কুমিল্লা জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-এর নেতৃত্বে একটি যৌথ অভিযান চালিয়ে হোটেল ভিশন সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানটি পরিচালিত হয় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে, যেখানে হোটেলটির অবৈধ কার্যক্রম ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হোটেল ভিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, এটি অবৈধভাবে মাদকসেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। হোটেলটির বিভিন্ন রুমে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠে আসে। পাশাপাশি, এখানে কিছু অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে এক্সিকিউটি ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা জাহান ও জেলা প্রশাসন কুমিল্লা রতন কুমার নেতৃত্বে তারা হোটেলটির বিভিন্ন দিক পরিদর্শন করে আট জনকে আটক করা হয়। তার মধ্যে ছয় জন নারী ও দুই জন পুরুষ ছিলো। পরবর্তীতে তাদের আটক করে ২০ দিন ও এ
১ মাসের সবশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। ৬ জন নারীকে বিশ দিন করে এবং দুই জন পুরুষকে ১ মাসের সাজা প্রদান করা হয়।
অবৈধ কার্যক্রম: হোটেলটি অবৈধভাবে মাদক সেবন এবং অশ্লীল কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু রুমে অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার ফলে হোটেলটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন: হোটেলটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নিতান্ত অপ্রতুল, যেখানে আগুন নির্বাপন ব্যবস্থা, নিরাপত্তা গার্ড, ও অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থাপনা ছিল না।
কুমিল্লা উপজেলা প্রশাসক এক্সিকিউটি ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা জাহান সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, কুমিল্লা জেলার সকল হোটেল এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আইন ও নিয়ম-নীতি মেনে চলবে। এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে। তাই, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই অভিযানটি একটি সতর্ক বার্তা, যাতে ভবিষ্যতে অন্যান্য হোটেল এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও সচেতন হয় এবং তারা আইন মেনে চলে।”
জেলা প্রশাসন কুমিল্লা রতন কুমার সাংবাদিকদের বলেন, “হোটেল ভিশন সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসছিল, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আজকের অভিযানে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই হোটেলটি এলাকাবাসীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এখানে উপস্থিত সকল কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
হোটেল ভিশন বন্ধ করার পর স্থানীয় বাসিন্দারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এই ধরনের অভিযান কুমিল্লার সমাজে নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকার জন্য বিপজ্জনক ছিল। আমরা আশা করি প্রশাসন এই ধরনের আরও অভিযান চালাবে, যাতে আমাদের এলাকার পরিবেশ পরিষ্কার ও নিরাপদ থাকে।”
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে হোটেল ভিশন বন্ধ করার মাধ্যমে প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে প্রশাসন আরও একটি বার্তা দিয়েছে যে, তারা অবৈধ কার্যক্রম এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবে এবং কুমিল্লার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আইন মেনে চলতে বাধ্য করবে।