ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপায় আছে?

প্রশ্ন: আমার বাবা মারা গেছেন তিন বছর আগে। আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি আমার বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি নি। না বুঝে আমি বাবাকে কষ্ট দিয়েছি। বাবার কাছে ক্ষমা না চাইতে পেরে অত্যন্ত আফসোস হয়। বাবাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য যে গুনাহ হয়েছে সে গুনাহ ক্ষমা হবে?

উত্তর: মৃত্যুর পরেও বাবা-মা’র সঙ্গে সদাচারণ করা যায়। সুতরাং আপনি আপনার বাবাকে যে কষ্ট দিয়েছেন, যদি এর কারণে আপনি বাস্তবেই লজ্জিত হন এবং এ গুনাহর প্রায়শ্চিত্ত করতে চান তাহলে আপনার উচিত এখন থেকে আপনার বাবার সঙ্গে সদাচারণ করা।

হাদিস শরিফে এসেছে, আবু উসাইদ (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল সা.! বাবা-মা’র মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি?

তিনি বললেন, হ্যাঁ। চারটি উপায় আছে–

১. তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা, ২. তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা, ৩. তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা এবং ৪. তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় এবং সুন্দর আচরণ করা। (আল আদাবুল মুফরাদ ৩৫)

দুই- আর আপনি যদি আপনার বাবার মৃত্যুর পর তার উপকার করতে চান তাহলে উপরোক্ত আমলগুলোর পাশাপাশি নিম্নোক্ত আমলগুলো করতে পারেন–

১। তার জন্য দান-সদকা করা।

হাদিস শরিফে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছে। যদি আমি তার পক্ষে সদকা (দান) করি তাহলে এতে তার কোন উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার একটি ফসলের ক্ষেত তার পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিলাম। (নাসায়ী ৩৫৯৫)

২। তার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় করে এর সওয়াব তাঁকে উৎসর্গ করা। (বুখারি ১৮৫২)

৩। তার পক্ষ থেকে কুরবানি করা। (মুসলিম ৫২০৩)

৪। তার ঋণ পরিশোধ করা। যেমনিভাবে জাবের রাযি. রাসূলুল্লাহ্‌ সা. -এর নির্দেশে তার পিতা আব্দুল্লাহ বিন হারাম এর ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। (বুখারী ২৭৮১)

৫। তার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। ( মুসলিম ২৩৯৮)

৬। তিনি কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না। (মুসলিম ৬৯৮০)

তিন- আপনার বাবার ছুটে যাওয়া নামায-রোজার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পরিবর্তে এবং প্রতি দিনের রোজার পরিবর্তে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম সদকা করবেন।

ইকরিমা (রহ.) বলেন, আমার মা প্রচণ্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তার সম্পর্কে আমি তাউস রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকীনকে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম প্রদান করবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭৫৮১)

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, আপনার বাবার সঙ্গে কৃত বেয়াদবি ক্ষমা করে দেন এবং আপনার বাবাকেও মাগফিরাত দান করেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃত বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপায় আছে?

আপডেট সময় ০৬:০১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

প্রশ্ন: আমার বাবা মারা গেছেন তিন বছর আগে। আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি আমার বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি নি। না বুঝে আমি বাবাকে কষ্ট দিয়েছি। বাবার কাছে ক্ষমা না চাইতে পেরে অত্যন্ত আফসোস হয়। বাবাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য যে গুনাহ হয়েছে সে গুনাহ ক্ষমা হবে?

উত্তর: মৃত্যুর পরেও বাবা-মা’র সঙ্গে সদাচারণ করা যায়। সুতরাং আপনি আপনার বাবাকে যে কষ্ট দিয়েছেন, যদি এর কারণে আপনি বাস্তবেই লজ্জিত হন এবং এ গুনাহর প্রায়শ্চিত্ত করতে চান তাহলে আপনার উচিত এখন থেকে আপনার বাবার সঙ্গে সদাচারণ করা।

হাদিস শরিফে এসেছে, আবু উসাইদ (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল সা.! বাবা-মা’র মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি?

তিনি বললেন, হ্যাঁ। চারটি উপায় আছে–

১. তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা, ২. তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা, ৩. তাদের বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা এবং ৪. তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় এবং সুন্দর আচরণ করা। (আল আদাবুল মুফরাদ ৩৫)

দুই- আর আপনি যদি আপনার বাবার মৃত্যুর পর তার উপকার করতে চান তাহলে উপরোক্ত আমলগুলোর পাশাপাশি নিম্নোক্ত আমলগুলো করতে পারেন–

১। তার জন্য দান-সদকা করা।

হাদিস শরিফে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছে। যদি আমি তার পক্ষে সদকা (দান) করি তাহলে এতে তার কোন উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার একটি ফসলের ক্ষেত তার পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিলাম। (নাসায়ী ৩৫৯৫)

২। তার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় করে এর সওয়াব তাঁকে উৎসর্গ করা। (বুখারি ১৮৫২)

৩। তার পক্ষ থেকে কুরবানি করা। (মুসলিম ৫২০৩)

৪। তার ঋণ পরিশোধ করা। যেমনিভাবে জাবের রাযি. রাসূলুল্লাহ্‌ সা. -এর নির্দেশে তার পিতা আব্দুল্লাহ বিন হারাম এর ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। (বুখারী ২৭৮১)

৫। তার ভাল কাজসমূহ জারী রাখা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। ( মুসলিম ২৩৯৮)

৬। তিনি কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সা. বলেছেন, এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না। (মুসলিম ৬৯৮০)

তিন- আপনার বাবার ছুটে যাওয়া নামায-রোজার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পরিবর্তে এবং প্রতি দিনের রোজার পরিবর্তে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম সদকা করবেন।

ইকরিমা (রহ.) বলেন, আমার মা প্রচণ্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তার সম্পর্কে আমি তাউস রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকীনকে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম প্রদান করবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭৫৮১)

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, আপনার বাবার সঙ্গে কৃত বেয়াদবি ক্ষমা করে দেন এবং আপনার বাবাকেও মাগফিরাত দান করেন।