ঢাকা ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ২২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নওগাঁয় ট্রাক্টরের চাপায় মাদ্রাসা শিশুর মৃত্যু  আওয়ামী লীগের টাকার লোভে না পড়ে নিজের দলের জন্য কাজ করার করার হুঁশিয়ারি -শ্যামা ওবায়েদের সংসারের হাল ধরতে বাবার সাথে হাওরে কৃষিকাজ ও দিনে ৬টি টিউশনি করা মেয়েটিই বিসিএসে পুলিশের এএসপি ফরিদপুরের নগরকান্দায় একদিন পরে মিললো কিশোরের লাশ সাতক্ষীরা সদরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রশিবিরের দোয়া অনুষ্ঠান পটুয়াখালী বাউফলে যুবদলের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ককে বহিষ্কার  ভালুকায় মোটরসাইকেল চাপায় বৃদ্ধ নিহত রাজশাহী বাগমারায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় নিহত ২, আহত ৬ পুলিশ  গাজীপুর কর্নপুর বড়দিঘী ঈদগার কমিটি গঠন বগুড়া গাবতলীতে জমিজমা সংক্রান্ত ঘটনার জের ধরে সংর্ঘষ, আটক ১
কমলনগরে জেলেদের চাল বিতরণে অর্ধকোটি টাকা আদায়

জেলেদের তোপের মুখে পালালেন প্রশাসক 

জাটকা সংরক্ষণের ভর্তুকি হিসেবে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর  উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নে ১৮শ’ কার্ডধারী জেলের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণে মোটা অঙ্কের টাকা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । জেলে প্রতি আড়াই হাজার থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন ইউপি সদস্যরা। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আদায় করছেন বলে জানা যায়। এ অপকর্মে মূল হোতা ওই ইউনিয়নের ৬ নাম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. হেলাল ও ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম বলে জানান জেলেরা। শুক্রবার সকালে চাল বিতরণ শুরু করলে বঞ্চিত জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করলে ওই সময় ওই ইউনিয়নের প্রশাসক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম পালিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রাহাতুজ জামান,  উপজেলা সেনাবাহিনীর কর্মরত টিম ও থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। খোঁজ  নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নে ২হাজার ৩শ’ ১৮কার্ডধারী জেলে রয়েছেন। ওই কার্ডের বিপরীতে  জেলে প্রতি ৮০কেজি হিসেবে ১৮শ’ জেলের জন্য ১৪৪মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ইউপি সদস্যরা সব জেলে থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নিয়ে  প্রকৃত জেলে নয় এমন লোকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এতে জেলেদের মাঝে ক্ষোভ শুরু হয়।

সরজমিন গিয়ে জেলেদের চাল নিতে আসা লাইনে দাড়ানো বেশ কিছু কার্ডধারীদের সাথে  কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে তারা এ পেশায় নেই কিন্তু টাকার বিনিময়ে চাল পাচ্ছেন বলে জানাম তারা। এ ওই চালের তালিকায় মৃত ব্যাক্তির নামও আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

ওই ইউনিয়নের ছিদ্দিক উল্লাহ, মাকছুদ, রহিম মাঝি, দেলওয়ার হোসেন ও মোকতার জানান, টাকার বিনিময়ে কৃষক, রিক্সার ড্রাইভার জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা টাকা দেয়নি তাদের নাম বাদ দিয়েছেন। এ সব অপকর্মের মূল হোতা কাশেম মেম্বার ও হেলাল মেম্বার বলে জানান তারা।

উপকূলীয় মৎস্য জীবি সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, এ সমিতির ৮০ জন জেলে নিয়মিত নদীতে ধরছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে তারা এখন নদীতে নামছে না। কিন্ত তারা কেউ চাল পায়নি। যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে তারা চাল পেয়েছে।

জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ৬নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. হেলাল মেম্বার কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.জহিরুল ইসলাম  বলেন, চাল বিতরণ শুরু করলে হঠাৎ জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করে পরিষদের দিকে আসছিলো পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আমি সরে গিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রহাতুজ জামান বলেন, ২হাজার ৩শ’১৮ জেলের বিপরীতে আমরা ওই ইউনিয়নে ১৮শ’ জেলের মাঝে চাল বিতরণ করছি কিন্তু যারা পায়নি তাদের মাঝে একটুতো ক্ষোভ থাকবেই। জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়ে থাললে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা সংরক্ষণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের ষাট নল থেকে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এরিঅ মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করেছে সরকার। সরকার নদীতে না নামতে এ দুই মাস জেলেদের সহায়তার জন্য ৮০ কেজি করে ভিজিএফ চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নওগাঁয় ট্রাক্টরের চাপায় মাদ্রাসা শিশুর মৃত্যু 

কমলনগরে জেলেদের চাল বিতরণে অর্ধকোটি টাকা আদায়

জেলেদের তোপের মুখে পালালেন প্রশাসক 

আপডেট সময় ০৭:৫৬:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

জাটকা সংরক্ষণের ভর্তুকি হিসেবে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর  উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নে ১৮শ’ কার্ডধারী জেলের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণে মোটা অঙ্কের টাকা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । জেলে প্রতি আড়াই হাজার থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন ইউপি সদস্যরা। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আদায় করছেন বলে জানা যায়। এ অপকর্মে মূল হোতা ওই ইউনিয়নের ৬ নাম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. হেলাল ও ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম বলে জানান জেলেরা। শুক্রবার সকালে চাল বিতরণ শুরু করলে বঞ্চিত জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করলে ওই সময় ওই ইউনিয়নের প্রশাসক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম পালিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রাহাতুজ জামান,  উপজেলা সেনাবাহিনীর কর্মরত টিম ও থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। খোঁজ  নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নে ২হাজার ৩শ’ ১৮কার্ডধারী জেলে রয়েছেন। ওই কার্ডের বিপরীতে  জেলে প্রতি ৮০কেজি হিসেবে ১৮শ’ জেলের জন্য ১৪৪মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ইউপি সদস্যরা সব জেলে থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু টাকা নিয়ে  প্রকৃত জেলে নয় এমন লোকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এতে জেলেদের মাঝে ক্ষোভ শুরু হয়।

সরজমিন গিয়ে জেলেদের চাল নিতে আসা লাইনে দাড়ানো বেশ কিছু কার্ডধারীদের সাথে  কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে তারা এ পেশায় নেই কিন্তু টাকার বিনিময়ে চাল পাচ্ছেন বলে জানাম তারা। এ ওই চালের তালিকায় মৃত ব্যাক্তির নামও আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

ওই ইউনিয়নের ছিদ্দিক উল্লাহ, মাকছুদ, রহিম মাঝি, দেলওয়ার হোসেন ও মোকতার জানান, টাকার বিনিময়ে কৃষক, রিক্সার ড্রাইভার জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যারা টাকা দেয়নি তাদের নাম বাদ দিয়েছেন। এ সব অপকর্মের মূল হোতা কাশেম মেম্বার ও হেলাল মেম্বার বলে জানান তারা।

উপকূলীয় মৎস্য জীবি সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, এ সমিতির ৮০ জন জেলে নিয়মিত নদীতে ধরছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে তারা এখন নদীতে নামছে না। কিন্ত তারা কেউ চাল পায়নি। যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে তারা চাল পেয়েছে।

জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ৬নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. হেলাল মেম্বার কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.জহিরুল ইসলাম  বলেন, চাল বিতরণ শুরু করলে হঠাৎ জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করে পরিষদের দিকে আসছিলো পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আমি সরে গিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রহাতুজ জামান বলেন, ২হাজার ৩শ’১৮ জেলের বিপরীতে আমরা ওই ইউনিয়নে ১৮শ’ জেলের মাঝে চাল বিতরণ করছি কিন্তু যারা পায়নি তাদের মাঝে একটুতো ক্ষোভ থাকবেই। জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়ে থাললে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা সংরক্ষণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের ষাট নল থেকে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এরিঅ মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করেছে সরকার। সরকার নদীতে না নামতে এ দুই মাস জেলেদের সহায়তার জন্য ৮০ কেজি করে ভিজিএফ চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়।