বিগত তিন-চার দিনের তুলনায় আজ সন্ধ্যার কর্ণিশ এলাকা একটু ভিন্ন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা থেকেই কর্ণিশ মেট্রোর সামনে ভিড়। সবাই ছুটছেন ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালের দিকে। চারিদিকে উৎসবের আমেজ। সময় যত গড়াচ্ছিল উৎসবের রং ততই বাড়ছিল। কাতার বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি ফিফা ফ্যান জোন রয়েছে। কর্ণিশ চত্বরের জোনটিই মূলত আসল।
আজ লক্ষাধিক সমর্থকের আগমন ছিল এই ফিফা জোনে। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেছেন। এক মিনিটের সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী বক্তব্যের সম্বোধন করেছেন আরবিতে ‘আহলান, সাহলান কাতার’। ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালকে তিনি বিশ্বকাপের প্রাণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফিফা সভাপতির সঙ্গে উদ্বোধনী মঞ্চে ছিলেন এই বিশ্বকাপের অন্যতম দূত ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কাফুও।
বিগত দিন চারেক আগেও বিশ্বকাপ আসরকে লাগছিল নিষ্প্রাণ। সেটা আজ সন্ধ্যার পরই প্রাণ ফিরে পায়। বিভিন্ন দেশের সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে বিশ্বকাপ তার আসল চেহারা ফিরে পায়।
লক্ষাধিক সমর্থকের মধ্যে কাতারে অবস্থান করা প্রবাসীর সংখ্যাই বেশি চোখে পড়েছে। এর বাইরে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিল ল্যাতিন আমেরিকানদের। ফিফা ফ্যান ফেস্টে আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি দেখা গেছে ব্রাজিলের তুলনায়। আমেরিকা অঞ্চলের অন্য দেশ মেক্সিকো এবং চিলিরও উল্লেখ সংখ্যক দর্শক ছিল। আমেরিকার পর দর্শক উপস্থিতি বেশি ছিল আফ্রিকার। সেই তুলনায় ইউরোপের দর্শক তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। হল্যান্ড ও স্পেন ছাড়া অন্য দেশের জার্সি পড়া কাউকে সেভাবে দেখা যায়নি।
হল্যান্ডের সমর্থক অসাস্টিনের এ নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ দেখার অভিজ্ঞতা। অন্য বিশ্বকাপের থেকে এই বিশ্বকাপের মধ্যে তিনি তেমন পার্থক্য দেখেন না, ‘এখানে ভালোই উৎসব হচ্ছে। পার্থক্য শুধু এবার একটি শহরেই খেলা। এছাড়া তেমন কিছু নয়।’
আর্জেন্টিনা থেকে আসা সমর্থক রদ্রিগো অবশ্য মাঠের উৎসবই বড় মনে করেন, ‘সারাবিশ্ব থেকে মানুষ এসেছে মাঠের খেলা দেখতে। সেটাই আসল। সমর্থকদের উৎসবের ধরন সব জায়গায় প্রায় একই।’
স্টেডিয়ামে প্রবেশের আগে অ্যালকোহল কিংবা বিয়ার নিষিদ্ধ করেছে কাতার ও ফিফা। এ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালে অ্যালকোহল রয়েছে। বিভিন্ন দেশের সমর্থকরা অ্যালকোহল পান করছেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দর্শকরা একসঙ্গে বিয়ারে চুমুক দিয়ে মেসি-নেইমার চিৎকার করে মাতিয়ে তুলেন ফেস্টিভ্যাল চত্বর।
অ্যালকোহলের পাশাপাশি স্বল্প পোষাকধারীদের ওপরও বিধি-নিষেধ ছিল কাতারের। ফ্যান ফেস্টিভ্যালে খুব বেশি স্বল্প পোষাকধারী সমর্থক ছিলেন না। ল্যাতিন ও ইউরোপের স্বাভাবিক পোষাকে ছিলেন বেশিরভাগই।
ফিফা সভাপতি দশ সেকেন্ড কাউন্টডাউন করেন। দশ সেকেন্ড পরেই লাখো করতালিতে ফ্যান ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের পর বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সং ‘হায়া হায়া’ বাজতে শুরু করে। এরপর চলতে থাকে আরও অনেক সংগীত। বিগত বিশ্বকাপের চেয়ে এই সংগীত সমর্থকদের টেনেছে খানিকটা কমই। তারা নিজেদের মতো করেই বিশ্বকাপের আগমন উদযাপন করেছেন।