মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তনের ফলে শীতকালে সব বয়সী মানুষের কমবেশি জ্বর, ঠান্ডা, কাশি লেগে থাকে। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, অতিরিক্ত ঠান্ডায় তাদের নানা ধরনের বিপত্তি পোহাতে হয়। তাই শীতকালে নিজেকে রোগজীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে গরম পোশাকের পাশাপাশি খাবারের মাধ্যমেও শরীর উষ্ণ রাখতে হবে।
শীতকালে সেই ধরনের খাবারকেই প্রাধান্য দিতে হবে, যেসব খাবার হজম হতে সময় নেয়। এ ধরনের খাবার পরিপাক হতে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। এর ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হয় এবং শরীর উষ্ণ রাখে।
ভেষজ ও মসলাজাতীয় উপাদান
তুলসীপাতা, পুদিনাপাতা, দারুচিনি, তেজপাতা, এলাচি, লবঙ্গ, জায়ফল, আদা, রসুন, লেমনগ্রাস এবং পেঁয়াজ, পেঁয়াজপাতা ও পেঁয়াজকলি—শীতে এসব খাবার শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া এসব উপাদান অনেক পুষ্টিগুণসম্পন্ন। রান্নার পাশাপাশি এগুলো দিয়ে চা করে খেতে পারেন। চিনি ছাড়া এগুলোর চা ঠান্ডা কাশির হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
মূলজাতীয় সবজি
মাটির নিচে জন্মায় এমন সবজি যেমন—গাজর, মুলা, শালগম, আলু, মিষ্টি আলু, কচুমুখী, বিটরুট ইত্যাদি শরীর উষ্ণ রাখবে। এই সবজিগুলো হজম হতে অনেক সময় নেয়। ফলে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে।
প্রাণিজ প্রোটিন
খাসি, গরু, হাঁস ও মুরগির মাংস এবং ডিম শরীর উষ্ণ রাখবে। কিন্তু এই খাবারগুলো শীতকালে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যাবে না। তাতে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। শীতকালে শরীরকে রোগজীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে গরম স্যুপ, ঝোলজাতীয় তরকারি, বিভিন্ন ধরনের মসলার চা ও কফি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। এসব খাবার শরীরে তাপ উৎপন্ন করে।
শুকনো ফল
খেজুর, অ্যাপ্রিকট, আখরোট, কাজুবাদাম, তিল, কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি খেতে হবে শীতে। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন ও আঁশ। শরীর যখন শক্তির জন্য এসব বাদাম ও বীজ ভেঙে ফেলে, তখন শরীরে তাপ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ফলে আমাদের শরীর উষ্ণ থাকে। পাশাপাশি শুকনো এসব ফল অতিরিক্ত চর্বি, ওজন, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচল ভালো রাখে।
ঘি ও মধু
ঘিতে থাকা চর্বি শরীর উষ্ণ রাখে। শুধু তা-ই নয়, ঘি খাবার হজম করতে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং ঠান্ডাজনিত ফ্লু থেকেও রক্ষা করে থাকে। মধু প্রাকৃতিকভাবেই উষ্ণ। নিয়মিত মধু খেলে শরীর উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মধু সর্দি-কাশি ও ফ্লু থেকে মুক্ত রেখে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ো খেতে পারেন। এ ছাড়া মসলা চা কিংবা তুলসী চায়ে মধু ব্যবহার করতে পারেন। স্বাদের পাশাপাশি এতে পুষ্টিগুণও বেড়ে যাবে।
আরও কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে
- দৈনিক চাহিদার তুলনায় পানি খুব কম পরিমাণে পান করা হয় শীতকালে। তাই পানির ঘাটতি পূরণ করতে পানিজাতীয় খাবার অর্থাৎ ফল ও ফলের জুস, স্যুপ, ঝোলজাতীয় তরকারি, বিভিন্ন ধরনের মসলার চা ও কফি রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ছয়টি উপাদান ভরপুর পরিমাণে রাখতে হবে। চেষ্টা করবেন খাবারে বৈচিত্র্য আনতে। পাশাপাশি রঙিন শাকসবজি খেতে হবে নিয়মিত।