ঢাকা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পারমাণবিক মহড়া চালাবে রাশিয়া, জানাল যুক্তরাষ্ট্রকে

পারমাণবিক মহড়া চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া। নিজেদের এই পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে দেশটি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) এই তথ্য সামনে আনে মার্কিন সরকার। বুধবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া তার পারমাণবিক বাহিনীর বার্ষিক মহড়া চালানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে বলে মার্কিন সরকার জানিয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (এসটিএআরটি) বা নতুন স্টার্ট চুক্তির অধীনে রাশিয়া এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগাম তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে বাধ্য। এই চুক্তিটি পরমাণু চুক্তি বা স্টার্ট বলে পরিচিত।

মার্কিন বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে এবং যেমনটি আমরা আগেও দেখেছি, এটি রাশিয়ার নিয়মিত বার্ষিক মহড়া’। তবে রাইডার এর বেশি আরও বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন কথিত ডার্টি বোমা ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে যা রাশিয়ার কাছে পরমাণু সন্ত্রাসবাদ বলে বিবেচিত হবে। ইউক্রেনের এই পরিকল্পনা বাতিল করানোর জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে মস্কো।

গত সোমবার জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া এক চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং নিরাপত্তা পরিষদকে এই আহ্বান জানান। সেখানে তিনি বলেন, ‘কিয়েভ সরকারের ডার্টি বোমা ব্যবহারের বিষয়টিকে আমরা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করব।’

এরপর মঙ্গলবারও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করে যে, ইউক্রেন তার নিজের ভূখণ্ডে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এটিকে ভুল তথ্য এবং যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়ানোর অজুহাত হিসাবে আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার দাবি খারিজ করেছেন।

এদিকে রাশিয়ান মহড়া এবং পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলায় পুতিনের যেকোনো পদক্ষেপের মধ্যে পার্থক্য বোঝার বিষয়ে নিজেদের সক্ষমতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস এই ধরনের বিজ্ঞপ্তির প্রয়োজনীয়তা মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।

প্রাইস বলেছেন, ‘যদিও রাশিয়া বিনা উস্কানিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে এবং পারমাণবিক হামলার বিষয়ে বেপরোয়া বক্তৃতা দিয়ে আসছে, তারপরও এই ধরনের বিজ্ঞপ্তিগুলো এটাই নিশ্চিত করছে যে, আমাদের (রুশ কর্মকাণ্ডে) বিস্মিত হতে হচ্ছে না এবং এতে করে ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকিও হ্রাস পায়।’

রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়া-অধিকৃত খেরসন প্রদেশে আরও অগ্রসর হয়েছে। আর এই বিষয়টি মস্কোকে বড় ধরনের পরাজয়ের হুমকির মুখে ফেলেছে। এরপরই ‘ডার্টি বোমা’ সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে গত রোববার এবং সোমবার পশ্চিমা সমকক্ষদের কাছে ফোন করেছিলেন রাশিয়ান কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মস্কো তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিস্ফোরক যন্ত্র দিয়ে এই ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে এবং কিয়েভকে দায়ী করতে চাইছে।

তবে মস্কো স্বল্পমাত্রার ‘কৌশলগত’ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন ঘুরছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার মস্কোকে এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তা হবে ‘অবিশ্বাস্য গুরুতর ভুল’।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পারমাণবিক মহড়া চালাবে রাশিয়া, জানাল যুক্তরাষ্ট্রকে

আপডেট সময় ১১:১৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০২২

পারমাণবিক মহড়া চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া। নিজেদের এই পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে দেশটি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) এই তথ্য সামনে আনে মার্কিন সরকার। বুধবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া তার পারমাণবিক বাহিনীর বার্ষিক মহড়া চালানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে বলে মার্কিন সরকার জানিয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (এসটিএআরটি) বা নতুন স্টার্ট চুক্তির অধীনে রাশিয়া এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগাম তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে বাধ্য। এই চুক্তিটি পরমাণু চুক্তি বা স্টার্ট বলে পরিচিত।

মার্কিন বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে এবং যেমনটি আমরা আগেও দেখেছি, এটি রাশিয়ার নিয়মিত বার্ষিক মহড়া’। তবে রাইডার এর বেশি আরও বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন কথিত ডার্টি বোমা ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে যা রাশিয়ার কাছে পরমাণু সন্ত্রাসবাদ বলে বিবেচিত হবে। ইউক্রেনের এই পরিকল্পনা বাতিল করানোর জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে মস্কো।

গত সোমবার জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া এক চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং নিরাপত্তা পরিষদকে এই আহ্বান জানান। সেখানে তিনি বলেন, ‘কিয়েভ সরকারের ডার্টি বোমা ব্যবহারের বিষয়টিকে আমরা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করব।’

এরপর মঙ্গলবারও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করে যে, ইউক্রেন তার নিজের ভূখণ্ডে ‘ডার্টি বোমা’ ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এটিকে ভুল তথ্য এবং যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়ানোর অজুহাত হিসাবে আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার দাবি খারিজ করেছেন।

এদিকে রাশিয়ান মহড়া এবং পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলায় পুতিনের যেকোনো পদক্ষেপের মধ্যে পার্থক্য বোঝার বিষয়ে নিজেদের সক্ষমতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস এই ধরনের বিজ্ঞপ্তির প্রয়োজনীয়তা মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।

প্রাইস বলেছেন, ‘যদিও রাশিয়া বিনা উস্কানিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে এবং পারমাণবিক হামলার বিষয়ে বেপরোয়া বক্তৃতা দিয়ে আসছে, তারপরও এই ধরনের বিজ্ঞপ্তিগুলো এটাই নিশ্চিত করছে যে, আমাদের (রুশ কর্মকাণ্ডে) বিস্মিত হতে হচ্ছে না এবং এতে করে ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকিও হ্রাস পায়।’

রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়া-অধিকৃত খেরসন প্রদেশে আরও অগ্রসর হয়েছে। আর এই বিষয়টি মস্কোকে বড় ধরনের পরাজয়ের হুমকির মুখে ফেলেছে। এরপরই ‘ডার্টি বোমা’ সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে গত রোববার এবং সোমবার পশ্চিমা সমকক্ষদের কাছে ফোন করেছিলেন রাশিয়ান কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মস্কো তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিস্ফোরক যন্ত্র দিয়ে এই ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে এবং কিয়েভকে দায়ী করতে চাইছে।

তবে মস্কো স্বল্পমাত্রার ‘কৌশলগত’ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন ঘুরছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার মস্কোকে এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিলে তা হবে ‘অবিশ্বাস্য গুরুতর ভুল’।