কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব কয়েক দশকের। এছাড়া ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বরাবরই সরব পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মির সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা দাবি করেছে জার্মানি।
এটিকে পাকিস্তানের জন্য বড় কূটনৈতিক জয় বলে মনে করা হচ্ছে। রোববার (৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মির বিরোধ সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্ভবত এবারই প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাশ্মির বিরোধ সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা চাইলেন। মূলত গত শুক্রবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আহ্বানকে জার্মানিতে পাকিস্তানের বড় কূটনৈতিক জয় বলে মনে করা হচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মির বিরোধ সমাধানে জার্মানি কী ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এবং তার জার্মান সমকক্ষ অ্যানালেনা বেয়ারবকের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হলে এই উত্তর দেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গত শুক্রবার জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরে উপস্থিত পাকিস্তানিরাও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবকের এই মন্তব্যে আনন্দদায়কভাবে বিস্মিত হন। পাকিস্তানিরা আশা করছেন, বেয়ারবকের এই মন্তব্য জার্মান পররাষ্ট্র নীতিতে পরিণত হবে।
এদিন অ্যানালেনা বেয়ারবক বলেন, ‘কাশ্মিরের পরিস্থিতি নিয়ে জার্মানিরও ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে। অতএব, আমরা এই অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে জাতিসংঘের ভূমিকাকে নিবিড়ভাবে সমর্থন করি।’
এদিকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিরোধের বিষয়ে মন্তব্য করার সময় কাশ্মির বিরোধ নিয়েও মন্তব্য করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরের ইস্যু উত্থাপন অব্যাহত রাখব। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক আইন সর্বত্র প্রযোজ্য হওয়া উচিত এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবকে সর্বত্র সম্মান করা উচিত।’
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম বলছে, কাশ্মির উস্যুতে জার্মানির এই অবস্থান পরিবর্তনের কৃতিত্ব জার্মানিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ডক্টর মোহাম্মদ ফয়সালকে দেওয়া উচিত। কারণ তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সমন্বয় করেছিলেন এবং কাশ্মির বিরোধ ও ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে কাশ্মিরিদের দুর্দশার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলেছিলেন।
এদিকে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জার্মানিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে রুখতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের ভূমিকা এবং দায়িত্ব রয়েছে, বিশেষ করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস।’
এর আগে গত শুক্রবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড ব্লোমের আজাদ কাশ্মির (এজেকে) সফরে আপত্তি জানান ভারতীয় এই মুখপাত্র। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র দাবি করেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই সফর এড়ানো যেত এবং আজাদ কাশ্মির বা এজেকে শব্দটি ব্যবহার করা উচিত হয়নি। তবে ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করে ওয়াশিংটন।
এদিকে উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান আজাদ কাশ্মিরে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সফরের বিষয়ে বলেছেন, ‘এটিকে পাকিস্তানের প্রতি একটি শুভেচ্ছার প্রতীক মনে করুন। ইউএসজি কাশ্মির ইস্যুতে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে চায় না। পাক-শাসিত কাশ্মিরে এই সফরে অ-নিরাপত্তা সহযোগিতার (যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে) ওপর ফোকাস করা হয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন গতি সৃষ্টি করেছে।’