ঢাকা ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি নেতার দখলে বসতবাড়ি, ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটায়

আলিফা খাতুনের (২৫) সম্বল তার মায়ের দেওয়া সাড়ে ৮ শতক বসতবাড়ি। কিন্তু সেই বাড়ির প্রায় ৪ শতক জায়গা দখল করে ইটভাটার খোলা বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে সেই খোলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাচা ইট। ফলে স্বামী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আলিফা।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও চান্দাইকোনা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলিফা খাতুন তার মায়ের দানপত্র দলিল মূল্যে পাওয়া ওই বাড়িতে স্বামী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। কিন্তু সম্প্রতি বাড়ির পাশে থাকা সান ব্রিকস নামের ইটভাটার মালিক আবু হানিফ বাড়িতে লাগানো ২০-২৫টি বনজ ও ফলজ গাছ কেটে নেন। এতে আলিফা খাতুনের প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাই হাজীপুর গ্রামে। এ ঘটনায় প্রতিকার পেতে গত ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানায় অভিযোগ করেন আলিফা খাতুন।
ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, গাছগুলো কাটার পর মাটি কাটার যন্ত্র (এস্কেভেটর) দিয়ে বাড়ির জায়গা সমতল করে জোরপূর্বক ভাটার খোলা বানান আবু হানিফ খান। এসব কাজে বাধা দিতে গেলে হানিফ ও তার লোকজন গালমন্দ করে হুমকি দেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবু হানিফ একজন বিএনপি নেতা। তিনি অবৈধভাবে ওই ভাটা পরিচালনা করছেন। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতিও হন। শুধু তাই নয়, তিনি অবৈধভাবে সান ব্রিকস নামে ইটভাটা তৈরি করছেন। ওই ভাটার কোনো অনুমতি নেই। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চলছে ভাটা। তবুও পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
তবে বসতবাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আবু হানিফ বলেন, ওই ইটভাটা ২৮ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। আমার এত জায়গা থাকতে আমি কেন অন্যের বাড়ি দখল করে ভাটার খোলা বানাবো। আলিফা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে যা করতে পারে করুক।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম বলেন, ওই উপজেলায় বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে। আমরা কিছু অভিযোগও পেয়েছি। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হবে।প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম বলেন, ওই উপজেলায় বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে। আমরা কিছু অভিযোগও পেয়েছি। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

বিএনপি নেতার দখলে বসতবাড়ি, ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটায়

আপডেট সময় ০৪:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

আলিফা খাতুনের (২৫) সম্বল তার মায়ের দেওয়া সাড়ে ৮ শতক বসতবাড়ি। কিন্তু সেই বাড়ির প্রায় ৪ শতক জায়গা দখল করে ইটভাটার খোলা বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে সেই খোলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাচা ইট। ফলে স্বামী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আলিফা।
ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও চান্দাইকোনা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলিফা খাতুন তার মায়ের দানপত্র দলিল মূল্যে পাওয়া ওই বাড়িতে স্বামী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। কিন্তু সম্প্রতি বাড়ির পাশে থাকা সান ব্রিকস নামের ইটভাটার মালিক আবু হানিফ বাড়িতে লাগানো ২০-২৫টি বনজ ও ফলজ গাছ কেটে নেন। এতে আলিফা খাতুনের প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাই হাজীপুর গ্রামে। এ ঘটনায় প্রতিকার পেতে গত ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানায় অভিযোগ করেন আলিফা খাতুন।
ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, গাছগুলো কাটার পর মাটি কাটার যন্ত্র (এস্কেভেটর) দিয়ে বাড়ির জায়গা সমতল করে জোরপূর্বক ভাটার খোলা বানান আবু হানিফ খান। এসব কাজে বাধা দিতে গেলে হানিফ ও তার লোকজন গালমন্দ করে হুমকি দেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবু হানিফ একজন বিএনপি নেতা। তিনি অবৈধভাবে ওই ভাটা পরিচালনা করছেন। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতিও হন। শুধু তাই নয়, তিনি অবৈধভাবে সান ব্রিকস নামে ইটভাটা তৈরি করছেন। ওই ভাটার কোনো অনুমতি নেই। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চলছে ভাটা। তবুও পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
তবে বসতবাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে আবু হানিফ বলেন, ওই ইটভাটা ২৮ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। আমার এত জায়গা থাকতে আমি কেন অন্যের বাড়ি দখল করে ভাটার খোলা বানাবো। আলিফা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে যা করতে পারে করুক।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম বলেন, ওই উপজেলায় বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে। আমরা কিছু অভিযোগও পেয়েছি। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হবে।প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম বলেন, ওই উপজেলায় বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা চালু রয়েছে। আমরা কিছু অভিযোগও পেয়েছি। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হবে।