আন্তর্জালে একটা ‘মিম’ প্রায়শই ঘুরে ফিরে সামনে চলে আসে। টাইম ট্র্যাভেলার চেয়ার একটু সরালেই যেখানে বাস্তবতার টাইমলাইনটাই বদলে যায়।
আজ বিশ্বকাপের ফাইনালে যখন মুখোমুখি ইংল্যান্ড আর পাকিস্তান, তখন সেই ‘মিমটা’ আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। যখন সুতোয় ঝুলছিল ইংলিশ আর পাকিস্তানিদের ভাগ্য, তখন ‘টাইম ট্র্যাভেলার একটু চেয়ারটা সরালেই’ যে পরিস্থিতিটা বদলে যেতে পারত! ফাইনালে খেলতে পারত অন্য কেউ! দুই দলের আজকের ফাইনালটার তাই তুলনা চলে কেবল রোলার-কোস্টার রাইডের সঙ্গেই।
পাকিস্তানের পথটাই ধরুন। ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচে হারল বাবর আজমের পাকিস্তান। তবে ভারতের কাছে না বলে বিরাট কোহলির কাছে বললেও বোধ হয় বিশেষ ভুল হয়ে যায় না বিষয়টা। সেদিন যে কোহলির অতিমানবীয় এক ইনিংসের কাছেই হেরে বসেছিল পাকিস্তান!
এরপর জিম্বাবুয়ের কাছে যখন হারল, তখন তো পাকিস্তানের বিদায় প্রায় নিশ্চিতই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে!
এখানেও যদি শেষ না হয়। তাহলে ধরতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটা। জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর সেমিফাইনালের যাওয়ার আশাটাও টিকিয়ে রাখতে হলে জিততে হতো প্রতিটি ম্যাচে। নেদারল্যান্ডসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সে কাজের প্রথম ধাপটা উতরেও গিয়েছিল পাকিস্তান।
বিপত্তিটা বাঁধল পরের ম্যাচে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৪৮ রানে খুইয়ে বসল পাঁচ উইকেট! সেখান থেকে পাকিস্তান শেষ চারে যাবে, তেমন আশাটাও করেছিলেন ক’জন পাকিস্তান সমর্থক?
তবে অনুমিত সব ফলই যদি ঘটে দলের সঙ্গে, তাহলে আর দলটার নাম পাকিস্তান কেন? পাকিস্তান সেটা হতে দেয়নি আদৌ। সেখান থেকে ফিরে প্রোটিয়াদের হারাল ৩৩ রানে।
পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলতে ভাগ্যেরও প্রয়োজন ছিল। ডুবন্ত সৈনিক যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে হলেও বাঁচতে চায়, পাকিস্তানও আঁকড়ে ধরেছিল বৈকি! কিন্তু পাকিস্তান সেই খরকুটো আঁকড়ে ধরেই বেঁচে গেল ডুবে যাওয়ার হাত থেকে! ধারে ভারে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দ. আফ্রিকাকে যে নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দেবে, সেটাই বা কয় জন ভাবতে পেরেছিলেন? পাকিস্তান মহামূল্য সেই ভাগ্যের ছোঁয়াটাও পেয়ে গেল।
এরপর আর পরিস্থিতিটা ভাগ্যের হাতে তুলে দেয়নি দলটি। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন ভেঙে আর শেষ চারে নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে এসেছে ফাইনালে।
ফাইনালে বাবর আজমরা যাদের মুখোমুখি, সেই ইংল্যান্ডের পথটাও কি কম রোমাঞ্চে ভরা ছিল? আফগানদের হারালেও দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে বসে জস বাটলারের দল। এরপর যখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা ভেসে গেল বৃষ্টিতে, তখন বিদায়ের শঙ্কাই রীতিমতো নাড়া দিয়ে বসেছিল জস বাটলারের দলকে। তিন ম্যাচ শেষে যে তাদের পয়েন্টের খাতায় যোগ হয়েছিল মোটে ৩ পয়েন্ট!
সেখান থেকে ইংল্যান্ড আর পেছন ফিরে তাকায়নি। নিউজিল্যান্ডকে ২০ আর শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে দলটি। পাকিস্তানের মতো ইংলিশরাও সেমিফাইনাল জিতেছে একপেশেভাবে। তবে ইংলিশদের মেজাজটা তাদের জয়ের অহমটা বাড়িয়েছে বহুগুণে।
১৭০ ছোঁয়া লক্ষ্য যে বাটলার আর অ্যালেক্স হেলস মিলে তুলে ফেলেছিলেন ১৬ ওভারেই!
চলতি বিশ্বকাপে দুই দল যেভাবে খেলেছে, তাতে তাদের মিল অনেক বেশি। দুই দলই বিশ্বকাপের শুরুটা করেছিল নড়বড়েভাবে। দুই দলই সেমিফাইনাল জিতেছে দোর্দণ্ড প্রতাপে। এবার ফাইনালে মুখোমুখি যখন সেই দুই দল, তখন তা ফাইনালে যোগ করছে বাড়তি রোমাঞ্চ, অন্তত ম্যাচের আগে তো বটেই! মেলবোর্নের হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটা এখন বাগড়া না দিলেই হয়!