দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মঘণ্টা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন পরামর্শক কমিটি’। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটি। সরকার তা বাস্তবায়ন করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা বাড়তে পারে।
প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এরই মধ্যে সুপারিশ প্রণয়নে প্রায় ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে কমিটি। ডিসেম্বরের মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। পুরো কাজ শেষ করতে জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মো রফিকুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, গণসাহায্য সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) বেগম সামসি হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরাম মারিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ এবং শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম। কমিটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ৪৫টি সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের। রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কাজ শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন তারা।
কমিটির সদস্যরা জানান, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ হলো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ হবে। প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে আপত্তি রয়েছে কমিটির। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এ প্রক্রিয়া পরিবর্তন আনতে উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করবেন তারা। দেশের ৮০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই শিফটে চলে। স্কুলের শিখন ঘণ্টাও পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম। কর্মঘণ্টা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলছে সংস্কার কমিটি। এ ছাড়া শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করার প্রস্তাব দেবেন তারা। সেইসঙ্গে বিদ্যালয় শিক্ষাকে এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মন্ত্রণালয়ের বিকেন্দ্রীকরণ করাসহ বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব দেবে পরামর্শক কমিটি।
কমিটির সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে পরামর্শক কমিটির প্রধান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা দাবি-দাওয়া আছে। অবকাঠামো, ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা সমস্যাও রয়েছে। আমরা হয়তো সুপারিশ করব, তবে সেখান থেকে কতটুকু বাস্তবায়ন করা হবে, সেটা সরকার জানে। সুপারিশে আমাদের কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষাও থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই প্রাথমিকের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা যাতে দায়বদ্ধতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও শর্ত তৈরি করা দরকার, আমরা সেই সুপারিশ করব। শিক্ষার্থীর শেখার ক্ষেত্রে যে বিরাট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, সেটি কীভাবে পূরণ করা যায়, তা আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং শেখার ঘাটতি সমন্বিতভাবে এই দুই বিষয়ের উন্নতিতে কমিটি কাজ করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার চেষ্টা করব। এরপরও কিছু কাজ হয়তো থেকে যাবে। সেজন্য আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধার শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নূরুল আলম দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, আমরা উপজেলা পর্যন্ত যাচ্ছি। সব স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছি। নাইটগার্ড থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সব বিষয় এখানে স্থান পাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা বেশকিছু ত্রুটি পেয়েছি, যা আমাদের সুপারিশে উল্লেখ করব।