অস্ট্রেলিয়ায় পা দিয়েই নতুন সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি প্রতিটা দিন। এক শহর ছেড়ে আরেকটাতে যাচ্ছি, সেখানেও একটা দেশের ভেতরেই যেন আরেকটা দেশ! এমনকি আবহাওয়াতেও যেন কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না, কোথাও ঠান্ডা, কোথাও আবার গরম! প্রতিটা রাজ্যেই আলাদা আলাদা নিয়ম কানুন! নিউ সাউথ ওয়েলসে থেকে শনিবার ভোরের সূর্য ওঠার আগেই এসেছি কুইন্সল্যান্ডে। সিডনি থেকে ব্রিসবেন, প্রায় হাজার মাইলের দূরত্ব। পাহাড়-সমুদ্র পেরিয়ে এলেও দেশ একটাই কিন্তু এখানে অনেক কিছুই শুরু করতে হয়েছে নতুন করে!
ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের কথাই যদি ধরি-সেটাও তেমন মিল পেলাম কোথায়? পুরো সিডনি জুড়েই মেট্রোর জাল বেছানো। চাইলে লাইট কিংবা মূল মেট্রো করে এ মাথা থেকে ও মাথা চলে যেতে পারবেন। আবার উবার-ট্যাক্সিও একেবারে নাগলেই।
কিন্তু আরেক অজি রাজ্য কুইন্সল্যান্ডের শহরে পা দিয়ে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাটা তেমন একটা সুখকর লাগল না। সিডনির ওপাল কার্ড সিডনিতেই শেষ। এখানে আরেক নিয়ম। আর সকালে ব্রিসবেনের গ্যাবায় বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনটা তো আরেকটু হলে মিসই হয়ে যেতো। থার্টিন ক্যাবসে কল দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পর মিলল ট্যাক্সি। যে এলাকাটায় উঠেছি সেই স্নোডন স্ট্রিট এলাকা থেকে গ্যাবায় আসতে গিয়ে অঞ্জন দত্তের সেই গানটাও মনে পড়ছিল খুব… মিটার যাচ্ছে বেড়ে!
সকালে যখন রোমা বাসস্টপেজ থেকে আসতে গিয়েও একই অবস্থা। তখন অবশ্য পিক আওয়ার এখানে। তখন উবার-ট্যাক্সি সব কিছুরই ভাড়া চড়া। তবে স্নোডন স্ট্রিট পার্ক থেকে উলুংগ্যাবায় আসার পথে ট্যাক্সি ড্রাইভার রাজের সঙ্গে কথা বলে বেশ লাগল। ভারতীয় এই তরুণ এখানেই স্থায়ী হয়েছেন। সময় সুযোগ পেলে বাড়তি আয়ের জন্য ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
রাজের মুখেই শুনলাম-জীবন যাত্রা ব্যয় বহুল হলেও এখানে বেশ আনন্দেই দিন কাটান তারা। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে বলছিলেন, ‘দেখুন, মানিয়ে নেওয়ার জন্য সব জায়গাতেই একটা সময় চাই। এখানে সব কিছুই দারুণ কয়েকটা দিন থাকলেই সেটা বুঝতে পারবেন।’
যেহেতু শুনেছে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছি, তাইতো টুকটাক করে দুই একটা জায়গার নামও বলে দিলেন যেখানে গেলে অন্তত সিডনির অপেরা হাউজ না হোক-ভিন্ন কিছুর স্বাদ তো মিলবেই।
ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর। এটি কুইন্সল্যান্ডের রাজধানীও। যদি ভৌগলিক চোখেও দেখি তবে সেখানেও মুগ্ধতাই ছড়াবে। প্রশান্ত মহাসাগরের মুখোমুখি শহর এটি। আর এই শহরটি তো একটা নদীর নামেই দাঁড়িয়ে শত শত বছর ধরে। ব্রিসবেন নদীর নাম স্যার টমাস ব্রিসবেন! এই নামকরণটা হয়েছে সেই আঠারশ সালের দিকে।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের এই অঞ্চলে এসব তো রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক ব্যাপার স্যাপার। থার্টিন ক্যাভের চালক রাজ হাসিমুখে বলছিলেন, ‘ম্যাচ তো দেখবেই। সময় করে তোমরা এখানে ব্রিসবেনে গোল্ড এবং সানশাইন কোস্ট ঘুরে আসতে ভুলবে না। ভাল লাগবেই তোমাদের।’
সঙ্গে আসল কথাটাও শোনালেন, গত চার বছর ধরে এই শহরে থাকা বাংলাদেশের তরুণ রেজা মাহমুদ। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এখন জীবিকার প্রয়োজনেই আছেন এখানে। কেমন আছেন এই শহরে? প্রশ্নটা রাখতেই বলছিলেন, ‘দেখুন, ভাল থাকার তো শেষ নেই। তবে এখানে আমি ব্যক্তিগতভাবে দারুণ খুশি। একটা সুশৃঙ্খল শহর এটি। চারপাশে চোখ রাখলে দেখতে পারব শত বছর বয়সী সব ভবন সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়াও। এক কথায় যদি বলি এটি সিডনি ও মেলবোর্ন শহরগুলির মতো প্রগতিশীল নয়।’
শত বছরের পুরোনো গ্যাবা স্টেডিয়ামে আসার পথে এই কথাগুলোরই সত্যতা খুঁজে পাচ্ছিলাম। ঔপনিবেশিক অতীত থেকে একুশ শতক পেরোনো আধুনিকতা সব মিলিয়ে ব্রিসবেন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে একটা শহর। মজবুত অতীতকে সঙ্গে নিয়ে যে আধুনিকতা আর বর্তমানকেও ধারণ করতে পারে তারাই এগিয়ে যায়!