ঢাকা ১১:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট টঙ্গীতে যুবতীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ জাজিরায় মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু তারেক রহমানের নেতৃত্বেই স্বৈরাচারের পতনের মধ্যদিয়ে দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে: মোস্তফা জামান বিচারের আগে আওয়ামী লীগের কোনো পূর্ণবাসন নয় – হাসনাত আবদুল্লাহ পাঁচবিবিতে মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে আলোচনা সভায় গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও বৈদেশিক নীতির সরলীকরণ: ভোলার হত্যা মামলার পলাতক আসামী ঢাকায় র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার কাশিমপুরে চলছে জমজমাট মেলা নষ্ট হচ্ছে বাচ্চাদের লেখাপড়া। তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান—বেলাবতে আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা করছে ‘অর্থপাচার’, দিচ্ছে কর ফাঁকি

বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশি শ্রমিকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণের অবৈধ বিদেশি কর্মী কাজ করছেন, যাদের কোনও ওয়ার্ক পারমিট নেই। তারা কোথায়, কোন কারখানায়, কী কাজ করছেন, কত টাকা বেতনে কাজ করছেন তারও কোনও হিসাব নেই। এর ফলে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।

সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনও বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কোনও ধরনের কাজ করতে আগ্রহী হলে তাকে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে কাজের জন্য অনুমতি বা ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নিতে হবে। বিদেশি কর্মীদের ই-ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এই অনুমতি দেবে। বিডার অনুমতি পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই-টিআইএন এবং ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। এই হিসাবে বিদেশি কর্মীর বেতন জমা হবে।

একই সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি কর্মীদের আয়কর রিটার্নও দাখিল করার বিধান রয়েছে। অথচ এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে, সরকারকে তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।

গত ২৪ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী লিখিতভাবে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিরা ১৩০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার নিজ নিজ দেশে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে ভারতীয়রা তাদের দেশে নিয়ে গেছেন ৫০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার।

অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বাৎসরিক আয় সংশ্লিষ্ট তথ্য বাংলাদেশে ব্যাংকেও সংরক্ষিত নেই। এর ফলে ধারণা করা যায় বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিদের দেশে পাঠানো টাকার পরিমাণ আরও বেশি।

এদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করতে গত ২৮ মে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব বিদেশি কর্মী কীভাবে ও কোন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশের বাইরে পাঠায়, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একটি রিট আবেদনের পর অর্থসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর নাগাদ বাংলাদেশে বৈধভাবে বসবাস করছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫৯২ জন বিদেশি নাগরিক। দেশের প্রায় ১ হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করছেন তাদের অনেকেই। এসব প্রতিষ্ঠানকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও কয়েক হাজার হতে পারে।

তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সে বিষয়ে সরকারের কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও এনজিও ব্যুরোর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর কোনোটির কাছেই বিদেশিদের সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। এক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে অন্যটির তথ্যেও কোনও মিল নেই।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অডিটের দায়িত্ব পালন করেন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর সদস্য জসীম উদ্দিন। এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস বলেন, বাংলাদেশে কাজ করছেন এমন বিদেশি কর্মীর অনেকের হয়তো ভিসা আছে, কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট নেই। কাজেই নিয়ম অনুযায়ী তার এখানে কাজ করার অনুমতি থাকার কথা নয়। প্রথমত এটার একটা সংখ্যা নিরূপণ করা জরুরি। কোন সেক্টরে কারা, কীভাবে কাজ করছেন তা জানা দরকার।

২০২০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি কর্মী কর্মরত তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে। তাদের মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকই বেশি। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, চামড়া শিল্প, চিকিৎসাসেবা এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁয়ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি কাজ করছে। এদের বড় একটা অংশ ভ্রমণ ভিসায় এসেছে, ফলে তাদের কাজের অনুমতি নেই। এ রকম অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ ভিসা নিয়ে অবস্থান করা বিদেশিরা প্রতি তিন মাস পরপর নিজ দেশে ফিরে যায়, এরপর দ্রুত নতুন পর্যটন ভিসা নিয়ে এসে একই বা একই ধরনের কাজে যোগদান করে। তাদের এই কৌশলের ফলে সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হন।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, তুরস্ক, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৪টি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত আছে। এর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে ভারতের নাগরিকরাই সবচেয়ে এগিয়ে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এনবিআরে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিদেশিদের এই কর ফাঁকি অনুসন্ধানে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশের এসবি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর (এনএসআই), বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এ টাস্কফোর্সের কাজ ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে কর ফাঁকিবাজ বিদেশিদের চিহ্নিত করা এবং কর্মরত বিদেশিদের ডাটাবেজ তৈরি করা। তবে টাস্কফোর্স তাদের কাজ এখনও শতভাগ শেষ করতে পারেনি। বিডা, এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরাও এর সঙ্গে যুক্ত আছেন।

বিদেশিদের আয়করের আওতায় আনতে না পারার জন্য সরকারের দুর্বল নজরদারি ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদেশিরা কেন, কী কাজে বাংলাদেশে এসেছেন, কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোর তথ্য সমন্বয় জরুরি। এনবিআরের কাছে বিদেশি উদ্যোক্তা নিয়ে তথ্য থাকলেও বিদেশি কর্মীদের বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য নেই। বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও এনজিও ব্যুরো-এই তিন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মীদের কাজ করার অনুমতি দেয়। পোশাক, বস্ত্র, চামড়াসহ বেসরকারি শিল্প খাতের জন্য বিডা, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বেপজা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় বিদেশিদের কাজ করার অনুমতি দেয় এনজিও ব্যুরো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিকের তথ্য থাকলেও আয়কর দেন এমন বিদেশির সংখ্যা ১৪ হাজার।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর সরকারের নজরদারি খুবই দুর্বল। এছাড়া বিদেশি কর্মীদের কাজের অনুমতি দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে কর আদায়ে আইন থাকলেও তার খুব একটা প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রমেও গতি নেই। টাস্কফোর্সের অন্তর্ভুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় এতদিনেও গতি পায়নি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম। এমনকি বিমানবন্দরগুলোতে বিদেশি কর্মীদের জন্য আয়কর বুথ চালুর কথা থাকলেও সেটিও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে খুব সহজেই ভ্রমণ ভিসায় এসে নানা কাজে যুক্ত হতে পারছে বিদেশিরা।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশি কর্মীরা ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে। কর ফাঁকি দিয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। মোট আড়াই লাখ বিদেশি কর্মীর মাধ্যমে এটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৯০ হাজার ছিল বৈধ কর্মী, বাকিরা আসেন পর্যটন ভিসায়।

এতদিনেও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম কেন গতি পায়নি সে প্রসঙ্গে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যখনই ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, তখন দেখা যায় বাংলাদেশে বিদেশি যারা কাজ করছে তারা, না হয় ওই প্রকল্পের বিনিয়োগকারী অথবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের কাছ থেকে অদৃশ্য চাপ আসে। এ কারণে হঠাৎ করেই সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে বিদেশি নাগরিকদের প্রকৃত সংখ্যাই এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিতেও রয়েছে ভিন্ন তথ্য।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট জসীম উদ্দিন আরও জানিয়েছেন, যেসব বিদেশি কর্মী যথাযথ নিয়ম মেনে বাংলাদেশে এসে কাজ করেন, তারা যদি প্রথম বছর বাংলাদেশে ১৮২ দিন বা তার বেশি অবস্থান করেন, তাহলে আয়কর আইনে নিবাসী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এর সুবিধা হলো একজন বাংলাদেশি ব্যক্তি করদাতা যে হারে কর দেন, সেই একই হারে বিদেশি কর্মীও কর দেওয়ার সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু যারা বৈধভাবে এসেও বছরে ১৮২ দিন থাকতে পারেন না, তাদের অনিবাসী ধরা হয় এবং তাদের মোট আয়ের ওপর সরাসরি ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। যেমন বিদেশ থেকে শিল্পীরা বাংলাদেশে এসে কনসার্ট করেন। ফিরে যাওয়ার আগে তাদের অবশ্যই ৩০ শতাংশ হারে কর পরিশোধের নিয়ম আছে। যে প্রতিষ্ঠান তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে, তারা টাকা পরিশোধ করার সময় উৎসে করের টাকা কেটে বাকি টাকা তাদের পরিশোধ করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব আহরণই এনবিআরের মূল কাজ। সেক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের জন্য যা করার প্রয়োজন হবে এনবিআর তাই করবে। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম চলছে। এটিকে আরও জোরদার করা হবে। বিদেশি নাগরিকরা সরকারকে তার প্রাপ্য রাজস্ব ফাকি দেওয়ার চেষ্টা করলে তা রোধ করা হবে।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া জানিয়েছেন, কোনও রকমের ঝামেলা ছাড়াই যেকোনও দেশের নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করার আগ্রহী হলে সে নিবন্ধিত হতে পারে। কিন্তু কোনও বিদেশি নাগরিক যদি বিডার অনুমতি না নিয়ে কাজ করে তা খুঁজে বের করা বিডা’র জন্য খুবই কষ্টকর। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সোচ্চার হতে হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা করছে ‘অর্থপাচার’, দিচ্ছে কর ফাঁকি

আপডেট সময় ০৫:৫৫:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশি শ্রমিকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণের অবৈধ বিদেশি কর্মী কাজ করছেন, যাদের কোনও ওয়ার্ক পারমিট নেই। তারা কোথায়, কোন কারখানায়, কী কাজ করছেন, কত টাকা বেতনে কাজ করছেন তারও কোনও হিসাব নেই। এর ফলে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।

সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনও বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কোনও ধরনের কাজ করতে আগ্রহী হলে তাকে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে কাজের জন্য অনুমতি বা ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নিতে হবে। বিদেশি কর্মীদের ই-ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) এই অনুমতি দেবে। বিডার অনুমতি পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ই-টিআইএন এবং ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। এই হিসাবে বিদেশি কর্মীর বেতন জমা হবে।

একই সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি কর্মীদের আয়কর রিটার্নও দাখিল করার বিধান রয়েছে। অথচ এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে, সরকারকে তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।

গত ২৪ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী লিখিতভাবে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিরা ১৩০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার নিজ নিজ দেশে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে ভারতীয়রা তাদের দেশে নিয়ে গেছেন ৫০ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার।

অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বাৎসরিক আয় সংশ্লিষ্ট তথ্য বাংলাদেশে ব্যাংকেও সংরক্ষিত নেই। এর ফলে ধারণা করা যায় বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশিদের দেশে পাঠানো টাকার পরিমাণ আরও বেশি।

এদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করতে গত ২৮ মে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব বিদেশি কর্মী কীভাবে ও কোন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশের বাইরে পাঠায়, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একটি রিট আবেদনের পর অর্থসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর নাগাদ বাংলাদেশে বৈধভাবে বসবাস করছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫৯২ জন বিদেশি নাগরিক। দেশের প্রায় ১ হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করছেন তাদের অনেকেই। এসব প্রতিষ্ঠানকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও কয়েক হাজার হতে পারে।

তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা কতো সে বিষয়ে সরকারের কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও এনজিও ব্যুরোর মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর কোনোটির কাছেই বিদেশিদের সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। এক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে অন্যটির তথ্যেও কোনও মিল নেই।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অডিটের দায়িত্ব পালন করেন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর সদস্য জসীম উদ্দিন। এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস বলেন, বাংলাদেশে কাজ করছেন এমন বিদেশি কর্মীর অনেকের হয়তো ভিসা আছে, কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট নেই। কাজেই নিয়ম অনুযায়ী তার এখানে কাজ করার অনুমতি থাকার কথা নয়। প্রথমত এটার একটা সংখ্যা নিরূপণ করা জরুরি। কোন সেক্টরে কারা, কীভাবে কাজ করছেন তা জানা দরকার।

২০২০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি কর্মী কর্মরত তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে। তাদের মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকই বেশি। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, চামড়া শিল্প, চিকিৎসাসেবা এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁয়ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি কাজ করছে। এদের বড় একটা অংশ ভ্রমণ ভিসায় এসেছে, ফলে তাদের কাজের অনুমতি নেই। এ রকম অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ ভিসা নিয়ে অবস্থান করা বিদেশিরা প্রতি তিন মাস পরপর নিজ দেশে ফিরে যায়, এরপর দ্রুত নতুন পর্যটন ভিসা নিয়ে এসে একই বা একই ধরনের কাজে যোগদান করে। তাদের এই কৌশলের ফলে সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হন।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, তুরস্ক, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪৪টি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত আছে। এর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে ভারতের নাগরিকরাই সবচেয়ে এগিয়ে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এনবিআরে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিদেশিদের এই কর ফাঁকি অনুসন্ধানে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশের এসবি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর (এনএসআই), বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এ টাস্কফোর্সের কাজ ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে কর ফাঁকিবাজ বিদেশিদের চিহ্নিত করা এবং কর্মরত বিদেশিদের ডাটাবেজ তৈরি করা। তবে টাস্কফোর্স তাদের কাজ এখনও শতভাগ শেষ করতে পারেনি। বিডা, এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরাও এর সঙ্গে যুক্ত আছেন।

বিদেশিদের আয়করের আওতায় আনতে না পারার জন্য সরকারের দুর্বল নজরদারি ও বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদেশিরা কেন, কী কাজে বাংলাদেশে এসেছেন, কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোর তথ্য সমন্বয় জরুরি। এনবিআরের কাছে বিদেশি উদ্যোক্তা নিয়ে তথ্য থাকলেও বিদেশি কর্মীদের বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য নেই। বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও এনজিও ব্যুরো-এই তিন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মীদের কাজ করার অনুমতি দেয়। পোশাক, বস্ত্র, চামড়াসহ বেসরকারি শিল্প খাতের জন্য বিডা, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বেপজা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় বিদেশিদের কাজ করার অনুমতি দেয় এনজিও ব্যুরো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিকের তথ্য থাকলেও আয়কর দেন এমন বিদেশির সংখ্যা ১৪ হাজার।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের ওপর সরকারের নজরদারি খুবই দুর্বল। এছাড়া বিদেশি কর্মীদের কাজের অনুমতি দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে কর আদায়ে আইন থাকলেও তার খুব একটা প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রমেও গতি নেই। টাস্কফোর্সের অন্তর্ভুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় এতদিনেও গতি পায়নি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম। এমনকি বিমানবন্দরগুলোতে বিদেশি কর্মীদের জন্য আয়কর বুথ চালুর কথা থাকলেও সেটিও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে খুব সহজেই ভ্রমণ ভিসায় এসে নানা কাজে যুক্ত হতে পারছে বিদেশিরা।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশি কর্মীরা ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে। কর ফাঁকি দিয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। মোট আড়াই লাখ বিদেশি কর্মীর মাধ্যমে এটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৯০ হাজার ছিল বৈধ কর্মী, বাকিরা আসেন পর্যটন ভিসায়।

এতদিনেও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম কেন গতি পায়নি সে প্রসঙ্গে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যখনই ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, তখন দেখা যায় বাংলাদেশে বিদেশি যারা কাজ করছে তারা, না হয় ওই প্রকল্পের বিনিয়োগকারী অথবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের কাছ থেকে অদৃশ্য চাপ আসে। এ কারণে হঠাৎ করেই সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে বিদেশি নাগরিকদের প্রকৃত সংখ্যাই এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিতেও রয়েছে ভিন্ন তথ্য।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট জসীম উদ্দিন আরও জানিয়েছেন, যেসব বিদেশি কর্মী যথাযথ নিয়ম মেনে বাংলাদেশে এসে কাজ করেন, তারা যদি প্রথম বছর বাংলাদেশে ১৮২ দিন বা তার বেশি অবস্থান করেন, তাহলে আয়কর আইনে নিবাসী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এর সুবিধা হলো একজন বাংলাদেশি ব্যক্তি করদাতা যে হারে কর দেন, সেই একই হারে বিদেশি কর্মীও কর দেওয়ার সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু যারা বৈধভাবে এসেও বছরে ১৮২ দিন থাকতে পারেন না, তাদের অনিবাসী ধরা হয় এবং তাদের মোট আয়ের ওপর সরাসরি ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। যেমন বিদেশ থেকে শিল্পীরা বাংলাদেশে এসে কনসার্ট করেন। ফিরে যাওয়ার আগে তাদের অবশ্যই ৩০ শতাংশ হারে কর পরিশোধের নিয়ম আছে। যে প্রতিষ্ঠান তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে, তারা টাকা পরিশোধ করার সময় উৎসে করের টাকা কেটে বাকি টাকা তাদের পরিশোধ করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব আহরণই এনবিআরের মূল কাজ। সেক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের জন্য যা করার প্রয়োজন হবে এনবিআর তাই করবে। সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ‘ডাটা ব্যাংক’-এর কার্যক্রম চলছে। এটিকে আরও জোরদার করা হবে। বিদেশি নাগরিকরা সরকারকে তার প্রাপ্য রাজস্ব ফাকি দেওয়ার চেষ্টা করলে তা রোধ করা হবে।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া জানিয়েছেন, কোনও রকমের ঝামেলা ছাড়াই যেকোনও দেশের নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করার আগ্রহী হলে সে নিবন্ধিত হতে পারে। কিন্তু কোনও বিদেশি নাগরিক যদি বিডার অনুমতি না নিয়ে কাজ করে তা খুঁজে বের করা বিডা’র জন্য খুবই কষ্টকর। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সোচ্চার হতে হবে।