দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার হৃদয় অ্যাডিলেড ওভাল। আর বাংলাদেশের জন্য শুধুই সুখ স্মৃতির ময়দান। টুকটাক যারা টাইগার ক্রিকেটের খবর রাখেন তারা নিশ্চিত করেই ভুলে যান নি ২০১৫ সালের সেই ম্যাচটির কথা। ঐতিহাসিক সেই লড়াইটির কথা! যেখানে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। তাইতো মঙ্গলবার বৃষ্টিস্নাত দিনে অ্যাডিলেডে পা রেখে কেমন যেন স্মৃতি কাতর হয়ে উঠলেন সাকিব আল হাসান।
যদিও ১৫ রানে জয়ী সেই দলটার সদস্য হলেও সাকিবকে সেই ম্যাচটাতে তেমন চেনা যায়নি। দল জিতেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শতরান, মুশফিকুর রহিমের ৮৯ আর রুবেল হোসেনের আগুন ঝরা বোলিংয়ে (৪/৫৩)। সেই সাফল্য ফের জাগিয়ে তুলছে বাংলাদেশ দলকে। এবার টি-টোয়েন্টি। আগের সেই দলটার মূল কারিগর মুশফিক, রিয়াদ কিংবা মাশরাফি বিন মুর্তজা কেউ অবশ্য দলে নেই। তারপরও বুধবার এই অ্যাডিলেডেই যখন ম্যাচটা তখন হাসিমুখেই মাঠে নামতে তৈরি সাকিব।
ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার প্রিভিউ ডে-তে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই স্মৃতির বারান্দা ধরে হাঁটলেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছিলেন, ‘জয়ী সেই টিমের থেকে বোধহয় আমি আর তাসকিন আছি। অবশ্যই ভালো স্মৃতি। ভালো মেমোরিজ গুলো সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। আশা করি সেই স্মৃতি মানসিকভাবেও একটু সাহায্য করবে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কঠিন সমীকরণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল। দুই জয়েও স্বস্তি নেই। সুপার টুয়েলভে ‘টু’ গ্রুপের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ৫ দলেরই সেমিতে খেলার দরজা খোলা। এরমধ্যে টানা তিন হারে নেদারল্যান্ডসের শুধু বিদায় ঘণ্টা বেজেছে! আর তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪, রান রেট: -১.৫৩৩। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারায় রান রেটের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ টাইগারদের। এ কারণেই ভারতের সমান পয়েন্ট নিয়েও তিন নম্বরে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলে বাংলাদেশ সরাসরি চলে যাবে সেমিতে। কিন্তু একটা ম্যাচ হারলেই সমীকরণটা কঠিন হয়ে যাবে।
ভারতও আছে চাপে। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে কিছুটা কোণঠাসা বিরাট কোহলিরা। এ অবস্থায় তাদের সামাল দেওয়াটা সহজ হবে না বলেই মনে করেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছিলেন, ‘আমি বিশ্বকাপের আগের প্রেস কনফারেন্সেও বলেছি প্রতিটা ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা ম্যাচেই আমরা একই এপ্রোচ নিয়ে খেলতে চাই। কোন দেশের সাথে কোন অবস্থায় খেলা হচ্ছে এগুলো আমরা চিন্তা করতে চাই না। আমরা সেটা উপভোগ করতে চাই। আমাদের একই পরিকল্পনা একই।’
নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ে বিশ্বকাপে এই দুটো জয় নিশ্চিত করেই আত্মবিশ্বাসী করেছে বাংলাদেশ দলকে। তবে সাকিব মনে করেন না এখনই দল সব শিখে গেছে, ‘ম্যাচ জিতলে তো অবশ্যই ভালো লাগে, আর আলাদা করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হয় যে লাস্ট ওভার কিংবা সেকেন্ড লাস্ট ওভারে ম্যাচ ডিসাইড যায়। টি-টোয়েন্টি খেলা যেহেতু অল্প সময়ের খেলা প্রতিযোগিতা বেশি থাকে। এখানে ক্লোজ ম্যাচগুলোই বেশি হবে। এই নার্ভগুলো ধরে রাখতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেটা হচ্ছিল যে আমরা ক্লোজ ম্যাচগুলো হেরে যাচ্ছিলাম। সেখান থেকে আমরা এখন ঘুরে দাঁড়ানো শিখছি, আমি বলবো না যে শিখে গিয়েছি। একটু তো উন্নতি আছেই যেখানে আমরা, আগে যে ক্লোজ ম্যাচ গুলোতে গেলেই হেরে যেতাম, ওখানে জেতা শুরু হয়েছে।’
কথায় আছে জয়ী দলটা ভাঙতে নেই। ভারতের বিপক্ষে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ছয়টায় লড়াই। তার আগে একাদশ প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন, ‘দেখুন, একাদশ নিয়ে আসলে চিন্তা করা হয়নি, কিন্তু কম্বিনেশন তো চাইলেই অনেক রকম বানানো যায়। এমন না যে একটা কম্বিনেশন নিয়েই আছে কিংবা থাকবে। আর কম্বিনেশন আসলে অনেক রকম বানানো যায়। তারপরেও আমাদের যে রিসোর্স আছে, তা দিয়ে কিভাবে বেস্ট ইউজ করতে পারি সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
এমনিতে বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ের গল্পটা একপেশে। যেখানে ম্যাচ হয়েছে ১১টি। আর বাংলাদেশ মাত্র ১টি জয়েই আটকে আছে। দশটিতে জিতেছে ভারত। বুধবারের ম্যাচেও আবেগ সরিয়ে রাখলে এগিয়ে থাকবে ভারতই। কিন্তু নিকট অতীতে দৃশ্যপট পাল্টেছেও। ভারতের সঙ্গে সাকিবদের লড়াই মানেই এখন ধুন্ধুমার উত্তেজনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় আকাশ ছোঁয়া হাইপ। সেই লড়াইটা শুরু করে দিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
এ কারণেই কি-না কে জানে, অ্যাডিলেডের প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকদের কথাও মাথায় আছে সাকিবের। বলছিলেন, ‘ভালো একটা ম্যাচ হলে অবশ্যই দর্শকদের জন্য ভালো হবে। গত ম্যাচটা খুব ভালো একটা ম্যাচ ছিল। দর্শকদের জন্য বিশেষ করে। আশাকরি ঐরকমই একটা ভালো যেন উপহার দিতে পারি।’ জয় পরাজয় যাই হোক-তেমন একটা লড়াইয়ের প্রতীক্ষাতেই বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের দরজা খুলতে ভারতকে হারানোটা যে জরুরী!