● ভোট কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর
● ঝুঁকিতো আছেই, বললেন নৌকার প্রার্থী
● প্রত্যেকটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূণ বললেন লাঙ্গল প্রার্থী
● সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সাধারন ভোটারগন
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে বিভিন্ন প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। তবে বিএনপি ভোটে না আসায় অধিকাংশ ভোটারদের ভোট দেওয়ায় বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি।
এদিকে যারা ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তারা নির্বিঘেœ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেছেন। ভোটাররা মনে করছেন, নৌকার প্রার্থী ড. আনোয়ার খান ও ঈগল প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান পবন দুইজনই হেভিওয়েট প্রার্থী এবং তারা দুইজনই একই দলের হওয়ায় সবকটি ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সবাই যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারেন- সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানান ভোটাররা। পাশাপাশি ভোটকে কেন্দ্র করে যেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও মারামারি-হানাহানি না হয়, সেদিকে প্রশাসনকে নজর দেয়ারও আহ্বান জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, ৪-৫টি কেন্দ্র বাদে বাকী সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
ইতোমধ্যে ঈগল প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন ভোট কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণাসহ প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯টি দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে প্রতিটি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলেছেন, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মাহমুদ।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ৮৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
এ আসনটিতে এবার ছয়জন প্রার্থী প্রতিদন্ধ¦ীতা করছেন। তাদের মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী (বর্তমান এমপি) আনোয়ার হোসেন খান ও ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারা দুইজনই হেভিওয়েট প্রার্থী এবং একই দলের হওয়ায় উপজেলাব্যাপী আলোচনার মূল কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন। অন্যান্যরা হলেন, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতিকে মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মোমবাতি প্রতীকে নিয়াজ মাখদুম ফারুকী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে আম প্রতিকে মোশাররফ হোসেন এবং কেটলি প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ গোফরান।
এদিকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রগুলো ঘুরে জানা যায়, রামগঞ্জ পৌরসভার মধ্য সোনাপুর, পশ্চিম আঙ্গারপাড়া, মধ্য আঙ্গারপাড়া, পশ্চিম কাজিরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামগঞ্জ এম ইউ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলার কাওয়ালী ডাঙ্গা, নোয়াগাঁও বাজার, শৈরশৈ, পানিয়ালা, হানুবাইশ, সিরন্দী, নয়নপুর, চন্ডিপুর সুরেরবাগ, ফতেহপুর, রামনগর, হোসনাবাদ, দরবেশপুর, পশ্চিম সোশালিয়া, আলিপুর, পূর্ব করপাড়া, গাজীপুর, দেহলা, দক্ষিণ ভোলাকোট, পাঁচরুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঞ্চনপুর, ভাদুর, শ্রীরামপুর, চন্ডিপুর মনসা, লামচর, দরবেশপুর, মাছিমপুর এ এল এম, শাহ জকি উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, জয়পুরা এস আর এম, নারায়ণপুর, পানপাড়া হাই স্কুল এন্ড কলেজসহ প্রতিটি ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
রামগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কি ভোট দিবো বলেন, আমাদের ভোটতো আগেই হয়ে যায়। তবে এবার নির্বাচনের পরিবেশ ভালো মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা আতংকিত আছি, কারন নৌকা প্রার্থী ড. আনোয়ার খান, ঈগল প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান পবন দুইজনই হেভিওয়েট প্রার্থী এবং তারা দুইজনই একই দলের। তাই ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা মনে করেন প্রতিটা কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করা খুবই প্রয়োজন।
লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মাহমুদ বলেন, রামগঞ্জের প্রতিটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ নির্বিন্নে ভোট দিতে পারলে আমার জয় সুনিশ্চিত। এখনো পর্যন্ত কোন বাঁধার সমুক্ষিন হইনাই। তবে আমার নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলায় প্রশাসনকে জানালে টেলু মেম্বারের বিরুদ্ধে তারা তাৎখনিক ব্যবস্থা গ্রহন করে।
ঈগল প্রতিকের সতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান পবন বলেন, আমি লক্ষ্মীপুর-১(রামগঞ্জ) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আনোয়ার হোসেন খান অনেক কালো টাকার মালিক এবং একজন উচ্চমানের সন্ত্রাসী। কালো টাকা ব্যবহার করে তিনি আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের দ্বারা আমার নির্বাচনি পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ আমার গনসংযোগেও হামলা চালিয়েছে। এ আসনে প্রতিটি ভোট কেন্দই ঝুঁকিপূণ। সে কারণে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার ও সিসি ক্যামরা স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯টি দপ্তরে আমি লিখিত আবেদন করেছি।
নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ড. আনোয়ার খানের কাছে মুঠোফোনে জানতে ছাইলে তিনি বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি। ঝুঁকিতো আছেই। ভোটকেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের কোন ঘাটতি নেই। প্রত্যেকটা কেন্দ্রকেই আমরা গুরুত্বপূর্ন ভাবে দেখছি এবং আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও সার্বক্ষনিক আমাদের প্রশাসনিক নজরদারি রয়েছে।
সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষনে আমাদের সকল ডিপার্টমেন্ট সমন্বয় করে কাজ করছে এবং সময়ে সময়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদেরকে যে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, আমরা সবগুলোই প্রতিপালন করছি। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সচ্ছতার সাথে কাজ করছি।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনটি ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৯ জন।