কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের ভার্চুয়াল স্টেডিয়ামের সুবিশাল কক্ষ। বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের সেই কক্ষে প্রবেশের তাড়াহুড়ো। এই কক্ষেই যে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন।
প্রায় এক হাজারের মত আসন। নির্ধারিত সময়ের আগেই আসন অনেকটা পরিপূর্ণ। ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো একাই এলেন সাংবাদিক সম্মেলনে। পাশে শুধু একজন মিডিয়া ম্যানেজার। বড় মঞ্চে তারা দুজনই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বা ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির সংবাদ সম্মেলনের পুরো বিপরীত চিত্র।
বিশ্বকাপের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলন। সেই সম্মেলনে ফুটবল ও বিশ্বকাপ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। তার ৪৫ মিনিট বক্তব্যের প্রায় পুরোটাই কাতারের সঙ্গে চলা পাশ্চাত্য বিশ্বের সমালোচনার জবাব। বিশ্বকাপ স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু, পারিশ্রমিক বকেয়া সহ নানা বিষয় অভিযোগ রয়েছে কাতারের উপর। ফিফা সভাপতি তার বক্তব্যে অন্য কাতারের চিত্র তুলে ধরেছেন, ‘এই কাতারে অনেক প্রবাসী তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের প্রবাসীদের উপর নির্ভরশীল।’
ইনফান্তিনো সুইস ও ইতালিয়ান দ্বৈত নাগরিক। নিজে ইউরোপিয়ান হয়েও মানবাধিকার রক্ষায় তিনি ইউরোপ ও আমেরিকাকে প্রশ্নের দিকে ঠেলেছেন, ‘আফগানিস্তান তালেবান ক্যু হওয়ার পর মহিলা ফুটবলাররা শঙ্কিত ছিল। তখন আমি কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে জানাই। তিনি ১৬০ জন মহিলা ফুটবলারকে কাতার নিয়ে আসেন। সেটা কিন্তু অন্য কোনো দেশ করেনি।’ এই প্রসেঙ্গ তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপ যাওয়ার পথে অনেক শরণার্থী মৃত্যুবরণ করে। আমরা দ্বার বন্ধ করে রাখি।’
সারা বিশ্বে কাতারকে নিয়ে চলা সমালোচনা বন্ধ করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব ফুটবল বিশ্বকাপেই একত্রিত হয়। দয়া করে এটাকে বিভক্ত করবেন না। কোনো সমালোচনা করতে হলে ফিফার করুন, আমাকে নিয়ে করুন; কাতারকে নয়, খেলোয়াড়দের নিয়ে নয়। তাদের খেলায় মনোযোগ দিতে দিন।’
ফিফার সাবেক সভাপতি সেপ ব্লাটার কাতারকে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হতে দেওয়া তার ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ নিয়ে বর্তমান সভাপতির মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। ইউরোপের অনেক দেশ কাতার বিশ্বকাপ বর্জন করছে সামাজিক ও মানবাধিকারের কারণে। বর্জনের বিশ্বকাপ কাতার এই প্রসঙ্গে ইনফান্তিনোর উত্তর, ‘আপনি যদি ফুটবল ভালোবাসেন , অবশ্যই বিশ্বকাপ দেখবেন।’
কাতারের বিশ্বকাপকে আরেক দিক থেকে অনন্য হিসেবে উল্লেখ করে ফিফা সভাপতি বলেন, ‘বিগত বিশ্বকাপগুলো বিভিন্ন শহরে হয়েছে। ফলে একই শহরে সব দর্শকের আগমন ঘটত না। এবারই প্রথম একটি শহরে সকল দর্শক আসছে। এক বিশ্ব বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটা এই বিশ্বকাপেই হচ্ছে। সবাই এক সঙ্গে এক জায়গায় থাকছে।’