পৃথিবীতে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভালো-মন্দ, সুবিধা অসুবিধার প্রতি খেয়াল রাখা পরিবার প্রধানের দায়িত্ব-কর্তব্য। পাশাপাশি পরকালের জীবনে যেন আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতে চিরস্থায়ী হতে পারেন পরিবারের সবাই এ বিষয়ে চেষ্টা ও খবরদারি করা, প্রয়োজনে কঠোরতা-নম্রতা করাও কর্তার একান্ত দায়িত্বের অংশ।
আল্লাহ তায়ালা পরিবার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্ৰাপ্ত হয় তা-ই করে। -(সুরা আত-তাহরিম, আয়াত, ৬)
মুফাসিসিরদের মতে এই আয়াতে সাধারণ মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন,পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।
এই নির্দেশনার পর জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা উল্লেখ করে অবশেষে এ কথাও বলা হয়েছে যে, যারা জাহান্নামের যোগ্য হবে, তারা কোন শক্তি, দলবল, খোশামোদ অথবা ঘুষের মাধ্যমে জাহান্নামে নিয়োজিত কঠোরপ্রাণ ফেরেশতাদের কবল থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। এই ফেরেশতাদের নাম ‘যাবানিয়া’ ৷
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়,
আল্লাহর আজাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোন মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে পরিবারের নেতৃত্বের বোঝা তার কাঁধে রয়েছে তার সদস্যরা যেন আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমত সে শিক্ষা দেয়াও পরিবার প্রধানের কাজ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল বা দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বুখারী: ৮৯৩, ৫১৮৮)
আলেমদের মতে, পরিবারকে জাহান্নাম ও আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার উপায় হল-
আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, পরিবারকে সেসব কাজ করতে নিষেধ করতে হবে এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, পরিবার-পরিজনকেও সেগুলো করতে আদেশ করতে হবে। এই কর্মপন্থাই পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারবে। -(ইবন কাসীর)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে রহমত করুন, যে নিজে রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়েছে, এবং তার স্ত্রীকে জাগিয়েছে, সে যদি দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। আল্লাহ ওই মহিলাকেও রহমত করুন যে, নিজে রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বামীকে জাগিয়েছে, যদি সে দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে।’ (আবু দাউদ: ১৪৫০, ইবনে মাজহ: ১৩৩৬)
আরেক হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজের জন্য সাত বছর বয়সে পৌছলেই নির্দেশ দাও, আর তাদেরকে ১০ বছর হলে এর জন্য দণ্ড দাও। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও। -(আবু দাউদ: ৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৮০)
একইভাবে পরিবার পরিজনকে নামাজের সময়, রোজার সময় হলে স্মরণ করিয়ে দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই বিতর পড়তেন তখনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে ডাকতেন এবং বলতেন, ‘হে আয়েশা! দাঁড়াও এবং বিতর আদায় কর।’ (সহীহ মুসলিম, ৭৪৪, মুসনাদে আহমাদ: ৬/১৫২)