ঢাকা ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে লাকসাম প্রেসক্লাবের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন সোসাইটি অফ এনলাইটেন্ড পিপলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত টাকা আত্মসাৎ করলেন ম্যানেজার, মামলা মাঠকর্মীর নামে! ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব: শায়েখে চরমোনাই কোনাবাড়ী থানা প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত। পটুয়াখালী জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং ৮ ডিসেম্বরের সমাবেশে শেখ হাসিনা কিভাবে যুক্ত হবেন, জানে ভারত ড্রিম লুক বিউটি জোন আধুনিক মানের বিউটি পার্লার উদ্বোধন জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের ছানার পায়েস ৫ আগস্ট বঙ্গভবনের ঘটনা নিয়ে গণসংহতির বিবৃতি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ট্রাস্টি নিয়োগে ‘অসন্তোষ’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিষয়টি ‘সরল চোখে’ দেখছে না অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে দলীয়করণের ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন তারা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিনির্ধারকদের মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি চলতে থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে রাজনীতিকরণসহ শিক্ষার মান হারাবে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ধরে রাখা কষ্টকর হবে।

জানা গেছে, ‘দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার’ অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে সরকার। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে চারজন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে বা স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিতে পারেন। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় আচার্যের অনুমোদনে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে।

দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে সরকার। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে চারজন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কারাগারে রয়েছেন

কিছুদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকে। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও ১৩ জন। নতুন বোর্ডে পুরোনো ট্রাস্টিদের কেউ স্থান পাননি।

dhakapost
সরকার কর্তৃক ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে— বলছেন শিক্ষাবিদরা / ছবি- সংগৃহীত

 

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কারণ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বোর্ড সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও কিছু কর্মকর্তা মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গি কার্যক্রমের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কাজে যুক্ত করেন। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে তারা শিক্ষার্থীদের উসকে দেন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ট্রাস্টি এবং একজন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা পোস্ট। তারা বলছেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। সাবেক ট্রাস্টিদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা  ছিল প্রমাণিত। এছাড়া হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে নর্থ সাউথের নাম জড়িয়ে আছে। সে কারণে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে খুব একটা শোরগোল হয়নি। তবে, মানারাতে কেন সরকারিভাবে ট্রাস্টি গঠন করা হলো, তা অনেকেরই বোধগম্য নয়।

তাদের মতে, এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক দিক উন্মোচিত হবে। এতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতির পেছনে বেশি সময় ব্যয় করবেন, পড়ানোয় কম আগ্রহী হবেন। শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন পদ দখল নিয়ে রেষারেষি হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু বিত্তবানদের সন্তানরা পড়াশোনা করেন, অভিভাবকরা তাদের দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আগ্রহী হবেন না। এসব শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যাবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে বা স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিতে পারেন

সরকারিভাবে নর্থ সাউথ ও মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের প্রভাব কেমন হতে পারে— জানতে চাইলে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান  বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পেছনে একটা গ্রাউন্ড আছে। অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল, সে কারণে পাঁচজন ট্রাস্টি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে কথা আছে। কোনো কিছু না বলে সরকারিভাবে এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হলে ভবিষ্যতে এ পথে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন) কেউ আর আসবেন না।

‘যাদের প্রচুর অর্থ আছে এবং তারা হয়তো সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করতে চান— এমন লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে আসেন। সরকারিভাবে হস্তক্ষেপ হলে কেউ আর এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন না। আমার মনে হয় না এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা উচিত।’

বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে দেখেন না’ উল্লেখ করে চৌধুরী মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে এটি নেতিবাচক মনে হয়। ট্রাস্টি বোর্ড সরকারিভাবে দখল করা হলে শিক্ষক নিয়োগও দলীয়ভাবে হবে। ফলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা সেভাবে হবে না। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশে থাকবে না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে তিনি এলডিপিতে যোগ দেন।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কারণ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বোর্ড সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও কিছু কর্মকর্তা মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গি কার্যক্রমের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কাজে যুক্ত করেন। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে তারা শিক্ষার্থীদের উসকে দেন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন

ট্রাস্টি গঠন নিয়ে মতামত জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখানে নাকি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে, সেজন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকারিভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের আইনগত কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। যখন এটা (ট্রাস্টি বোর্ড গঠন) নিয়ে আলোচনা শুরু হলো, তখন আমি পদত্যাগপত্র দিয়ে চলে এসেছি। সরকার যদি চায়, তাহলে মানারাতে শিক্ষক রাজনীতি শুরু হতে পারে। যা ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’

জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনে আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। নির্বিচারে যদি আইনের প্রয়োগ করা হয়, তাহলে কিন্তু সংকট থাকবেই। মানসম্মত উন্নয়ন না করলে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিকতে পারবে না।

‘ট্রাস্টি বোর্ড গঠন একটি সাময়িক ব্যবস্থা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকে থাকতে হলে কোয়ালিটি এডুকেশন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিতে প্রচুর স্বাধীনতা দরকার। তা না হলে আস্তে আস্তে এগুলো সব মরে যাবে।’

মানারাতের সৃষ্টি যেভাবে

ইসলামিক স্কলার তৈরির মানসে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামিদ আল খতিব রাজধানীর গুলশানে কিছু জায়গা কিনে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য দান করেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (তখনকার ডিআইটি) থেকে আট বিঘা জমি কেনেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট অ্যাক্ট অনুসারে ‘মানারাত ট্রাস্ট’ গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফুয়াদ আব্দুল হামিদ আল খতিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শুরু হয়। তখন গুলশান-২ এর একটি ভাড়া বাড়িতে স্কুল পরিচালনা করা হতো।

১৯৯৫ সালে ট্রাস্টটি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সে লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। ২০০১ সালের ৩ এপ্রিল ট্রাস্টটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি অনুমোদন লাভ করে। ওই বছরের ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ২৮ মে ঢাকার গুলশানে ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। এরপর সাভারে ১০ বিঘা জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুর রহমান সাভারের বিরুলিয়ার আশুলিয়া মডেল টাউনে স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা দুটি ট্রাস্ট দিয়ে পরিচালিত। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের শর্ত ছিল, শহরের মধ্যে হলে এক একর এবং বাইরে হলে দুই একর জায়গা থাকতে হবে। মানারাতের গুলশান শাখায় এক একরের কম জায়গা ছিল। সেজন্য তারা স্কুলের অংশ থেকে জায়গা চেয়েছিল যাতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের শর্ত পূরণ করতে পারে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা ছিল। স্কুল নির্মাণকালীন শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়কে জায়গা দিতে হলে রাজউকের অনুমোদন লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, রাজউকের কাছে গেলে তারা আর জায়গা পাবে না। সে কারণে বিষয়টি পেন্ডিং ছিল।

dhakapost
দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দেওয়া হয় / ছবি- সংগৃহীত

গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। নিরিবিলি স্থানে ক্যাম্পাস হওয়ায় এবং পড়ার পরিবেশ থাকায় অনেক অভিভাবকই মানারাতমুখী ছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শর্ত মানতে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা না থাকায় রাজধানীর ক্যাম্পাস গুটিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে হবে। সাভারের আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে শহরের মেধাবী ও বিত্তবান শিক্ষার্থী হাতছাড়া হবে। সেই ভয়ে এতদিন চুপ ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। এখন নতুন ট্রাস্টি বোর্ড কী করে, সেটাই দেখার বিষয়।

কেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য বেনজির আহমেদ, আজিজ আল কায়সার, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও নুরুল এইচ খান। এর মধ্যে বেনজির আহমেদ, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে কারাগারে আছেন।

দুদকের মামলায় ওই চারজনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে আজিম উদ্দিনও রয়েছেন। বাকি সদস্যদের কী কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে তা উল্লেখ করা হয়নি।

পুনর্গঠিত বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে রয়েছেন টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এমডি এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের এমডি আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান ও ইউনাইটেড ফসফরাস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ। তারা আগের বোর্ডেও ছিলেন। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। আগের বোর্ডে তিনি উপাচার্যের পদাধিকার বলে সদস্য ছিলেন।

dhakapost
মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় / ছবি- সংগৃহীত

নতুন বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে রাখা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন এবং উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও সীমা আহমেদ। তাদের মধ্যে পরের তিনজন বোর্ডে নতুন যুক্ত হয়েছেন।

মানারাতের নতুন সদস্য

মেয়র আতিকুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক অর্থ ও বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (আইইবি) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার (পপি) এবং সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক ছাত্রলীগনেতা মিহির কান্তি ঘোষাল। এছাড়া পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যও বোর্ডে রয়েছেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে লাকসাম প্রেসক্লাবের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ট্রাস্টি নিয়োগে ‘অসন্তোষ’

আপডেট সময় ০৪:২৭:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিষয়টি ‘সরল চোখে’ দেখছে না অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে দলীয়করণের ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন তারা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিনির্ধারকদের মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি চলতে থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে রাজনীতিকরণসহ শিক্ষার মান হারাবে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশে ধরে রাখা কষ্টকর হবে।

জানা গেছে, ‘দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার’ অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে সরকার। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে চারজন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে বা স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিতে পারেন। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় আচার্যের অনুমোদনে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে।

দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে সরকার। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। তাদের মধ্যে চারজন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কারাগারে রয়েছেন

কিছুদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হয়। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকে। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও ১৩ জন। নতুন বোর্ডে পুরোনো ট্রাস্টিদের কেউ স্থান পাননি।

dhakapost
সরকার কর্তৃক ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে— বলছেন শিক্ষাবিদরা / ছবি- সংগৃহীত

 

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কারণ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বোর্ড সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও কিছু কর্মকর্তা মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গি কার্যক্রমের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কাজে যুক্ত করেন। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে তারা শিক্ষার্থীদের উসকে দেন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ট্রাস্টি এবং একজন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা পোস্ট। তারা বলছেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। সাবেক ট্রাস্টিদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা  ছিল প্রমাণিত। এছাড়া হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে নর্থ সাউথের নাম জড়িয়ে আছে। সে কারণে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে খুব একটা শোরগোল হয়নি। তবে, মানারাতে কেন সরকারিভাবে ট্রাস্টি গঠন করা হলো, তা অনেকেরই বোধগম্য নয়।

তাদের মতে, এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে দেওয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক দিক উন্মোচিত হবে। এতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতির পেছনে বেশি সময় ব্যয় করবেন, পড়ানোয় কম আগ্রহী হবেন। শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন পদ দখল নিয়ে রেষারেষি হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু বিত্তবানদের সন্তানরা পড়াশোনা করেন, অভিভাবকরা তাদের দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আগ্রহী হবেন না। এসব শিক্ষার্থী দেশের বাইরে চলে যাবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে বা স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রয়োজনীয় আদেশ-নির্দেশ দিতে পারেন

সরকারিভাবে নর্থ সাউথ ও মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের প্রভাব কেমন হতে পারে— জানতে চাইলে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান  বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পেছনে একটা গ্রাউন্ড আছে। অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল, সে কারণে পাঁচজন ট্রাস্টি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন নিয়ে কথা আছে। কোনো কিছু না বলে সরকারিভাবে এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হলে ভবিষ্যতে এ পথে (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠন) কেউ আর আসবেন না।

‘যাদের প্রচুর অর্থ আছে এবং তারা হয়তো সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করতে চান— এমন লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে আসেন। সরকারিভাবে হস্তক্ষেপ হলে কেউ আর এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন না। আমার মনে হয় না এভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা উচিত।’

বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে দেখেন না’ উল্লেখ করে চৌধুরী মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে এটি নেতিবাচক মনে হয়। ট্রাস্টি বোর্ড সরকারিভাবে দখল করা হলে শিক্ষক নিয়োগও দলীয়ভাবে হবে। ফলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা সেভাবে হবে না। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশে থাকবে না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের পর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পরে তিনি এলডিপিতে যোগ দেন।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কারণ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বোর্ড সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও কিছু কর্মকর্তা মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গি কার্যক্রমের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কাজে যুক্ত করেন। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে তারা শিক্ষার্থীদের উসকে দেন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন

ট্রাস্টি গঠন নিয়ে মতামত জানতে চাইলে অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখানে নাকি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলে, সেজন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকারিভাবে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের আইনগত কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। যখন এটা (ট্রাস্টি বোর্ড গঠন) নিয়ে আলোচনা শুরু হলো, তখন আমি পদত্যাগপত্র দিয়ে চলে এসেছি। সরকার যদি চায়, তাহলে মানারাতে শিক্ষক রাজনীতি শুরু হতে পারে। যা ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’

জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড গঠনে আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। নির্বিচারে যদি আইনের প্রয়োগ করা হয়, তাহলে কিন্তু সংকট থাকবেই। মানসম্মত উন্নয়ন না করলে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিকতে পারবে না।

‘ট্রাস্টি বোর্ড গঠন একটি সাময়িক ব্যবস্থা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকে থাকতে হলে কোয়ালিটি এডুকেশন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিতে প্রচুর স্বাধীনতা দরকার। তা না হলে আস্তে আস্তে এগুলো সব মরে যাবে।’

মানারাতের সৃষ্টি যেভাবে

ইসলামিক স্কলার তৈরির মানসে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামিদ আল খতিব রাজধানীর গুলশানে কিছু জায়গা কিনে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য দান করেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (তখনকার ডিআইটি) থেকে আট বিঘা জমি কেনেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বাইরে ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট অ্যাক্ট অনুসারে ‘মানারাত ট্রাস্ট’ গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফুয়াদ আব্দুল হামিদ আল খতিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শুরু হয়। তখন গুলশান-২ এর একটি ভাড়া বাড়িতে স্কুল পরিচালনা করা হতো।

১৯৯৫ সালে ট্রাস্টটি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সে লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। ২০০১ সালের ৩ এপ্রিল ট্রাস্টটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি অনুমোদন লাভ করে। ওই বছরের ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। ২৮ মে ঢাকার গুলশানে ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। এরপর সাভারে ১০ বিঘা জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুর রহমান সাভারের বিরুলিয়ার আশুলিয়া মডেল টাউনে স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা দুটি ট্রাস্ট দিয়ে পরিচালিত। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের শর্ত ছিল, শহরের মধ্যে হলে এক একর এবং বাইরে হলে দুই একর জায়গা থাকতে হবে। মানারাতের গুলশান শাখায় এক একরের কম জায়গা ছিল। সেজন্য তারা স্কুলের অংশ থেকে জায়গা চেয়েছিল যাতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের শর্ত পূরণ করতে পারে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা ছিল। স্কুল নির্মাণকালীন শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়কে জায়গা দিতে হলে রাজউকের অনুমোদন লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, রাজউকের কাছে গেলে তারা আর জায়গা পাবে না। সে কারণে বিষয়টি পেন্ডিং ছিল।

dhakapost
দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দেওয়া হয় / ছবি- সংগৃহীত

গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। নিরিবিলি স্থানে ক্যাম্পাস হওয়ায় এবং পড়ার পরিবেশ থাকায় অনেক অভিভাবকই মানারাতমুখী ছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শর্ত মানতে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা না থাকায় রাজধানীর ক্যাম্পাস গুটিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে হবে। সাভারের আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে শহরের মেধাবী ও বিত্তবান শিক্ষার্থী হাতছাড়া হবে। সেই ভয়ে এতদিন চুপ ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা। এখন নতুন ট্রাস্টি বোর্ড কী করে, সেটাই দেখার বিষয়।

কেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য বেনজির আহমেদ, আজিজ আল কায়সার, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও নুরুল এইচ খান। এর মধ্যে বেনজির আহমেদ, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে কারাগারে আছেন।

দুদকের মামলায় ওই চারজনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে আজিম উদ্দিনও রয়েছেন। বাকি সদস্যদের কী কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে তা উল্লেখ করা হয়নি।

পুনর্গঠিত বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে রয়েছেন টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এমডি এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের এমডি আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান ও ইউনাইটেড ফসফরাস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ। তারা আগের বোর্ডেও ছিলেন। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। আগের বোর্ডে তিনি উপাচার্যের পদাধিকার বলে সদস্য ছিলেন।

dhakapost
মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় / ছবি- সংগৃহীত

নতুন বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে রাখা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন এবং উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও সীমা আহমেদ। তাদের মধ্যে পরের তিনজন বোর্ডে নতুন যুক্ত হয়েছেন।

মানারাতের নতুন সদস্য

মেয়র আতিকুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সাবেক অর্থ ও বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (আইইবি) সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার (পপি) এবং সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক ছাত্রলীগনেতা মিহির কান্তি ঘোষাল। এছাড়া পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যও বোর্ডে রয়েছেন।