রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর একই ব্যক্তি একাধিক দপ্তরের দায়িত্ব পালন করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে জোন -৭ এর উচ্চমান সহকারী কামরুল ইনলামের বিরুদ্ধে। চাকরিতে যোগদানের শুরুতে সেন্ট্রাল নথি রক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁর অধিনে প্রায় আশি হাজার নথি রক্ষিত আছে।
১৯৬০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সকল নথি তাঁর হেফাজতে। তবে সাম্প্রতিক কামরুল পদন্নতি পেয়ে জোন- ৭ এর উচ্চমান সহকারী পদে ও দায়িত্ব পালন করছেন। তবে অদৃশ্য কারণে সেন্ট্রাল নথির দায়িত্ব পালন অব্যহত রেখেছেন। সূত্রের একটাই দাবি , পুরনো নকশার তথ্য জানতে বা নকশা পেতে গ্রাহকের গুনতে হয় ১৫- ২৫ হাজার টাকা। এ টাকার কোনো রাজস্ব ,ভ্যাট ,ট্যাক্স কাউকে দিতে হযনা। কামরুল একাই আত্মসাৎ করেন। রাজউকের একটি বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি , কামরুল পদন্নতি পেলেও ওই টাকার মোহ ছাড়তে নারাজ। এ কারণে সরে আসতে পারেননি এ অসাধু কর্মচারী কামরুল ইসলাম।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নকশা বানিজ্যের অভিযোগ। তিনি দু’টি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাতে না পারায় তার ভাইপো জাকারিয়াসহ একাধিক আত্মীয়স্বজন নিয়োগ দিয়েছেন রাজউকে। আবার একাধিক ব্রোকার নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন।
রাজউকের একাধিক কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , কামরুলের পদন্নতি পেলেও সে রেকর্ড রুমের দায়িত্ব ছাড়ছেন না। তাহলে পদন্নতি দেওয়ার প্রয়োজন কি ছিল ? রাজউকে কেউ সঠিক দায়িত্ব পালন করতে চাইলেও পারছেনা আবার কামরুল পদন্নতি পেয়েও পুরনো দায়িত্ব ছাড়ছে না। কোনো কোনো কর্মচারী দপ্তর পাচ্ছেনা আবার কেউ একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নীরব ভূমিকা যেন সাধারণের মাঝে ক্ষোভের কারণ।
জানা গেছে কামরুল ইসলাম ২০০৬ সালে রাজউকে চাকরিতে যোগদান করেন। রাজউকের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রেকর্ড রুমে দায়িত্ব পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। তাঁর গ্রামে রয়েছে আলিশান বাড়ি ও বিঘায় বিঘায় জমি ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ক্রয় করেছেন। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা কামরুল রাজউকে চাকরি পেলে ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা।
কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়না। রাজউকে চাকরি মানে আলাদিনের চেরাগ। রাজউকে চাকরি নিয়ে আপন ভাইয়ের ছেলে জাকারিয়াসহ পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে চাকরি দিয়েছেন। পরিবারের ওই সকল লোক দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নকশা সরবরাহ করার অভিযোগ রযেছে কামরুলের বিরুদ্ধে। কুমিল্লা জেলার বরুরা থানার শিয়ালোরার শিকারপুর গ্রামের কোরবান আলির ছেলে কামরুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়িতে অঢেল সম্পদ থাকেলেও রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।
উল্লেখ্য যে সেন্ট্রাল নথি রুমে কামরুলের বক্তব্য নিতে গেলে নথি রুমে তাঁর আপন ভাইয়ের ছেলে জাকারিয়ার দেখা মেলে। কামরুলের খোঁজ জানতে চাইলে জাকারিয়া সাংবাদিকরদের বলেন, কাকা জোন – ৭ এর উচ্চমান সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রেকর্ড রুমের দায়িত্বে ও আছেন। আপনাদের কি প্রয়োজন বলেন , আমি আপনাদের ব্যবস্থা করে দেব। আমি এর বেশি বলতে পারবনা।
কাকা মাঝে মাঝে আসেন আবার জোন – ৭ এ চলে যান। জাকারিযা আরও বলেন , আমি তার অনুপস্তিতে আমি দায়িত্ব পালন করি। তবে রাজউকের একাধিক সূত্রের দাবি , রাজউকের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা সেন্ট্রাল নথি রুম। এখানে স্টাফ ছাড়া বহিরাগত লোকদের দায়িত্ব দিয়ে বিধি লঙ্ঘন করছেন রাজউক। এখানে নথি চুরির ঘটনা ঘটলে দায়ভার কে নেবে , এমন প্রশ্নই কর্মকর্তা কর্মচারীর ভেতর। এসব অনিয়মে গোটা রাজউক অস্বস্তির আবহ।
এদিকে কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে রেকর্ডরুপে গিয়ে পাওয়া যায়নি, পরে জোন-৭ এর হাজিরা প্রদানকারী ( এম এল এস ) জামাল এর দপ্তরে গিয়ে খোঁজ জানতে চাইলে তিনি কামরুলকে চিনেনা বলে জানান। ওই দপ্তরের একাধিক কর্মচারী আমাদের মাতৃভূমি’ কে বলেন, কামরুল সকালে হাজিরা দিয়ে লাপাত্তা হযে যান। কোথায় যান আমরা জানিনা। জামাল কামরুলের বিষয়টি জেনেও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে লুকানো বিষয়টি রহস্যজনক।
আবার অনেকে চাপা কন্ঠে বলেন ,এখানে অনেক দুর্নীতি হয় আমরা বলতে পারছিনা। আপনারা তদন্ত করে দেখেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন- ৭ এর পরিচালক শিলাব্রত কর্মকার এর কাছে কামরুলের বিষয় জানতে চাইলে , আমাদের মাতৃভূমি ’কে বলেন, জোন – ৭ এ শতাধিক কর্মচারী আছে আমি সবাইকে চিনিনা। আপনারা যখন কামরুলের বিষয়টি নজরে এনেছেন তাহলে আমার সামনে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেব। আমি বিশেষকরে এক সপ্তাহ আগে রাজউকে যোগদান করেছি এ জন্যে সবাইকে চিনিনা।
আপনারা কোনো অনিয়ম পেলে আবশ্যই আমাকে জানাবেন। আপনার দপ্তরের জামাল কামরুলের হাজিরা দিয়ে চলে যাওয়ার বিষযটি কেনো গোপন রাখলেন , এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সে হয়ত বুঝতে পারেনি। আর খোঁজখবর জানতে চাইলে আমাকে বলবেন আমি আপনাদেরে তথ্য দেব।