আল সাদ ক্লাবের স্টেডিয়ামে জাপান দলের অনুশীলন ভেন্যু। ক্লাবের প্রশাসনিক অফিস এখন বিশ্বকাপের হায়া কার্ড সেন্টার। বিশ্বকাপ চলাকালে তাই কাতারের শীর্ষ এই ক্লাব অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের একাডেমি মাঠে। ক্লাবের তারকা খেলোয়াড়রা অনুশীলনের মাঝে ইশারা দিয়ে ডাকছেন। দৌড়ে মাঠে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ইমরান, হাসানরা।
কাতারের সবচেয়ে সফল ক্লাব আল সাদ। বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা জাভি হার্নান্দেজ সাদে খেলায় ক্লাবের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে আরো বহুগুণে। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে জাভির ৬ বছর কেটেছে কাতারের আল সাদে। সেই সময় জাভির সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন সাদ ক্লাবে কর্মরত বাংলাদেশিরাও।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ছেলে হাসান। ক্লাবের টিম এটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। খেলোয়াড়, কোচ সবার খাওয়ার পরই তারা খাওয়ার সুযোগ পান। কোচ জাভির চোখের নজরে থাকতেন তারাও, ‘আমরা আসলে কাজের ব্যস্ততায় পরেই খেতাম। অনেক সময় জাভি ডেকে আমাদের খাওয়াতেন। সংকোচ বোধে অনেক সময় যেতাম না। তিনি সেই সংকোচ দূরে ঠেলে কাছে টেনে নিতেন ’ বেশ গর্বের সঙ্গে বলেন হাসান ৷
স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক জাভি। বার্সেলোনার সোনালী সময়ের অন্যতম স্তম্ভও তিনি। মেসির বিশ্বসেরা হয়ে উঠার পেছনেও যার রয়েছে অসামান্য অবদান তার বিনয়ীভাব মুগ্ধ করেছে আল সাদের বাংলাদেশি কর্মীদের, ‘কখনো মনে হয়নি তিনি বিশ্বের এত বড় তারকা, এত খ্যাতি, অর্থ। আমরা ভিন দেশি, ফুটবলারও না, এরপরও আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশতেন।’
আল সাদ ক্লাবে বাংলাদেশি কর্মরতের সংখ্যা ত্রিশের বেশি। টিম বয়, ড্রাইভার থেকে শুরু করে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছেন দুই একজন। টিমের ইকুইপমেন্ট ও ফ্যাসিলিটিজের দেখভাল করেন বাংলাদেশের মোঃ ইমরান হোসেন। এই দায়িত্ব থাকায় জাভির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতাও ছিল অনেক, ‘আল সাদ ক্লাবে দীর্ঘদিনই রয়েছি। জাভির সঙ্গে কাটানো ছয়টি বছর দারুণ ছিল। তিনি এত বড় তারকা কিন্তু মিশতেন খুবই সাধারণের মতো। যে কোনো বিষয়ে পরামর্শ চাইতেন আবার আমরাও অনেক কিছু উৎসাহী হয়ে বলতাম।’ দলের সঙ্গে থাকায় ইমরানের সুযোগ হয়েছে স্পেন, অস্ট্রিয়া ভ্রমণ করার। আবার অনেক সময় এসি মিলান সহ আরো অনেক বড় ক্লাবও এসেছে আল সাদে প্রীতি ম্যাচ খেলতে। ফলে বিশ্ব তারকাদের সঙ্গেই কেটেছে তার সময়।
ত্রিশের অধিক কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র জাফর। যিনি প্রায় তিন যুগ এই ক্লাবে কাজ করছেন। টিম অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে শুরু করে ধাপে ধাপে উন্নতি করে এখন ক্লাবের ট্রান্সপোর্ট বিভাগের অন্যতম প্রধান। ক্লাবের ১৫০ গাড়ির তত্ত্বাবধায়কও তিনি। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় এই ক্লাবে কাটিয়ে অনেক কিংবদন্তির সাক্ষাতের স্মৃতি স্মরণ করলেন এভাবে, ‘ম্যারাডোনা কাতারে এক সফরে এসেছিল। তখন তার সঙ্গে দুই দিন খুব ঘনিষ্ঠভাবে ছিলাম। জিদান, রোনালদিনহোর সাথেও প্রায় এক মাস সময় কাটানো হয়েছে। জাভি তো আমাদের ক্লাবেরই ছেলে। এখন স্পেন গেলেও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’