রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছে তাইওয়ান। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ‘স্বৈরাচারীবাদের সম্প্রসারণ’ প্রতিরোধ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছে ভূখণ্ডটি।
উজবেকিস্তানের সমরখন্দে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠকের একদিনের মাথায় শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এই মন্তব্য করল তাইওয়ান। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর ইউক্রেন প্রশ্নে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের জন্য চীনের প্রশংসা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠকটি উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও জোটের শীর্ষ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। এসসিও’র এই শীর্ষ সম্মেলনকে অনেকে দেখছেন পশ্চিমা বিশ্বে ন্যাটোর মত জোটগুলোর প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য একটি পাল্টা জোট হিসেবে। এতে চীন ও রাশিয়া ছাড়াও আছে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো। বর্তমান বিশ্বে ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এই সম্মেলনের ওপর ছায়া ফেলেছে।
আর তাই বৃহস্পতিবার চীন ও রাশিয়ার দুই নেতার বৈঠকটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। আর এই বৈঠকে পশ্চিমের বিরুদ্ধে নিজেদের কৌশলগত সম্পর্কের প্রশংসা করেছেন পুতিন-জিনপিং। এ এফপি বলছে, উজবেক শহর সমরখন্দে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে শি জিনপিং বলেছেন, ‘পরাশক্তির ভূমিকা গ্রহণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক’ তিনি। অন্যদিকে স্ব-শাসিত তাইওয়ানের ওপর চীনের দাবির প্রতি রাশিয়ার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুতিন। এই ভূখণ্ডটিকে বেইজিং তার নিজস্ব অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করে এবং একদিন এটি দখল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চীন।
দুই কর্তৃত্ববাদী এই নেতার মধ্যে সম্পর্ক তাইপেইকে কার্যত আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাইওয়ানের আশঙ্কা, শি জিনপিং হয়তো একদিন রাশিয়ার মতো করে প্রতিবেশীকে আক্রমণ করতে পারে। মূলত তাইওয়ানকে বশে আনতে দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি দিয়ে আসছে চীন। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার এক বিবৃতি দেয় তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বকে অবমাননা করে আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে এমন মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্বৈরাচারী সম্প্রসারণবাদী সরকারকে অনুসরণ করায় রাশিয়ার তীব্র নিন্দা করছে তাইওয়ান।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে করা কাজকে উস্কানিমূলক বলে আখ্যায়িত করছে রাশিয়া। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার বিষয়ে চীনা ও রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসকদের সৃষ্ট ক্ষতিকেই তুলে ধরে।’ উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং। অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি। প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।