ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ

ঢাকায় আট ফ্ল্যাটের মালিক সিআইডির এসপি শামীমা

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন। নিয়মিত পদোন্নতিতে ওই ব্যাচের প্রায় সবাই এখন অতিরিক্ত ডিআইজি বা ডিআইজি পদে রয়েছেন। তবে শামীমা ইয়াসমিন রয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) পদেই। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কেমিক্যাল ল্যাবের বিশেষ সুপার তিনি। অনেক বছর এই পদে থাকলেও বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে শুরু করে অভিজাত গুলশান পর্যন্ত অন্তত ১০টি ফ্ল্যাট কিনেছেন নামে-বেনামে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘর এলাকায় ৫২ বিঘা জমি আর গুলশানে কিনেছেন প্লট। রয়েছে একাধিক গাড়ি। আমাদের মাতৃভূমির অনুসন্ধান আর সংশ্লিষ্ট সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।

সিদ্ধেশ্বরীর কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে শামীমা যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, সেখানে পুলিশের প্রভাব দেখিয়ে অন্যের ফ্ল্যাটের জায়গা, পার্কিং স্পেস আর অ্যাপার্টমেন্টের কমন স্পেস দখলে নিয়েছেন। রাজউকের নকশা অমান্য করে চালাচ্ছেন সংস্কারকাজ। এসপি পরিচয়ে গত সাত বছরে সেখানে দেননি কোনো সার্ভিস চার্জ। এতে বকেয়া পড়েছে ১৭ লাখ টাকা। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন তার হাতে। ফ্ল্যাট মালিক সমিতি প্রতিবাদ করলে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন তিনি। উপায় না পেয়ে তার বিরুদ্ধে সিআইডির প্রধান, রাজউক ও রমনা থানায় অভিযোগ দিয়েছে ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্ট মালিক সমিতি।

পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সূত্র ধরে ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে জানা যায়, শামীমা ইয়াসমিন অভিজাত ১০তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ২৭টি ফ্ল্যাটের মধ্যে চারটির মালিক। সেখানে ১/এ, ১/বি, ৫/এ ও ৫/বি ফ্ল্যাট ২০১৭ সালের জুন মাসে কেনেন তিনি। ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ। এসব ফ্ল্যাটের মধ্যে ১/এ এবং ১/বি নম্বর ফ্ল্যাট এক করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। দুটি ফ্ল্যাটের মোট আয়তন ৩ হাজার ৭৪ বর্গফুট। পঞ্চম তলায় অবস্থিত অন্য দুটি ফ্ল্যাটের একটির আয়তন ১৫০৪ বর্গফুট; অন্যটির আয়তন ১৫৭০ বর্গফুট। অ্যাপার্টমেন্টে চারটি পার্কিং স্পেসের মালিকানাও শামীমার। পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে গেস্ট পার্কিং স্পেসও দখলে নিয়েছেন তিনি।

তবে শামীমা ইয়াসমিন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেছেন, ওই ভবন তিনি চেনেন না, সেখানে কোনোদিন যাননি। তার নামে সেখানে কোনো ফ্ল্যাটও নেই।

নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ওই অ্যাপার্টমেন্টে নিজের নামের পাশাপাশি মেজবাহ উদ্দিন আহমদ, সাবিনা ইয়াসমিন ও আরও দুই স্বজনের নামে শামীমা এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেজবাহ উদ্দিন পুলিশ সুপার শামীমার ভাই এবং সাবিনা ইয়াসমিন তার আপন বোন। তাদের আয় দিয়ে অভিজাত ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়।

তবে শামীমা আমাদের মাতৃভূমির কাছে দাবি করেছেন, মেজবাহ উদ্দিন আহমদ বা সাবিনা ইয়াসমিন নামে তিনি কাউকে চেনেন না।

এ বিষয়ে আমাদের মাতৃভূমির পক্ষ থেকে মেজবাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘সিআইডির এসপি শামীমা ইয়াসমিন আমার আত্মীয়। কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ভবনের ফ্ল্যাট উনারই।’ তাহলে শামীমা তাকে চেনেন না বলে দাবি করলেন কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজবাহ বলেন, ‘উনি (শামীমা) কী কারণে অস্বীকার করছেন সে বিষয়টি আসলে আমি বলতে পারব না।’

পুলিশ কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন কনকর্ড অ্যাপার্টমেন্ট চেনেন না বলে দাবি করলেও ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী থেকে ফ্ল্যাট মালিক সবাই নিশ্চিত করেছেন, শামীমা এই অ্যাপার্টমেন্টেই থাকেন। সরেজমিন ভবনের পার্কিং স্পেসে শামীমার ব্যবহার করা দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-২২৭৭ এবং ঢাকা মেট্রো-গ ২৩-১০৪৬) দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি গাড়ির সামনে ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার লাগানো এবং অন্য গাড়িটি কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখা গেছে। তবে শামীমার দাবি, তার নিজের নামে কোনো গাড়ি নেই।

ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাটের মালিক নিশ্চিত করেছেন, উল্লিখিত ফ্ল্যাটগুলোর মালিক সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমিন। তিনি ফ্ল্যাটগুলো রেজিস্ট্রেশন করে না নিলেও তার দখলে রয়েছে। তার অনিয়ম আর হুমকিতে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের অন্য বাসিন্দাদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে সরেজমিন দেখা গেছে, এসপি শামীমার মালিকানাধীন দ্বিতীয় তলায় ১/বি ফ্ল্যাট নকশাবহির্ভূতভাবে সম্প্রসারণের জন্য ফ্ল্যাট ১/এ এবং ১/সি-এর মাঝের দেয়াল অপসারণ করা হয়েছে এবং নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ১/এ এবং ১/বি নম্বর ফ্ল্যাটের দেয়াল ভেঙে এবং দ্বিতীয় তলার লিফটের সামনে কমন স্পেস দখল করে আরসিসি ঢালাই করে নিজের ফ্ল্যাট বর্ধিত করেছেন শামীমা। কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এর আগে পাঁচ বছর ধরে পুলিশের এই কর্মকর্তা এ জায়গা (কমন স্পেস) গায়ের জোরে দখল করে রেখেছিলেন। এ ছাড়া ভবনের দুই পাশের (উত্তর এবং দক্ষিণ) ভয়েডের একাংশে ঢালাই দিয়ে বন্ধ করেছেন এবং অন্য অংশ বন্ধ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনে জরুরি সিঁড়ির পাশে আলাদা কক্ষ তৈরির কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এসব অনিয়ম থামাতে কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও বিষয়টি আমলে নেননি শামীমা। পরে রাজউকের পক্ষ থেকেও এসব অবৈধ নির্মাণকাজ বন্ধ করার নোটিশ দেওয়া হয় তাকে। তবু নিজের ক্ষমতাবলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. মোশারফ হোসেন শিকদার আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, শামীমা ইয়াসমিন ২০১৭ সালের জুন মাসে ‘কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া’ প্রকল্পের সিদ্ধেশ্বরী অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১/এ, ১/বি, ৫/এ ও ৫/বি ফ্ল্যাট নিজের এবং অন্য কয়েকজনের নামে কিনেছেন। ওই বছরই ফ্ল্যাটগুলো তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু চিঠির মাধ্যমে এবং মৌখিকভাবে বারবার বলা হলেও তিনি এসব ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন নেননি।

মো. মোশারফ হোসেন শিকদার আরও বলেন, ‘তিনি (শামীমা) রাজউকের অনুমোদিত নকশা না মেনে ভবন ভেঙে জায়গা দখল করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাকে এসব বিষয়ে সমাধান করে বারবার রেজিস্ট্রেশন নিতে বলা হলেও তিনি নিচ্ছেন না।’

কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া কমপ্লেক্সের অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকরা জানান, ২০১৭ সালের জুনে শামীমা ফ্ল্যাট কেনার পর থেকেই নানাভাবে অনিয়ম করে আসছেন। শুরু থেকেই তিনি তার কয়েকজন নিজস্ব নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে রাজউক অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে দেয়াল ভাঙা এবং নির্মাণ শুরু করেন। এসব নির্মাণসামগ্রী ভবনের যেখানে-সেখানে ফেলার কারণে বসবাস করাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা নির্মাণ শ্রমিকদের কয়েকদিন ঢুকতে না দেওয়ায় শামীমা পুলিশ ডেকে এনে সবাইকে হুমকি দিয়েছেন এবং কয়েকজন ফ্ল্যাট মালিকের গায়েও হাত তুলেছেন।

কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ২০১৭ সালের জুনে শামীমা চারটি ফ্ল্যাটের মালিক হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সার্ভিস চার্জ দেননি। তার কাছে ১৭ লাখ টাকা সার্ভিস চার্জ বাকি পড়েছে। বিভিন্ন সময় সমিতির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে অনুরোধ করলেও তিনি কোনো বিল পরিশোধ করবেন না জানিয়ে দেন এবং বাজে ব্যবহার করেন।

মো. মিজানুর রহমান জানান, ভবনের ডিজাবেল পার্ক, কমন স্পেস, সিঁড়িঘর, ভয়েড, মিনি স্টোররুমসহ বিভিন্ন জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের এ কর্মকর্তা দখল করে রেখেছেন। তার কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে কীভাবে মামলা দিয়ে শায়েস্তা করতে হয়, সেটাও শামীমা দেখবেন বলে হুমকি দেন।

মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, শামীমার অবৈধ নির্মাণকাজের বিরুদ্ধে কথা বললেই তিনি পুলিশের হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর রমনা থানা, রাজউক এবং সিআইডি প্রধানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি পুলিশের কর্মকর্তা হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় শামীমা তার গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। সে ঘটনায় তিনি রমনা থানায় জিডিও করেছিলেন। মনিরুজ্জামান আরও বলেন, নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনের ভেতরে দেয়াল ভাঙা এবং অবৈধভাবে বর্ধিতকরণ ও নির্মাণের কারণে ভবনটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

পুলিশ অভিযোগ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি বলে মনিরুজ্জামান দাবি করলেও সিআইডির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আমাদের মাতৃভূমিকে বলেছেন, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ফ্ল্যাট মালিকদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। কয়েকজনের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, বিসিএস ক্যাডারের পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা সব মিলিয়ে মাসে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো বেতন-ভাতা পান। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেও এসপি শামীমার এত সম্পদের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়া এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ম্যাগনোলিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসপি শামীমার মালিকানাধীন ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের চারটি ফ্ল্যাটের দাম অন্তত ৮ কোটি টাকা।

অন্যান্য সম্পদ

সূত্র বলছে, রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে শান্তিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ‘কসবা লিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ ভবনে ৩/এ, ৩/বি এবং ৫/বি নম্বরের তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক এসপি শামীমা ইয়াসমিন। এগুলোর মূল্য অন্তত ৭ কোটি টাকা। একই এলাকায় ‘আরবান সেন্টার পয়েন্টে’ আড়াই কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট (৯/ডি) কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘরের পাশে ৫২ বিঘা জমি তিনি নিজের নামে এবং বেনামে কিনেছেন বলে খবর মিলেছে। ওই জায়গার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।

সরেজমিন কসবা লিলি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ভবনটির নিরাপত্তারক্ষী মো. নিশাদের সঙ্গে কথা হয়। নিশাদ জানান, এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে শামীমা ইয়াসমিন নামে সিআইডির একজন কর্মকর্তার তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেগুলো খালি অবস্থায় আছে। মাঝে মধ্যে শামীমা ইয়াসমিন এখানে এসে ফ্ল্যাটগুলো তদারক করেন। আরবান সেন্টার পয়েন্টের আবাসিক ভবনের নিরাপত্তারক্ষী হীরা জানান, এই ভবনে এসপি শামীমা ইয়াসমিনের একটি ফ্ল্যাট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি এখানে আসেন না। ফ্ল্যাটটি খালি অবস্থায় রয়েছে। এসব সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীমা ইয়াসমিন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ‘আমার নামে এসব সম্পদ আছে আমি নিজেই জানি না। আপনারা যেহেতু জেনেছেন লিখে দেন।’

এর বাইরে শামীমা ইয়াসমিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, গুলশানে শামীমার ১০ কাঠার প্লট রয়েছে, যা তিনি নিজেই বিভিন্ন আড্ডায় দম্ভ করে বলে থাকেন। গুলশানের ১০ কাঠার প্লটের দাম অর্ধশত কোটি টাকার বেশি। তা ছাড়া ওই এলাকায় তার দুটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। এসব সম্পত্তি তিনি গড়েছেন বিভিন্ন স্বজনের নামে। তবে গুলশানের এসব সম্পত্তির তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ

ঢাকায় আট ফ্ল্যাটের মালিক সিআইডির এসপি শামীমা

আপডেট সময় ০৪:৫৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন। নিয়মিত পদোন্নতিতে ওই ব্যাচের প্রায় সবাই এখন অতিরিক্ত ডিআইজি বা ডিআইজি পদে রয়েছেন। তবে শামীমা ইয়াসমিন রয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) পদেই। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কেমিক্যাল ল্যাবের বিশেষ সুপার তিনি। অনেক বছর এই পদে থাকলেও বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে শুরু করে অভিজাত গুলশান পর্যন্ত অন্তত ১০টি ফ্ল্যাট কিনেছেন নামে-বেনামে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘর এলাকায় ৫২ বিঘা জমি আর গুলশানে কিনেছেন প্লট। রয়েছে একাধিক গাড়ি। আমাদের মাতৃভূমির অনুসন্ধান আর সংশ্লিষ্ট সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।

সিদ্ধেশ্বরীর কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে শামীমা যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, সেখানে পুলিশের প্রভাব দেখিয়ে অন্যের ফ্ল্যাটের জায়গা, পার্কিং স্পেস আর অ্যাপার্টমেন্টের কমন স্পেস দখলে নিয়েছেন। রাজউকের নকশা অমান্য করে চালাচ্ছেন সংস্কারকাজ। এসপি পরিচয়ে গত সাত বছরে সেখানে দেননি কোনো সার্ভিস চার্জ। এতে বকেয়া পড়েছে ১৭ লাখ টাকা। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন তার হাতে। ফ্ল্যাট মালিক সমিতি প্রতিবাদ করলে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন তিনি। উপায় না পেয়ে তার বিরুদ্ধে সিআইডির প্রধান, রাজউক ও রমনা থানায় অভিযোগ দিয়েছে ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্ট মালিক সমিতি।

পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সূত্র ধরে ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে জানা যায়, শামীমা ইয়াসমিন অভিজাত ১০তলা ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ২৭টি ফ্ল্যাটের মধ্যে চারটির মালিক। সেখানে ১/এ, ১/বি, ৫/এ ও ৫/বি ফ্ল্যাট ২০১৭ সালের জুন মাসে কেনেন তিনি। ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপ। এসব ফ্ল্যাটের মধ্যে ১/এ এবং ১/বি নম্বর ফ্ল্যাট এক করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। দুটি ফ্ল্যাটের মোট আয়তন ৩ হাজার ৭৪ বর্গফুট। পঞ্চম তলায় অবস্থিত অন্য দুটি ফ্ল্যাটের একটির আয়তন ১৫০৪ বর্গফুট; অন্যটির আয়তন ১৫৭০ বর্গফুট। অ্যাপার্টমেন্টে চারটি পার্কিং স্পেসের মালিকানাও শামীমার। পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে গেস্ট পার্কিং স্পেসও দখলে নিয়েছেন তিনি।

তবে শামীমা ইয়াসমিন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেছেন, ওই ভবন তিনি চেনেন না, সেখানে কোনোদিন যাননি। তার নামে সেখানে কোনো ফ্ল্যাটও নেই।

নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ওই অ্যাপার্টমেন্টে নিজের নামের পাশাপাশি মেজবাহ উদ্দিন আহমদ, সাবিনা ইয়াসমিন ও আরও দুই স্বজনের নামে শামীমা এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেজবাহ উদ্দিন পুলিশ সুপার শামীমার ভাই এবং সাবিনা ইয়াসমিন তার আপন বোন। তাদের আয় দিয়ে অভিজাত ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়।

তবে শামীমা আমাদের মাতৃভূমির কাছে দাবি করেছেন, মেজবাহ উদ্দিন আহমদ বা সাবিনা ইয়াসমিন নামে তিনি কাউকে চেনেন না।

এ বিষয়ে আমাদের মাতৃভূমির পক্ষ থেকে মেজবাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘সিআইডির এসপি শামীমা ইয়াসমিন আমার আত্মীয়। কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ভবনের ফ্ল্যাট উনারই।’ তাহলে শামীমা তাকে চেনেন না বলে দাবি করলেন কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজবাহ বলেন, ‘উনি (শামীমা) কী কারণে অস্বীকার করছেন সে বিষয়টি আসলে আমি বলতে পারব না।’

পুলিশ কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন কনকর্ড অ্যাপার্টমেন্ট চেনেন না বলে দাবি করলেও ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী থেকে ফ্ল্যাট মালিক সবাই নিশ্চিত করেছেন, শামীমা এই অ্যাপার্টমেন্টেই থাকেন। সরেজমিন ভবনের পার্কিং স্পেসে শামীমার ব্যবহার করা দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-২২৭৭ এবং ঢাকা মেট্রো-গ ২৩-১০৪৬) দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি গাড়ির সামনে ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার লাগানো এবং অন্য গাড়িটি কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখা গেছে। তবে শামীমার দাবি, তার নিজের নামে কোনো গাড়ি নেই।

ওই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাটের মালিক নিশ্চিত করেছেন, উল্লিখিত ফ্ল্যাটগুলোর মালিক সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমিন। তিনি ফ্ল্যাটগুলো রেজিস্ট্রেশন করে না নিলেও তার দখলে রয়েছে। তার অনিয়ম আর হুমকিতে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের অন্য বাসিন্দাদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে সরেজমিন দেখা গেছে, এসপি শামীমার মালিকানাধীন দ্বিতীয় তলায় ১/বি ফ্ল্যাট নকশাবহির্ভূতভাবে সম্প্রসারণের জন্য ফ্ল্যাট ১/এ এবং ১/সি-এর মাঝের দেয়াল অপসারণ করা হয়েছে এবং নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ১/এ এবং ১/বি নম্বর ফ্ল্যাটের দেয়াল ভেঙে এবং দ্বিতীয় তলার লিফটের সামনে কমন স্পেস দখল করে আরসিসি ঢালাই করে নিজের ফ্ল্যাট বর্ধিত করেছেন শামীমা। কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এর আগে পাঁচ বছর ধরে পুলিশের এই কর্মকর্তা এ জায়গা (কমন স্পেস) গায়ের জোরে দখল করে রেখেছিলেন। এ ছাড়া ভবনের দুই পাশের (উত্তর এবং দক্ষিণ) ভয়েডের একাংশে ঢালাই দিয়ে বন্ধ করেছেন এবং অন্য অংশ বন্ধ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনে জরুরি সিঁড়ির পাশে আলাদা কক্ষ তৈরির কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এসব অনিয়ম থামাতে কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও বিষয়টি আমলে নেননি শামীমা। পরে রাজউকের পক্ষ থেকেও এসব অবৈধ নির্মাণকাজ বন্ধ করার নোটিশ দেওয়া হয় তাকে। তবু নিজের ক্ষমতাবলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. মোশারফ হোসেন শিকদার আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, শামীমা ইয়াসমিন ২০১৭ সালের জুন মাসে ‘কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া’ প্রকল্পের সিদ্ধেশ্বরী অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ১/এ, ১/বি, ৫/এ ও ৫/বি ফ্ল্যাট নিজের এবং অন্য কয়েকজনের নামে কিনেছেন। ওই বছরই ফ্ল্যাটগুলো তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু চিঠির মাধ্যমে এবং মৌখিকভাবে বারবার বলা হলেও তিনি এসব ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন নেননি।

মো. মোশারফ হোসেন শিকদার আরও বলেন, ‘তিনি (শামীমা) রাজউকের অনুমোদিত নকশা না মেনে ভবন ভেঙে জায়গা দখল করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাকে এসব বিষয়ে সমাধান করে বারবার রেজিস্ট্রেশন নিতে বলা হলেও তিনি নিচ্ছেন না।’

কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া কমপ্লেক্সের অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকরা জানান, ২০১৭ সালের জুনে শামীমা ফ্ল্যাট কেনার পর থেকেই নানাভাবে অনিয়ম করে আসছেন। শুরু থেকেই তিনি তার কয়েকজন নিজস্ব নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে রাজউক অনুমোদিত নকশাবহির্ভূতভাবে দেয়াল ভাঙা এবং নির্মাণ শুরু করেন। এসব নির্মাণসামগ্রী ভবনের যেখানে-সেখানে ফেলার কারণে বসবাস করাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা নির্মাণ শ্রমিকদের কয়েকদিন ঢুকতে না দেওয়ায় শামীমা পুলিশ ডেকে এনে সবাইকে হুমকি দিয়েছেন এবং কয়েকজন ফ্ল্যাট মালিকের গায়েও হাত তুলেছেন।

কনকর্ড ম্যাগনোলিয়া ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ২০১৭ সালের জুনে শামীমা চারটি ফ্ল্যাটের মালিক হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সার্ভিস চার্জ দেননি। তার কাছে ১৭ লাখ টাকা সার্ভিস চার্জ বাকি পড়েছে। বিভিন্ন সময় সমিতির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে অনুরোধ করলেও তিনি কোনো বিল পরিশোধ করবেন না জানিয়ে দেন এবং বাজে ব্যবহার করেন।

মো. মিজানুর রহমান জানান, ভবনের ডিজাবেল পার্ক, কমন স্পেস, সিঁড়িঘর, ভয়েড, মিনি স্টোররুমসহ বিভিন্ন জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের এ কর্মকর্তা দখল করে রেখেছেন। তার কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে কীভাবে মামলা দিয়ে শায়েস্তা করতে হয়, সেটাও শামীমা দেখবেন বলে হুমকি দেন।

মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, শামীমার অবৈধ নির্মাণকাজের বিরুদ্ধে কথা বললেই তিনি পুলিশের হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর রমনা থানা, রাজউক এবং সিআইডি প্রধানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি পুলিশের কর্মকর্তা হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় শামীমা তার গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। সে ঘটনায় তিনি রমনা থানায় জিডিও করেছিলেন। মনিরুজ্জামান আরও বলেন, নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনের ভেতরে দেয়াল ভাঙা এবং অবৈধভাবে বর্ধিতকরণ ও নির্মাণের কারণে ভবনটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

পুলিশ অভিযোগ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি বলে মনিরুজ্জামান দাবি করলেও সিআইডির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আমাদের মাতৃভূমিকে বলেছেন, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ফ্ল্যাট মালিকদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। কয়েকজনের সাক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, বিসিএস ক্যাডারের পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা সব মিলিয়ে মাসে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো বেতন-ভাতা পান। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেও এসপি শামীমার এত সম্পদের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়া এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া সম্ভব নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ম্যাগনোলিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ফ্ল্যাটের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসপি শামীমার মালিকানাধীন ম্যাগনোলিয়া অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের চারটি ফ্ল্যাটের দাম অন্তত ৮ কোটি টাকা।

অন্যান্য সম্পদ

সূত্র বলছে, রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে শান্তিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ‘কসবা লিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ ভবনে ৩/এ, ৩/বি এবং ৫/বি নম্বরের তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক এসপি শামীমা ইয়াসমিন। এগুলোর মূল্য অন্তত ৭ কোটি টাকা। একই এলাকায় ‘আরবান সেন্টার পয়েন্টে’ আড়াই কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট (৯/ডি) কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ জাদুঘরের পাশে ৫২ বিঘা জমি তিনি নিজের নামে এবং বেনামে কিনেছেন বলে খবর মিলেছে। ওই জায়গার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।

সরেজমিন কসবা লিলি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ভবনটির নিরাপত্তারক্ষী মো. নিশাদের সঙ্গে কথা হয়। নিশাদ জানান, এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে শামীমা ইয়াসমিন নামে সিআইডির একজন কর্মকর্তার তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেগুলো খালি অবস্থায় আছে। মাঝে মধ্যে শামীমা ইয়াসমিন এখানে এসে ফ্ল্যাটগুলো তদারক করেন। আরবান সেন্টার পয়েন্টের আবাসিক ভবনের নিরাপত্তারক্ষী হীরা জানান, এই ভবনে এসপি শামীমা ইয়াসমিনের একটি ফ্ল্যাট থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি এখানে আসেন না। ফ্ল্যাটটি খালি অবস্থায় রয়েছে। এসব সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীমা ইয়াসমিন আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ‘আমার নামে এসব সম্পদ আছে আমি নিজেই জানি না। আপনারা যেহেতু জেনেছেন লিখে দেন।’

এর বাইরে শামীমা ইয়াসমিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, গুলশানে শামীমার ১০ কাঠার প্লট রয়েছে, যা তিনি নিজেই বিভিন্ন আড্ডায় দম্ভ করে বলে থাকেন। গুলশানের ১০ কাঠার প্লটের দাম অর্ধশত কোটি টাকার বেশি। তা ছাড়া ওই এলাকায় তার দুটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। এসব সম্পত্তি তিনি গড়েছেন বিভিন্ন স্বজনের নামে। তবে গুলশানের এসব সম্পত্তির তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।