ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ঘটনার ২৪ দিন পর রোববার জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলী গত ৭ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনাকালে শতাধিক ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। তাদের বক্তব্যে এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, পঞ্চপল্লীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তবে যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন তাই এ বিষয়ে আমরা বেশি কিছু বলতে পারছি না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের সম্পৃক্ততা ছিল। এটি বিভিন্ন ভিকটিমদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। তবে মন্দিরে আগুন লাগানোর সঙ্গে দুই ভাই জড়িত কিনা সে বিষয়ে কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর মন্দিরে কে আগুন দিয়েছে সেটি খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। দুই ভাই কিংবা অন্য কোনো শ্রমিক আগুন লাগিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কারও কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অনেক অবজারভেশন দিয়েছে। এসব স্থানে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সিসি ক্যামেরা এবং অগ্নি নির্বাপকের যাতে ব্যবস্থা থাকে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এ ধরনের কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল রাতে পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে আপন দুই ভাই নির্মাণ শ্রমিক আরশাদুল খান (১৯) ও আশরাফুল খানকে (১৫) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে একটি মন্দিরের প্রতিমার কাপড়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে জড়িতরা। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশ আহত হন।
পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সিদ্দিক আলীকে প্রধান করে প্রথমে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে সাত সদস্যে উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটির মেয়াদও বাড়ানো হয়।
এ ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেন নিহত দুই ভাইয়ের বাবা মো. শাহজাহান খান (৪৬)। তিনি মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা। মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দ্বিতীয় মামলা করেন পূজারী কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ চন্দ্র মল্লের স্ত্রী তপতী রানী মল্ল (৪৭)। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের আহত করা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তৃতীয় মামলাটির বাদী মধুখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর বালা।
এ ব্যাপারে মধুখালী থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন জানান, এ ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।