প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন মানবজীবনকে সহজ, দক্ষ এবং কার্যকর করে তুলছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশ এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ২০২৫ সাল বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি জগতে এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে। যেসব উদ্ভাবন, এ বছর প্রযুক্তিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে তাই নিয়ে আজকের আয়োজন।
এআই এজেন্ট: স্বয়ংক্রিয়করণের এক নতুন ধারা
ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কাজ সহজ করতে আসছে মাইক্রোসফটের নতুন এআই এজেন্ট। এটি ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজড এআই এজেন্ট তৈরির সুযোগ দেবে। গ্রাহকসেবা, বিক্রয় এবং প্রশাসনিক কাজগুলো এজেন্ট নিজে নিজেই সম্পন্ন করবে। প্রচলিত চ্যাটবট থেকে এআই এজেন্টের পার্থক্য হলো, এটি ব্যবহারকারীর নির্দেশনার অপেক্ষা না করে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সময় ও খরচ বাঁচাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মাল্টিফাংশনাল রোবট: দক্ষতার নতুন সংজ্ঞা
একাধিক কাজ করতে সক্ষম বহুমুখী রোবট আগামী বছর শিল্প ও স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। আমাজন ও সিমেন্স এ ধরনের রোবট তৈরিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এ রোবটগুলো প্যাকেজিং, উৎপাদন সহায়তা, জীবাণুমুক্তকরণ এবং অন্যান্য কাজে দক্ষ। স্বাস্থ্যখাতে অস্ত্রোপচার কিংবা রোগীর সেবা প্রদানে এ ধরনের রোবট ভবিষ্যতে আরও কার্যকর হতে পারে।
পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি: সাইবার সুরক্ষার ভবিষ্যৎ
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত এনক্রিপশন পদ্ধতি হুমকির মুখে পড়ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি উদ্ভাবন চলছে। গুগল, আইবিএম এবং মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টরা কোয়ান্টাম আক্রমণ প্রতিরোধী অ্যালগরিদম তৈরি করছে। ২০২৫ সাল হতে পারে এ প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যবহারের শুরু। এটি সাইবার সুরক্ষায় একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করবে।
ডিসইনফরমেশন সিকিউরিটি: মিথ্যা তথ্যের প্রতিরোধ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের প্রসার রোধে মেটা এবং এক্স (সাবেক টুইটার) ইতোমধ্যে এআইভিত্তিক ডিসইনফরমেশন সিকিউরিটি প্রযুক্তি চালু করেছে। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে সত্যতা যাচাই, ভুয়া প্রচারণা বন্ধ করা এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণে ২০২৫ সাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে এ প্রযুক্তি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
হাইব্রিড কম্পিউটিং: প্রযুক্তির সমন্বিত ভবিষ্যৎ
সাধারণ কম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সমন্বয়ে তৈরি হাইব্রিড কম্পিউটিং ২০২৫ সালে আরও আলোচনায় আসবে। এটি জটিল ডেটা বিশ্লেষণ, মার্কেট ট্রেন্ড প্রেডিকশন এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোতে কার্যকর সমাধান প্রদান করবে। আইবিএম ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এ প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে। এটি বিভিন্ন শিল্পখাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
২০২৫ সালে এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবন আমাদের জীবন ও কাজের ধরনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রা মানবজাতির সম্ভাবনাকে আরও উন্মোচন করবে।