিয়েছে।

মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে মক্তব বলা হত। এগুলোর সময়কাল ১০ শতক। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার মত মক্তবগুলোও মসজিদের সাথে সংযুক্ত থাকত
মক্তবের ব্যয় নির্বাহের জন্য উপমহাদেশে সুলতানি ও মুঘল শাসনামলে লাখেরাজ সম্পদের ব্যবস্থা করা হত। এই ব্যবস্থাকে মদদ-ই-মাশ নামে বলা হত।

১১ শতকে বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ও শিক্ষক ইবনে সিনা তার একটি বইয়ে মক্তবে কর্মরত শিক্ষকদের দিক নির্দেশনার জন্য একটি অধ্যায় রচনা করেন যার নাম ছিল “শিশুদের প্রশিক্ষণ ও বেড়ে তোলায় শিক্ষকের ভূমিকা”।
ইবনে সিনা লিখেছেন যে শিশুদেরকে ৬ বছর বয়সে মক্তবে পাঠানো উচিত এবং ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা দিতে হবে ও এ সময়ের মধ্যে তাদের কুরআন, ইসলামী
অধিবিদ্যা, ভাষা, সাহিত্য, ইসলামী নীতিবিদ্যা ও অন্যান্য দক্ষতা, যেমন বিভিন্ন ব্যবহারিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হবে।

মকতবের প্রতি শিশুদের অনাগ্রহের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে নিয়ামতপুর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হা. মাও. মুফতি মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষাকে মানুষ আলাদা চোখে দেখে কিন্তু দুইটি এক ও অবিভিন্ন কেননা পৃথিবীতে বসবাসের জন্য আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে আখেরাতের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও অর্জন করতে হবে। সর্বপ্রথম করণীয় হলো প্রত্যেক পিতামাতাকে আগে সতর্ক করা তারপর শিশুদেরকে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তাদের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করে মক্তব সম্পর্কে তাদেরকে বলা এবং তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য প্রত্যেক মহল্লার দায়িত্বশীল যারা আছেন তাদের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয় সোহরাওয়ার্দী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাফেজ মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা যেহেতু মুসলিম পরিবারের সন্তান আমাদের প্রত্যেকের উচিত ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহন করা,কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষার প্রবনতা দিন কি দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অবহেলা। পিতা মাতার অসচেতনতা। আমাদের আধুনিক জীবন নিয়ে আমরা এতই মুগ্ধ হয়ে আছি যে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ নেই বল্লেই চলে। এইটার দূরকরণ হিসেবে পিতা মাতা যারা আছে তাদের সন্তানকে মুক্তবমুখী করতে হবে। মাদরাসা মুখী হতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় বাসায় উস্তাদ (হুজুর) দ্বারা ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে হবে। ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানা আমাদের প্রত্যেকটা মুসলমানের উপর ফরজ। আর তার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।