বাংলাদেশ থেকে কাতারের ফ্লাইট ঘণ্টা পাঁচেকের একটু বেশি। খানিকটা দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণ ক্লান্তি কেটে যায় নিমিষেই হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখতেই। ইমিগ্রশেন, কাস্টমস, লাগেজ বেল্ট সহ সর্বত্রই বিশ্বকাপের ছোঁয়া। লোগো সম্বলিত বড় বোর্ড, কোথাও আবার মেসি, রোনালদো, নেইমারদের ছবি।
এস্কেলেটর দিয়ে ওঠা-নামা করতে হলেও বিশ্বকাপের আবহে সময় চলে যায় নিমিষেই। ইমিগ্রেশনও হয় চোখের পলকেই। ইমিগ্রেশন অফিসাররা বেশ কয়েকটি বুথে রয়েছেন। এদের পাশাপাশি আছে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন গেট। যেখানে পাসপোর্ট স্ক্যানের পর একটু সামনে এগোলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি গ্রহণেই শেষ ইমিগ্রেশন। কাতার আগতদের নিজেদের এই কাজ করতে মিনিট এক-দুইয়ের বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না।
অন্য সময়ের তুলনায় বিশ্বকাপের সময় লাগেজ বেল্টেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু কম সময়ের মধ্যেই যাত্রীদের ব্যাগেজ মিলছে। এক সঙ্গে অনেক যাত্রীর ততোধিক ব্যাগেজ থাকলেও ভিড় নেই কাস্টমসে। বিমান থেকে নামার পর সব মিলিয়ে মিনিট বিশের মধ্যে বিমানবন্দর ত্যাগ করা যায়। দোহার মতো ঢাকার বিমানবন্দরেও বিশ্বকাপ উপলক্ষে যাত্রীরা পাচ্ছেন যথেষ্ট সম্মান।
হামাদ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে আগ্রহীদের বিনা পয়সায় সিম কার্ড সংগ্রহের সুযোগ আছে। মোবাইল কোম্পানি ওরেডো ফ্রিতে হায়াকার্ডধারীদের সিম সরবরাহ করছে। এই সিমের সুযোগ সুবিধাও বিশ্বকাপের সঙ্গে মিল রেখে ‘ ২০২২’।
বিমানবন্দর থেকে বের হলেই চোখে পড়বে গাড়ির সারি। প্রায় সবই বিশ্বকাপের রঙে রঙিন। প্রধান সড়কগুলো সেজেছে বিশ্বকাপ উপলক্ষে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পতাকা। এখন পর্যন্ত কাতারে আবাসিক এলাকায় কোনো দলের পতাকা উড়তে দেখা যায়নি। এদিক থেকে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের চেয়ে ‘এগিয়ে’।
কাতারের মূল সড়কে লোকজন হাঁটাচলা করে খুবই কম। প্রায় সবাই গাড়িতে চড়েন আবার অনেকে গণপরিবহণে। ফলে রাস্তাঘাটে বাংলাদেশের মতো খেলাধুলা নিয়ে গল্প-আড্ডা সেভাবে নেই। তবে যানবাহন, কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই আলোচনায় ফুটবল।
গত বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কাতারে শীত ছিল৷ শীতল আবহাওয়া বিবেচনা করে জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে নভেম্বর-ডিসেম্বরে আয়োজন হচ্ছে বিশ্বকাপ। এখন পর্যন্ত সেই শীতের আবহ আসেনি। রাতেও তাপমাত্রা ২৭-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে৷ দিনে সেটা ত্রিশের বেশি।
বিশ্বকাপ ফুটবল ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর। এই প্রতিযোগিতা কাভার করতে ইতোমধ্যে কয়েকশ’ সাংবাদিক হাজির হয়েছেন দোহায়। সকাল থেকে মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেশন কালেকশন সেন্টারে ব্যস্ততা। এখানেও বেশ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা। দশটি বুথে খুব দ্রুততম সময়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড গ্রহণ করছেন সাংবাদিকরা।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সংগ্রহ কেন্দ্রের পাশেই কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার (কিউএনসিসি)। এখানেই অবস্থিত সুবিশাল মিডিয়া সেন্টার। নিচে ও উপরে দুই স্তরে রয়েছে কয়েক হাজার আসন। প্রেস কনফারেন্স কক্ষ, ভার্চুয়াল স্টুডিও থেকে শুরু করে রয়েছে সবই। ডেনমার্কের ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইটের সাংবাদিক প্যাট্রিক অভিভূত এই আয়োজনে, ‘আরো দু’টি বিশ্বকাপ কাভার করেছি। সেখানে মিডিয়া সেন্টারে এত বিশালতা ছিল না।’
প্যাট্রিক অভিভূত হলেও ইউরোপের অনেক দেশ এখনো কাতারকে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হিসেবে মানতে পারছে না। এখনো আন্দোলন-সমালোচনা চলছে। কাতার অবশ্য সেই দিকে তেমন ভ্রুক্ষেপ করছে না। বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্টদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদানে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কাতারের এই প্রয়াসে পশ্চিমাদের মন কতটুকু ভরে সেটাই দেখার বিষয়!