টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে গতকাল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান দল। এদিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ অ্যাডিলেডে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত এবং ইংল্যান্ড। কাগজ কলমে দুই দল শক্তিসামর্থ্যে প্রায় সাম্যাবস্থাতেই আছে। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং সব জায়গাতেই দুই দল সমানে সমান।
এই ম্যাচের অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। তিনি মনে করেন জশপ্রীত বুমরাহর অনুপস্থিতিতে বোলিংয়ে একটু পিছিয়েই আছে ভারত। এছাড়া গ্রুপ ম্যাচে ভারতের থেকে ইংল্যান্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেছে। মাশরাফির মনে হচ্ছে, এটাও ইংলিশদের এগিয়ে থাকার আরেকটা কারণ। আজ নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দীর্ঘ এক পোস্ট এমন ভাবনাই জানিয়েছেন এই টাইগার পেসার।
মাশরাফি লেখেন, ‘গেম অন— ভারত আর ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, প্রথম সেমিফাইনাল জিতে পাকিস্তান ফাইনালে ভারত আর ইংল্যান্ড কে জিতবে বোঝা মুশকিল, দুই দলই এবার খুব ভালো খেলছে। ভারত মনে হয় বোলিংয়ে একটু পিছিয়ে বুমরাহকে ছাড়া।তাছাড়া গ্রুপ ম্যাচে ভারতের থেকে ইংল্যান্ড শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেছে, এতে তাদের দুর্বল জায়গা গুলোও বেশি বুঝার কথা।’
মাশরাফি তারিফ করলেন ইংলিশ বোলিং লাইন আপের, ‘উড, ওকস, কারান, তিন জনই ভালো বোলিং করছে বিশেষ করে উডস এর উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এই টুর্নামেন্টে এখন ও পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত গতির বোলারও সে। আদিল রশিদ, লিভিংস্টোন, মঈন আলী স্পিন ডিপার্টমেন্ট সামলাবে।’
রোহিত শর্মার অফ ফর্ম ভারতকে কিছুটা চিন্তায় ফেলবে, অভিমত নড়াইল এক্সপ্রেসের। যদিও তার মনে হচ্ছে, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি আর সূর্যকুমার যাদবরা সে ঘাটতিটা ঢেকে দেবেন পুরোপুরি। তিনি বলেন, ‘এদিকে ভারতের রোহিত শর্মা ফর্মে না থাকাটাও ভারতের জন্য চিন্তার,আজ সে কি করবে দেখার বিষয়। রাহুল মোটামুটি ছন্দে আসছে। কোহলি এট হিজ বেস্ট এই টুর্নামেন্টে আর খেলা যেহেতু অ্যাডিলেড সেখানে কোহলি যে কোন দিনই তার করে নিতে পারে। অ্যাডিলেড মানেই কোহলির দ্বিতীয় ঘর। তবে একজনের কথা না বললেই না, সুরিয়া কুমার যাদব যে এখন এই ফরমেটে এক নম্বর খেলোয়ার, তার চেয়ে জরুরি যেটা তার ব্যাটিংয়ের ধরন। চার থেকে পাঁচটা বল সর্বচ্চো সময় নেয়, তারপরই সে বাউন্ডারি খুঁজতে থাকে প্রতি ওভারে। ওর ব্যাটিং দক্ষতা এবং ইনটেন্ট ভারতকে অনেক দূর এগিয়ে দেয় ম্যাচে।’
তবে ভারতকে কোন দিকটা একটু পিছিয়ে দেবে, সেটাও উল্লেখ করতে ভুললেন না মাশরাফি। বললেন, ‘তবে ভারতের ডেথ বোলিং এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি, বুমরাহকে ছাড়া রিয়েল প্রেশার কতোটুকু সামলাতে পারবে সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। উপরে ভুবেনেশ্বর ভালো না করলে ভারত আরও বিপদে পড়তে পারে। বিশেষ করে এ্যালেক্স হেলস অলআউট ব্যাটিংই করছে, আর তার ব্যাটে বলে হলে একাই শেষ করে দিতে পারে, সাথে আছে বাটলার ও। মালান ইনজুরি হলে সল্ট খেলতে পারে, তবে মঈন আলি আর লিভিংস্টনের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে ইংল্যান্ডের। চাহাল দারুণ অপশন হতে পারে ভারতের জন্য, তবে অক্ষর প্যাটেল যেহেতু ব্যাটিং পারে তাকে বসাবে কিনা বলা যাচ্ছে না।’
অ্যাডিলেডের উইকেটও ভারতকে খানিকটা সাহায্য করতে পারে, অভিমত মাশরাফির। বললেন, ‘খেলাও হবে নাকি ইউজড উইকেটে এবং হঠাৎ করে নাকি আবহাওয়া অ্যাডিলেডে গরম হয়েছে বিগত কয়েক দিন। যেটা ইন্ডিয়ার জন্য দারুন খবর। গরম এবং ইউজড উইকেট ইন্ডিয়া মনেপ্রাণেই চাইবে।’
পাকিস্তান ফাইনালে যাওয়ার পর থেকেই ১৯৯২ এর পুনরাবৃত্তি নিয়ে কথা উঠছে বেশ। এ বিষয়ে মাশরাফির ভাষ্য, ‘তবে যেই ফাইনালে যাক, ৯২ এ ইমরান খানের দল নিউজিল্যান্ডকেই, ইনজামাম এর সেই ঐতিহাসিক ইনিংস দিয়েই হারিয়ে ফাইনাল খেলেছিলো এবং ইংল্যান্ড কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলো। মার্টিন ক্রো ছিলো সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট। সেবার এই বিশ্বকাপের মতোই বৃষ্টি এবং পয়েন্ট ভাগাভাগি করে পাকিস্তান সেমিফাইনাল খেলেছিলো। সুতরাং হিস্ট্রি রিপিট নিয়ে অনেকে কথা হচ্ছে,তবে সেটা সময়ের উপর নির্ভর করছে। আপাতত ভারত এবং ইংল্যান্ডের দারুণ একটা ম্যাচ আজ দেখার অপেক্ষায় আছি।’
সেমিফাইনালের এই ম্যাচ জয়ের টোটকাটাও বাতলে দিলেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক। বললেন, ‘প্রয়োজনের মূহুর্তে যারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তারা এগিয়ে থাকবে অনেকটা। তাছাড়া নির্ভার থেকে কে খেলতে পারে সেটাও জেতায় সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখবে। সেক্ষেত্রে ভারতের মিডিয়ার চাপ অনেক বেশি, কারণ তারা বিশ্বকাপ জিতেছে শেষ ১১ বছর আগে আর ইংল্যান্ড জিতেছে মাত্র ৩ বছর আগে, যদিও ফরমেটে ভিন্নতা আছে। ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ না হয়ে দারুণ এক ম্যাচের প্রতাশায় রইলাম।’