ঢাকা ০৯:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাকা দিয়ে কেনা সনদের তালিকা ডিবির হাতে

টাকা দিয়ে কেনা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ ও নম্বরপত্রের তালিকা এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে জাল সনদ ও নম্বরপত্রের এ তালিকা পাওয়া গেছে। এগুলো এখন যাচাই করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, শামসুজ্জামানসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা বছরের পর বছর টাকার বিনিময়ে সনদ ও মার্কশিট বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা সনদগুলো কীভাবে শনাক্ত করা যায়, সে তথ্য শামসুজ্জামান আমাদের দিয়েছেন। আমরা এ তথ্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাব। পাশাপাশি বুয়েটের এক্সপার্টদের যুক্ত করে কাজটি কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএমপির ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ১ এপ্রিল রাজধানীর কাফরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। তখন রমজানের শেষদিক। শামসুজ্জামান আমাদের কাছে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অনেক সাংবাদিক ফোন দিয়ে ঈদের বোনাস চেয়েছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন কোন সাংবাদিককে কখন, কীভাবে, কত টাকা দিয়েছেন।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ডিবির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যদি কোনো সংবাদিক শামসুজ্জামানের মুখোমুখি বসে কথা বলতে চান, আমরা তাকে সেই সুযোগ দেব। অন্যায়ভাবে কেউ হয়রানির শিকার হন, সেটা আমরা চাই না। পাশাপাশি দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা তাদেরও বলেছি, দুদক সম্পর্কে শামসুজ্জামান যে তথ্য দিয়েছেন, চাইলে আপনারাও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। যাদের নাম বলেছেন, সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, শামসুজ্জামান মনে করেছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের চারপাশে দালাল প্রকৃতির লোক থাকে। পাশাপাশি সাংবাদিক ও দুর্নীতি দমন কমিশন অনিয়ম তদন্ত করে। তারাও যদি তার পাশে থাকে, তাহলে সনদ বাণিজ্যটা বড় আকারে করতে পারবেন। এ কারণেই তিনি এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। শামসুজ্জামান তার সহযোগী ফয়সালকে নিয়ে একটি আলাদা বাসায় বসে সনদ তৈরি করতেন। এ কারণে বিভিন্ন মানুষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

প্রসঙ্গত, ৩১ মার্চ মধ্যরাতে শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গেয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। পরে ১ এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। স্ত্রী জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসার পর চেয়ারম্যান আলী আকবরকে ওএসডি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

টাকা দিয়ে কেনা সনদের তালিকা ডিবির হাতে

আপডেট সময় ১১:২৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

টাকা দিয়ে কেনা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ ও নম্বরপত্রের তালিকা এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানের কাছ থেকে জাল সনদ ও নম্বরপত্রের এ তালিকা পাওয়া গেছে। এগুলো এখন যাচাই করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, শামসুজ্জামানসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা বছরের পর বছর টাকার বিনিময়ে সনদ ও মার্কশিট বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা সনদগুলো কীভাবে শনাক্ত করা যায়, সে তথ্য শামসুজ্জামান আমাদের দিয়েছেন। আমরা এ তথ্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাব। পাশাপাশি বুয়েটের এক্সপার্টদের যুক্ত করে কাজটি কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএমপির ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ১ এপ্রিল রাজধানীর কাফরুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। তখন রমজানের শেষদিক। শামসুজ্জামান আমাদের কাছে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অনেক সাংবাদিক ফোন দিয়ে ঈদের বোনাস চেয়েছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন কোন সাংবাদিককে কখন, কীভাবে, কত টাকা দিয়েছেন।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ডিবির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যদি কোনো সংবাদিক শামসুজ্জামানের মুখোমুখি বসে কথা বলতে চান, আমরা তাকে সেই সুযোগ দেব। অন্যায়ভাবে কেউ হয়রানির শিকার হন, সেটা আমরা চাই না। পাশাপাশি দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা তাদেরও বলেছি, দুদক সম্পর্কে শামসুজ্জামান যে তথ্য দিয়েছেন, চাইলে আপনারাও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। যাদের নাম বলেছেন, সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, শামসুজ্জামান মনে করেছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের চারপাশে দালাল প্রকৃতির লোক থাকে। পাশাপাশি সাংবাদিক ও দুর্নীতি দমন কমিশন অনিয়ম তদন্ত করে। তারাও যদি তার পাশে থাকে, তাহলে সনদ বাণিজ্যটা বড় আকারে করতে পারবেন। এ কারণেই তিনি এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। শামসুজ্জামান তার সহযোগী ফয়সালকে নিয়ে একটি আলাদা বাসায় বসে সনদ তৈরি করতেন। এ কারণে বিভিন্ন মানুষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

প্রসঙ্গত, ৩১ মার্চ মধ্যরাতে শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গেয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। পরে ১ এপ্রিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। স্ত্রী জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসার পর চেয়ারম্যান আলী আকবরকে ওএসডি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।