উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যাতায়াত সহজ করতে জামালপুরে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ফেরিঘাট টার্মিনাল। তবে এর সুফল পাচ্ছেন না জেলাবাসী। অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে টার্মিনাল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে নাব্য সংকটে আড়াই বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি ফেরি চলাচল। তাই এই নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যমুনা নদী পারাপার হচ্ছেন। দুর্ভোগ লাঘবে ফেরি চালু করে টার্মিনালটি সচল করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিন বাহাদুরবাদ ঘাটে দেখা যায়, নদীতে কয়েকটি ছোট নৌকা যাত্রী পারাপার করছে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত প্রতিটি নৌকায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। নৌকার ওপরে ছাউনি নেই। নেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। বালুচর জেগে ওঠায় কর্তৃপক্ষ মূল ঘাট থেকে দূরে ঘাট স্থাপন করেছে। যাত্রীদের কেউ গাড়িতে করে আবার কেউবা হেঁটে ঘাটে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৩৮ সালে যমুনা নদীতে জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট থেকে গাইবান্ধার বালাসীঘাট পর্যন্ত রেলফেরি চালু করে বৃটিশ সরকার। সে সময় স্বল্প খরচ আর অল্প সময়ে যাত্রী পারপার, কৃষিপণ্য, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি ফেরিতে রেলগাড়ি পারাপার করা হতো। ২০০১ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর এই নৌপথে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। নদীর দুই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কমাতে আবারও বাহাদুরাবাদ-বালাসী ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ)। ২০১৮ সালে দুই পাড়ে নৌ টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে।
কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ১৭৫ কোটি টাকায় নির্মিত প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল। তবে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং না করায় ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌপথে আড়াই বছরেও শুরু হয়নি ফেরি চলাচল। এতে যাত্রী ও পণ্য পারাপারে দুর্ভোগ লাঘবের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় এই পথে নিয়মিত চলাচলকারীদের। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে প্রতিদিন দীর্ঘ এই নদীপথ পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা।
কার্যক্রম না থাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট টার্মিনাল। দূরপাল্লার বাস, ছোট-বড় যানবাহনের পার্কিং, টোলঘর, চালক ও যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার, রেস্তোরাঁ, টয়লেট, ফায়ার সার্ভিস, নিরাপত্তা ব্যারাকসহ সবধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও টার্মিনালের স্থাপনাগুলো দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।এই রুটে প্রায়ই গাইবান্ধা যান জামালপুর দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা শামীম মিয়া (৫০)। তিনি বলেন, ‘বেশি ভাড়া দিয়ে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। গরমের দিনে রোদে পুড়ে যেতে হয়। শীতের দিনে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগে। নদী পার হতে আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না।’স্ত্রী ও তিন বছরের শিশুসন্তানসহ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে নদী পার হন মুতাসিম বিল্লাহ। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে বাহাদুরবাদ ঘাট থেকে লঞ্চ চলাচল করেছে। এখন মাঝনদীতে লঞ্চ আটকে আছে।
নাগরিক অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, রাস্তা প্রশস্ত না করে, অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিং করায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প সাধারণ মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। টার্মিনাল সচল করতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ নৌ ঘাটের টিকিট মাস্টার মো. সোবাহান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ঘাটটি যারা ইজারা নিয়েছেন তারা ৫ আগস্টের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন। মূলত অপরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং করায় টার্মিনালটি অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, নাব্য সংকটে ঘাটের কোনো কার্যকারিতা নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।