বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) গোপনে সিন্ডিকেট সভা আহ্বানের অভিযোগ ও আওয়ামী পূনর্বাসনের অভিযোগ এনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিভিন্ন সড়ক প্রাদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, দালাল ভিসির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, এক দফা একদাবি ভিসি তুই কবে যাবি, এক দুই তিন চার ভিসি তুই গদি ছাড়, দালাল ভিসির আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এসময় তারা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন এবং এসব দাবির প্রেক্ষিতে তারা একদফার ঘোষনা দিয়ে বলেন, ভিসি যদি এসব দাবির প্রেক্ষিতে তার অবস্থান পরিস্কার না করেন তাহলে তাকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
তাদের আন্দোলনের কারণ জিজ্ঞেস করলে আন্দোলনকারীরা ৬ টি বিষয় উল্লেখ করে বলেন – ১.মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিয়ম বহির্ভূত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিস্ট্রারকে বহাল রেখে অসাধু সুবিধা দেওয়ার জন্য পাতানো গোপন সিন্ডিকেট সভার আহ্বান।
২.২৯শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নৃশংস হামলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের আগাম জামিন পাওয়া ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ না হওয়া।
৩.নিয়মবহির্ভূত ভাবে ২জন সিন্ডিকেট সদস্যকে বাদ দিয়ে চিহ্নিত আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের নিয়ে পাতানো গোপন সিন্ডিকেটের নাটক মঞ্চস্থ করা।
৪.আইন,সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের স্বপদে বহাল রেখে মূল পদে আনার কুচক্রী পায়তারা চালানো।
৫.গত ৬ মাসেও ২২ দফার কোনরকম প্রতিফলন করতে ব্যর্থ হওয়া।
৬.ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের অবাধ বিচরণ, মাদক সেবন ও ভাঙচুরের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনপ্রকার পদক্ষেপ গ্রহন করতে ব্যর্থ হওয়া।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে
রসায়ন বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, “কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন, ভিসি-বিরোধী একটি আন্দোলন হয়েছিল। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল। ভিসি বলেছিলেন, তিনি সেই শর্তগুলো পূরণ করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি কোনো কথাই রাখেননি। সেই ভিত্তিতেই আজ আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি। আমরা এর কোনো ব্যাখ্যা চাই না—আমাদের এক দফা, এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ।”
এছাড়াও রসায়ন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মোস্তফা রহমান বলেন,
“বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সর্বস্তরে ফ্যাসিবাদের দোষরদের পূনর্বাসনের যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বর্তমান ভিসি তা দিবালোকের ন্যায় প্রতীয়মান। প্রশাসনের অভ্যন্তরে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পূণপ্রতিষ্ঠিত করার এ ষড়যন্ত্র ছাত্রসমাজ কখনোই মেনে নেবে না। ভিসির এরুপ স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের প্রতিবাদস্বরুপ আমরা ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি।”
এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিয়মবহির্ভূতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সিন্ডিকেট সদস্যকে বাদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড.শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৪৯ তম একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে তাদের বাদ দেয়ার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপাচার্য ঐ দুই সদস্যকে শিক্ষার্থীদের দাবির কথা উল্লেখ করে এককভাবে বাদ দেয়ার সিন্ধান্ত নেন বলে জানান একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য । অপসারণ হওয়া দুজন সিন্ডিকেট সদস্য হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ উদ্দীন এবং সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া।