ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল ঘিরে এখনও চাঁদাবাজির তান্ডব চালাচ্ছে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন গোলাম মোস্তফা  মিঠাপুকুরে এমপিএইসভিওয়ের ১১তম বর্ষে পদার্পন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মঠবাড়িয়া আসনে লড়তে চান ক্যানাডা প্রবাসী ব্যারিস্টার আলমগীর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ৫ দফা কর্মসূচি ঘোষণা মঠবাড়িয়ার দাউদখালী ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত ফসলের সাথে শত্রুতা, ১১ বিঘা আলু গম সরিষা হালচাষ দিয়ে নষ্ট করলো প্রতিপক্ষ ইসলামী দলগুলোকে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতায় গেছে আ.লীগ: চরমোনাই পীর উচাই কৃষি কলেজে নবীন-বরণ জাফলং পিয়াইন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২৪ এর ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত নাটোরের বড়াইগ্রাম সময় টিভির অফিশিয়াল স্টাফ রিপোর্টার এর বাড়িতে আগুনে লেগে এক শিশুর মৃত্যু

প্রান্তিক আয়ের মানুষের আর্তনাদ কেউ কি শুনছে?

শ্রীলঙ্কার আর্থিক অস্থিরতার আগে আমাদের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভেবেছিল দেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা নেই, দ্রব্যমূল্যের দামবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে (কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব)-এর বক্তব্যকে বিরোধী দলের বক্তব্য বলে উড়িয়ে দিতেন।

আমরা যখন সাধারণ খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবন-জীবিকা নিয়ে কষ্টে আছি বলতাম সরকারি দলের নেতারা বলতেন বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উপনীত হতে চলেছে এবং সব মানুষের আয় বেড়েছেকর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ইত্যাদি বক্তব্য দিয়ে আমাদের বক্তব্যের উল্টো যুক্তি প্রদর্শন করতেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা সুর বদলালেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে অতি মুনাফাকারীদের চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অজানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নিত্যপণ্য নিয়ে এই অস্থিরতা প্রলম্বিত হচ্ছে মাসের পর মাস। আর এই অশুভ চর্চা চক্রাকারে সবগুলো খাদ্যপণ্যের বাজারে সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে।

যার কারণে সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর তা নিজেরা কার্যকর করতে না দিয়ে ৪ সপ্তাহের মাথায় আবার ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও বাজারে বিগত দিনের মতো সরবরাহ বন্ধ করে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও করে দেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে অতি মুনাফাকারীদের চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অজানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নিত্যপণ্য নিয়ে এই অস্থিরতা প্রলম্বিত হচ্ছে মাসের পর মাস।

বাজারে পথে ঘাটে গেলে বিভিন্ন ভোক্তাদের সাথে যখনই কথা হয়সবাই এখন একবাক্যে বলে থাকেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য পত্রিকা ও টেলিভিশনে বলার পরও দাম বাড়ে কেন?’। একজন বলেই ফেললেন, ‘ভাই দ্রব্যমূল্য ছাড়া অন্য বিষয়ে বলেনব্যবসায়ীরা সরকারের কথা শুনছে নাআর আপনাদের কথাতো কেয়ার-ই করবে না।’

আসলেই তো সত্যিই আমরা যখন দাম বাড়ার কথা বলি তখন তারা নানা যুক্তি নিয়ে আসেন। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে প্রধানত করোনা মহামারির প্রভাবইউক্রেন যুদ্ধজ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যপরিবহন খরচডলারের বিনিময় হার ব্যাপক বেড়ে যাওয়া দায়ী করেন। কিন্তু এই অজুহাত সব জায়গায় কি সমভাবে প্রযোজ্য?

ব্যবসায়ীরা আবার নতুন এক অজুহাত দেখাতে শুরু করেছেনতাহলো আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় এবং ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমে গেছে। এটাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। আবার দোকান ভাড়াগ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বাড়ায় তাদের মুনাফা কমেছে।

যাই হোকদেশের প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের জীবন-জীবিকার সংকটের কথা আমরা প্রতিনিয়তই বলে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা শহরের প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা কীভাবে নির্বাহ করছে তা পর্যবেক্ষণের কিছু তথ্য সরেজমিনে দেখে উপস্থাপন করতে চাই।

বিগত সপ্তাহে ঢাকার গুলশান বনানীর অভিজাত এলাকায় প্রান্তিক আয়ের মানুষের কণ্ঠ ও মনোবেদনা সরেজমিনে দেখার জন্য রাস্তায় বের হই। বনানী বাজার ও গুলশান ২ নং গোলচত্বরে দুপুরে খাবার সময়ে বের হলে দেখি রাস্তার ওপর স্বল্প দামে দুপুরে খাবারের দোকানগুলোয় লম্বা লাইন।

আগ্রহ সহকারে দোকানগুলোয় গিয়ে দেখি লাইন ধরে মানুষ দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত। কয়েকজনের সাথে কথা হয়তারা স্বল্প বেতনে ওখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এসব ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলোর পাশেই মাঝারি মানের কয়েকটা রেস্টুরেন্ট। সেগুলো কিছুটা ফাঁকা। কারণ হলো, এখানে দাম একটু বেশি। তাই লোকজন কম।

আমরা নিরাপদ খাদ্যের কথা বলিরাস্তাঘাটে খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন ও গ্রহণ না করতে মানুষকে পরামর্শ দেই। কম মূল্যে দুপুরের খাবার খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য কি পরামর্শ দেবো? নিজেই ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছি না।

খরচ কমাতে অনেকেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে কম আয়ের বাসায় উঠছেন অথবা অনেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ের ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।

দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিত্যপণ্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে আরও নাকাল হয়ে পড়ার খবর প্রতিনিয়তই পত্রপত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। খরচ কমাতে অনেকেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে কম আয়ের বাসায় উঠছেন অথবা অনেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ের ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এই সীমিত ও প্রান্তিক আয়ের মানুষদের কান্না শোনার যেন কেউ নেই।

ঘর ভাড়াসন্তানদের পড়ালেখার খরচগণপরিবহনগ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল এবং ওষুধের খরচও সমান তালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। এখন সবার খরচ বাড়ছেধারদেনা পাওয়াটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের এই অস্থিরতায় নিত্যপণ্যের এই ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপদে আছে মধ্যবিত্তপ্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষ। প্রতিদিন যেখানে কোনো না কোনো পণ্য বা সেবার দাম বাড়ছেসেখানে নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা চক্রাকারে সকল নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অস্থিরতা উসকে দিচ্ছে। তেল-ডাল ও চিনির বাজার লাগামহীন অনেকদিন ধরেই এর মাঝে থেমে থেমে বাড়ছে চালের বাজারও। অথচ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তেমন একটা বাজার তদারকি সেভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।

সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা এই কৌশলে প্রতিনিয়তই কারসাজি করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে বৈশ্বিক অস্থিরতা পুঁজি করে নিজেরাই অতি মুনাফার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। সংকটে সাধারণ মানুষের প্রতি এই ধরনের আচরণ একটি সভ্য সমাজে এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল ঘিরে এখনও চাঁদাবাজির তান্ডব চালাচ্ছে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন গোলাম মোস্তফা 

প্রান্তিক আয়ের মানুষের আর্তনাদ কেউ কি শুনছে?

আপডেট সময় ১১:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২

শ্রীলঙ্কার আর্থিক অস্থিরতার আগে আমাদের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভেবেছিল দেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা নেই, দ্রব্যমূল্যের দামবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে (কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব)-এর বক্তব্যকে বিরোধী দলের বক্তব্য বলে উড়িয়ে দিতেন।

আমরা যখন সাধারণ খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবন-জীবিকা নিয়ে কষ্টে আছি বলতাম সরকারি দলের নেতারা বলতেন বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উপনীত হতে চলেছে এবং সব মানুষের আয় বেড়েছেকর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ইত্যাদি বক্তব্য দিয়ে আমাদের বক্তব্যের উল্টো যুক্তি প্রদর্শন করতেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা সুর বদলালেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে অতি মুনাফাকারীদের চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অজানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নিত্যপণ্য নিয়ে এই অস্থিরতা প্রলম্বিত হচ্ছে মাসের পর মাস। আর এই অশুভ চর্চা চক্রাকারে সবগুলো খাদ্যপণ্যের বাজারে সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে।

যার কারণে সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর তা নিজেরা কার্যকর করতে না দিয়ে ৪ সপ্তাহের মাথায় আবার ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও বাজারে বিগত দিনের মতো সরবরাহ বন্ধ করে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও করে দেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে অতি মুনাফাকারীদের চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অজানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নিত্যপণ্য নিয়ে এই অস্থিরতা প্রলম্বিত হচ্ছে মাসের পর মাস।

বাজারে পথে ঘাটে গেলে বিভিন্ন ভোক্তাদের সাথে যখনই কথা হয়সবাই এখন একবাক্যে বলে থাকেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য পত্রিকা ও টেলিভিশনে বলার পরও দাম বাড়ে কেন?’। একজন বলেই ফেললেন, ‘ভাই দ্রব্যমূল্য ছাড়া অন্য বিষয়ে বলেনব্যবসায়ীরা সরকারের কথা শুনছে নাআর আপনাদের কথাতো কেয়ার-ই করবে না।’

আসলেই তো সত্যিই আমরা যখন দাম বাড়ার কথা বলি তখন তারা নানা যুক্তি নিয়ে আসেন। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে প্রধানত করোনা মহামারির প্রভাবইউক্রেন যুদ্ধজ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যপরিবহন খরচডলারের বিনিময় হার ব্যাপক বেড়ে যাওয়া দায়ী করেন। কিন্তু এই অজুহাত সব জায়গায় কি সমভাবে প্রযোজ্য?

ব্যবসায়ীরা আবার নতুন এক অজুহাত দেখাতে শুরু করেছেনতাহলো আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় এবং ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমে গেছে। এটাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। আবার দোকান ভাড়াগ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বাড়ায় তাদের মুনাফা কমেছে।

যাই হোকদেশের প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের জীবন-জীবিকার সংকটের কথা আমরা প্রতিনিয়তই বলে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা শহরের প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা কীভাবে নির্বাহ করছে তা পর্যবেক্ষণের কিছু তথ্য সরেজমিনে দেখে উপস্থাপন করতে চাই।

বিগত সপ্তাহে ঢাকার গুলশান বনানীর অভিজাত এলাকায় প্রান্তিক আয়ের মানুষের কণ্ঠ ও মনোবেদনা সরেজমিনে দেখার জন্য রাস্তায় বের হই। বনানী বাজার ও গুলশান ২ নং গোলচত্বরে দুপুরে খাবার সময়ে বের হলে দেখি রাস্তার ওপর স্বল্প দামে দুপুরে খাবারের দোকানগুলোয় লম্বা লাইন।

আগ্রহ সহকারে দোকানগুলোয় গিয়ে দেখি লাইন ধরে মানুষ দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত। কয়েকজনের সাথে কথা হয়তারা স্বল্প বেতনে ওখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এসব ফুটপাতের খাবারের দোকানগুলোর পাশেই মাঝারি মানের কয়েকটা রেস্টুরেন্ট। সেগুলো কিছুটা ফাঁকা। কারণ হলো, এখানে দাম একটু বেশি। তাই লোকজন কম।

আমরা নিরাপদ খাদ্যের কথা বলিরাস্তাঘাটে খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন ও গ্রহণ না করতে মানুষকে পরামর্শ দেই। কম মূল্যে দুপুরের খাবার খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য কি পরামর্শ দেবো? নিজেই ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছি না।

খরচ কমাতে অনেকেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে কম আয়ের বাসায় উঠছেন অথবা অনেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ের ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।

দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিত্যপণ্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে আরও নাকাল হয়ে পড়ার খবর প্রতিনিয়তই পত্রপত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। খরচ কমাতে অনেকেই পরিবার পরিজনদের নিয়ে কম আয়ের বাসায় উঠছেন অথবা অনেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ের ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এই সীমিত ও প্রান্তিক আয়ের মানুষদের কান্না শোনার যেন কেউ নেই।

ঘর ভাড়াসন্তানদের পড়ালেখার খরচগণপরিবহনগ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল এবং ওষুধের খরচও সমান তালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। এখন সবার খরচ বাড়ছেধারদেনা পাওয়াটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের এই অস্থিরতায় নিত্যপণ্যের এই ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপদে আছে মধ্যবিত্তপ্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষ। প্রতিদিন যেখানে কোনো না কোনো পণ্য বা সেবার দাম বাড়ছেসেখানে নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা চক্রাকারে সকল নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অস্থিরতা উসকে দিচ্ছে। তেল-ডাল ও চিনির বাজার লাগামহীন অনেকদিন ধরেই এর মাঝে থেমে থেমে বাড়ছে চালের বাজারও। অথচ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তেমন একটা বাজার তদারকি সেভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।

সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা এই কৌশলে প্রতিনিয়তই কারসাজি করে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে বৈশ্বিক অস্থিরতা পুঁজি করে নিজেরাই অতি মুনাফার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। সংকটে সাধারণ মানুষের প্রতি এই ধরনের আচরণ একটি সভ্য সমাজে এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।